নিজের প্রচেষ্টা থাকলে সব কিছু করা সম্ভব, এমনটাই প্রমাণ করলেন ভোলার দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী মামুন। জন্ম থেকেই দুচোখের আলো থেকে বঞ্চিত এ মানুষটি জীবনের দুঃখ-কষ্ট পেছনে ফেলে আনন্দ খুঁজে নিয়েছেন কাজের মধ্যে। দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী হয়েও কারো কাছে হাত না পেতে গত ১০ বছর ধরে চা বিক্রি করে সংসার চালাচ্ছেন। নদী ভাঙনে সব হারিয়ে অন্যের জমিতে অস্থায়ী টংদোকানই এখন তার একমাত্র ভরসা। শত প্রতিবন্ধকতায়ও থেমে নেই তার জীবন।
ডান চোখে কিছুই দেখতে পান না, বা চোখে দেখেন ঝাপসা। জন্ম থেকে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী। নদী ভাঙনে সব হারিয়ে নিজের জায়গাজমি বলতে কিছুই নেই। অন্যের ঘরে স্ত্রী ও দুই মেয়ে নিয়ে কোনোমতে দিন কাটে তার। এমন অবস্থায় সংসার চালাতে হিমশিম খেলেও ভিক্ষাবৃত্তি পেশা বেছে নেননি ভোলা শহরের ৮নং ওয়ার্ডের পৌর কাঠালী গ্রামের মো. সেলিমের ছেলে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী আবু সাইদ মামুন। চা বিক্রি করে চার সদস্যের সংসার চালাচ্ছেন। অন্যের কাছে হাত না পেতে কর্ম করে জীবিকা নির্বাহ করার মধ্যে যে অন্যরকম সুখ আছে, তার অনন্য দৃষ্টান্ত এই মামুন।
জেলা সদরের যুগীরঘোল এলাকার জৈনপুরী পীর সাহেবের খানকা সড়কের পাশে অন্যের জমিতে অস্থায়ী চায়ের দোকান দিয়েছেন মামুন। ছোট্ট দোকানটিতে চা, পান, সিগারেট, পাউরুটি, কলা, বিস্কুটের পসরা সাজিয়ে তা বিক্রি করছেন তিনি। দিনভর বিক্রি করে সেই উপার্জনের টাকায় চলে তার ছোট্ট সংসার। জন্ম থেকেই দুচোখের আলো থেকে বঞ্চিত মামুন তার ভেতরের জমে থাকা সব কষ্ট পেছনে ফেলে জীবনের আনন্দ খুঁজে নিয়েছেন কাজের মধ্যে। পাশাপাশি পৃথিবীতে কোনো কাজই যে ছোট নয় তা প্রমাণ করেছেন তিনি।
আবু সাইদ মামুন জানান, বাবার মৃত্যুর পর সংসারে অভাব অনটনে অন্যের কাছ থেকে ৫ হাজার টাকা ধার করে ১০ বছর আগে চায়ের দোকান দেন মামুন। নিজের জমি না থাকায় কখনো পরিত্যাক্ত জমিতে আবার কখনো সড়কের পাশে ছাপড়া ঘর করে চায়ের দোকান করেন। চা বিক্রি করে প্রতিদিন ৫০০-৬০০ টাকা আয় হয়। এর থেকে খরচ বাদ দিয়ে লাভের অংশ দিয়েই চলছে তার সংসার। দুচোখের অন্ধকারে আলো খোঁজেন কর্মের মাধ্যমে।
দৃষ্টি প্রতিবন্ধী মামুনের স্ত্রী শাহীনা বেগম জানান, স্বামীর রোজগারে কোনমতে সংসার চললেও নিজের বাড়ি করার স্বপ্নপূরণ হয়নি। দুই মেয়ে নিয়ে থাকেন অন্যের বাড়িতে। তাই সরকারি সহযোগিতা পেলে তাদের কষ্ট কিছুটা লাঘব হবে বলে মনে করেন তিনি।
সরেজমিন কথা হয় স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে। তারা জানান, ভিক্ষা না করে কাজ করায় এলাকায় সকলের কাছে প্রশংসিত দৃষ্টি প্রতিবন্ধী চা বিক্রেতা মামুন। সমাজের বিত্তশালী মানুষ ও সরকারের সহযোগিতা পেলে আরও ভালোভাবে জীবন কাটাতে পারবে।
স্থানীয় ব্যবসায়ী মো. হানিফ বলেন, “মামুন অন্ধ হয়েও চা বিক্রি করে তার সংসার চালিয়ে যাচ্ছেন। আমাদের নবী ভিক্ষা করতে নিষেধ করেছেন। তিনি কাজ করে খেতে বলছেন। তাই, মামুন ভিক্ষা না করে কাজ করে খাচ্ছেন।”
ভোলা সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. তৌহিদুল ইসলাম বলেন, “মুজিববর্ষ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভূমিহীন গৃহহীন মানুষদের ঘর দিচ্ছেন। দৃষ্টি প্রতিবন্ধী মামুনের সঙ্গে কথা বলেছি।”
যেহেতু তার কোনো জমি ও ঘর নেই, সেহেতু আশ্রয়ণ প্রকল্পের আওতায় তার জন্য এক টুকরো জমি ও ঘরের ব্যবস্থা করার আশ্বাস দেন তিনি।
শত প্রতিবন্ধকতাকে পেছনে ফেলে কর্মজীবনে ছুটে চলা দৃষ্টি প্রতিবন্ধী মামুন সরকারের সহযোগিতা পেয়ে আর দশটা স্বাভাবিক মানুষের মতো জীবন যাপন করবে এমনটাই প্রত্যাশা সকলের।