ভালোবেসে বিয়ে করে বাড়ি ছেড়ে ছিল দুই কিশোর-কিশোরী। তারা দুজনই এবার এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছে। সম্পর্কে তারা চাচাতো ভাই-বোন।
এরপর ছেলেমেয়ে দুজনকে উদ্ধার করে থানায় আনে পুলিশ। তাদের বসিয়ে রাখা হয়েছিল নারী-শিশু হেল্প ডেস্কের পৃথক দুটি কক্ষে। বাইরে চলছিল দুই পক্ষের মধ্যে সমঝোতার আলোচনা। এরই মধ্যে কক্ষের জানালার পর্দা দিয়ে বৈদ্যুতিক পাখার (ফ্যান) সঙ্গে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করে ওই কিশোর। বিষয়টি টের পেয়ে পুলিশ দরজার ছিটিকিনি ভেঙে তাকে উদ্ধার করে।
পঞ্চগড় সদর থানায় রোববার বিকেলে এ ঘটনা ঘটে। ওই কিশোর পুলিশি পাহারায় পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
আত্মহত্যার চেষ্টা করা ওই কিশোর (১৭) পঞ্চগড় পৌরসভার একটি মহল্লার বাসিন্দা। আর ওই কিশোরী (১৭) পঞ্চগড় সদর উপজেলার একটি গ্রামের বাসিন্দা। তারা পৃথক দুটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে এবার এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে। তারা দুজন সম্পর্কে চাচাতো ভাইবোন (দুজনের বাবা মামাতো-ফুফাতো ভাই)।
পুলিশ ও কিশোর-কিশোরীর স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, নিকটাত্মীয় সমবয়সী ওই কিশোর-কিশোরী প্রেমের সম্পর্ক ছিল। গত বুধবার দুজনেই বাড়ি থেকে চলে যায়। এরই মধ্যে ওই কিশোরীর বাবা পঞ্চগড় সদর থানায় মেয়ে নিখোঁজের বিষয়ে একটি জিডি করেন। বৃহস্পতিবার মেয়েটিকে নিয়ে ওই কিশোর তার বাড়িতে ওঠে; জানায় তারা বিয়ে করেছে। বিষয়টি নিয়ে দুই পরিবারের মধ্যে ঝামেলা চলছিল। পরে মেয়েটির বাবার অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে রোববার দুপুরে ওই কিশোরের বাড়ি থেকে তাদের দুজনকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসে পঞ্চগড় সদর থানা পুলিশ। পরে তাদের দুজন নারী-শিশু হেল্প ডেস্কের পৃথক দুটি কক্ষে বসিয়ে রাখা হয়। এ সময় কক্ষের বাইরে পাহারায় ছিলেন পুলিশ সদস্যরা। এরই মধ্যে হঠাৎ করে ওই কিশোর কক্ষের ভেতর থেকে দরজার ছিটকিনি লাগিয়ে দেয়। সন্দেহ হলে জানালা দিয়ে পুলিশ সদস্যরা দেখেন ওই কিশোর চেয়ারের ওপরে উঠে জানালার পর্দা দিয়ে বৈদ্যুতিক ফ্যানের সঙ্গে গলায় ফাঁসি দিচ্ছে। এ সময় তাদের চিৎকারে অন্যান্য পুলিশ সদস্যসহ ওই কিশোরের স্বজনেরা ছুটে এসে দরজার ছিটকিনি ভেঙে তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যান।
ওই কিশোরের বাবা অটোরিকশাচালক। তিনি বলেন, ‘মেয়েটির বাবা আমার মামাতো ভাই। ছেলে-মেয়ে কীভাবে কী করেছে আমি জানি না। বৃহস্পতিবার তারা দুজন আমার বাড়িতে আসে। পরে আমি মেয়ের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করি। মেয়ের পরিবার আমাদের পরিবারের চেয়ে অর্থনৈতিকভাবে সচ্ছল। এ জন্য হয়েতো তারা প্রথমে মেনে নিতে চাইছিল না। আজ (রোববার) দুপুরে ছেলে-মেয়ে দুজনকেই পুলিশ থানায় নিয়ে এসেছে। বিষয়টি নিয়ে থানায় আমাদের দুই পরিবারের সমঝোতার আলোচনা চলছিল। এরই মধ্যে ছেলেটা এমন ঘটনা ঘটাল।’
পঞ্চগড় সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুল্লাহ হিল জামান বলেন, অপ্রাপ্তবয়স্ক হওয়ায় দুজনকেই নারী-শিশু হেল্প ডেস্কের পৃথক দুটি কক্ষে বসিয়ে রাখা হয়েছিল। সেখানে পুলিশ পাহারা দিচ্ছিল। হঠাৎ করেই ছেলেটি ভেতর থেকে ছিটকিনি আটকিয়ে জানালার পর্দা দিয়ে ফ্যানের সঙ্গে গলায় ফাঁস লাগানো শুরু করে। বিষয়টি দেখতে পেয়ে ওই কিশোরের স্বজনদের উপস্থিতিতে তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়া হয়। দুজনের পরিবার তাদের জিম্মায় নিতে চেয়েছে। কারও কোনো অভিযোগ না থাকায় তাদের দুজনকে স্বজনদের কাছে হস্তান্তরের প্রক্রিয়া চলছে।