• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ২১ মে, ২০২৪, ৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১,

দাবি না মানলে কঠোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি শিক্ষকদের


বিজন কুমার
প্রকাশিত: জুলাই ১৬, ২০২৩, ০৭:২৬ পিএম
দাবি না মানলে কঠোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি শিক্ষকদের

মাধ্যমিক শিক্ষা জাতীয়করণের দাবিতে ষষ্ঠ দিনের মতো অবস্থান কর্মসূচি পালন করছে বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি (বিটিএ)। দাবি না মানলে কঠোর অবস্থানে যাওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন সমিতির নেতারা।

রোববার (১৬ জুলাই) জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে গিয়ে দেখা, দেশের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা শাখা সমিতির সদস্যরা অবস্থান কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছেন। এসময় প্রেস ক্লাব সম্মুখ সড়কে তাদের বসে এবং শুয়ে অবস্থান নেওয়ার চিত্র দেখা যায়। গত ১১ জুলাই থেকে দাবি আদায়ের লক্ষ্যে তারা এই কর্মসূচির সূচনা করেন।

ষষ্ঠ দিনে অংশ নেওয়া জেলা ও উপজেলা শাখা সমিতির সদস্যরা যদিও বলছেন দাবির বিষয়ে সরকার মহলে আলোচনা চলছে। তবে কেন্দ্রীয় সমিতির সংশ্লিষ্টরা বলছেন ভিন্ন কথা। তাদের মতে, সরকার মহলে এই বিষয়ে এখন পর্যন্ত কোনো প্রকার আশ্বাস আসেনি। ফলে আলোচনার একপর্যায়ে তারা কঠোর অবস্থানে যাওয়ার কথাও জানান।

কর্মসূচিতে নোয়াখালি সোনাইমুড়ি উপজেলা শাখা থেকে আসা মোহাম্মদ জাফর উদ্দিন নামে এক শিক্ষককে ব্যানার হাতে দেখা যায়। যেখানে তিনি বৈষম্যতার বিষয় তুলে ধরেন।

কয়েকজন শিক্ষকের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, একজন সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকের প্রারম্ভিক বেতন স্কেল ১৬ হাজার টাকা। সেই স্থলে এমপিওভুক্ত শিক্ষকের বেতন স্কেল ১২ হাজার ৫০০ টাকা। একইভাবে সরকারি চিকিৎসার ভাতা ১ হাজার ৫০০ এবং বেসরকারি ৫০০ টাকা, সরকারি বাড়ি ভাড়া ভাতা মূল বেতনের ৪৫ থেকে ৫০ শতাংশ এবং বেসরকারি ১ হাজার, সরকারি উৎসব ভাতা মূল বেতনের ১০০ শতাংশ এবং বেসরকারি মূল বেতনের ২৫ শতাংশ, সরকারি অবসর এককালীন ভাতা মূল বেতনের ৯০ শতাংশের ৩০০ গুণ এবং বেসরকারি মূল বেতনের ৭৫ গুণ, সরকারি অবসরকালীন মাসিক ভাতা মূল বেতনের ৯০ শতাংশ সঙ্গে চিকিৎসা ভাতা এবং বেসরকারিতে এই সুবিধা নেই।

এছাড়া অবসর সুবিধার জন্য একজন সরকারি বেতনভুক্ত শিক্ষককে চাঁদা প্রদান করতে হয় না। যা একজন এমপিওভুক্ত বিদ্যালয়ের শিক্ষককে মূল বেতনের ৬ শতাংশ প্রদান করতে হয়। সরকারি বেতনভুক্ত শিক্ষক সুবিধাজনক জায়গায় বদলির সুবিধার সুযোগ পায়, বেসরকারি শিক্ষকদের বদলির সুবিধা নেই। অপরদিকে সরকারি বেতনভুক্ত প্রধান শিক্ষক ও সহকারী প্রধান শিক্ষক টাইমস্কেল পেয়ে থাকেন ২টি। যার সুবিধা এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা পান না।

কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া জহুরা ইয়াসমিন নামে এক শিক্ষিকা এসেছেন মাদারিপুর থেকে। তিনি জেলাটির রাজৈর উপজেলার হরিদাসদী-মহেন্দ্রদী উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষকতা করেন। তিনি বলেন, “শিক্ষাই জাতির মেরুদণ্ড। সেই শিক্ষা প্রদানে কাজে একজন শিক্ষক, জাতির বিবেক আজ রাস্তায় গড়াগড়ি খাচ্ছে। এটা আসলেই মেনে নেওয়া সম্ভব নয়। আমরা একই সিলেবাসে সরকারি এবং বেসরকারি শিক্ষকগণ পাঠদান করিয়ে আসছি। আমাদের শিক্ষার্থীরাও দেশ গঠনে ভূমিকা রাখছে। কিন্তু আমরা বৈষম্যতার শিকার। আমরা তো আমাদের সঠিক দায়িত্ব পালন করি। তবে আমরা কেন বৈষম্যতার শিকার। আমাদের এক দফা, এক দাবি। মাধ্যমিক শিক্ষা জাতীয়করণ না হওয়া পর্যন্ত আমরা এখান থেকে যাব না।”

কাওসার হোসেন নামে এক শিক্ষক বলেন, “আমরা যে বেতন পাই। এতে আমাদের সংসার ঠিকমতো চলে না। আমরা অত্যন্ত অবহেলিত। আমরা আমাদের দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত এই স্থান ত্যাগ করব না। সারা দেশে এই দাবি আদায়ের লক্ষ্যে শিক্ষকরা অংশ নিয়েছেন। বর্তমানে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে তালা ঝুলছে। এই দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমরা ফিরব না। আমি শুনেছি এ নিয়ে ওপরে আলোচনা চলছে।”

বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক শেখ কাওছার আহমেদ বলেন, “গত ১১ জুলাই থেকে আমরা জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছি। এতে অসুস্থ হওয়ার খবরও পাওয়া যায়। আমাদের বিশ্বাস সরকার যদি আমাদের সঙ্গে ৫ মিনিট আলোচনা করে, তবেই একটা সমাধান আসবে। আমরা সেখান থেকে এখনো কোনো প্রকার সাড়া পাইনি। আমাদের বিশ্বাস আমাদের সঙ্গে আলোচনা করে এই সমস্যার সমাধান হবে।”

তিনি আরও বলেন, “আমরা বর্তমানে যে বেতন পাচ্ছি, এতে আমাদের সংসার চলে না। আর আমরা যদি সংসার চালাতে না পারি তবে, আমরা শিক্ষার্থীদের পড়াব কীভাবে। শিক্ষার্থীরা পড়তে না পারলে ক্ষতি হবে। বর্তমানে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে তালা ঝুলছে। যদি আমাদের দাবি মেনে না নেওয়া হয়, তবে তালা ঝুলবে। এরপর হয়ত আরও কঠোর কর্মসূচি আসবে। যেমন, আমরণ অনশনে যেতে পারি আমরা।” 

Link copied!