• ঢাকা
  • শুক্রবার, ০৩ মে, ২০২৪, ২০ বৈশাখ ১৪৩১, ২৩ শাওয়াল ১৪৪৫

ছয় বছর ধরে শিকলবন্দী মিলন, টাকার অভাবে হচ্ছে না চিকিৎসা


ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ২৭, ২০২৪, ০৩:২২ পিএম
ছয় বছর ধরে শিকলবন্দী মিলন, টাকার অভাবে হচ্ছে না চিকিৎসা

ছয় বছর ধরে শিকলবন্দী জীবন যাপন করছেন ঠাকুরগাঁওয়ের মিলন হক। পায়ে শিকল আর ছোট ছাউনির ভেতরে পুরো দুনিয়ার স্বাদ পেতে হয় তাকে। কথা ছিল পড়াশোনা শেষে চাকরি করে সংসারের হাল ধরবেন। ভাগ্যের কী নির্মম পরিহাস প্রাথমিক বিদ্যালয়ের গন্ডি পেরোতে পারেননি তিনি। জীবনের ৩০টি বছর পার হয়েও জীবনের কোনো মানে খুঁজে পাননি মিলন।

অপরিচিত জনের সঙ্গে আচরণ স্বাভাবিক হলেও নিজের পরিবারের লোকদের সঙ্গে অস্বাভাবিক আচরণ করেন তিনি। অনেক সময় নানাভাবে বিড়ম্বনায় ফেলে স্থানীয়দের। আর্থিক সমস্যার কারণে হচ্ছে না উন্নত চিকিৎসা।

ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার রুহিয়া ইউনিয়নের পূর্ব কুজিশহরে মফিজ উদ্দীন ও শাহেদা বেগম দম্পত্তির সন্তান মিলন হক। নয় বছর বয়সে গলায় টিউমার ধরা পড়ে মিলনের। চিকিৎসা নেওয়ার পরে কিছুদিন সুস্থ হলেও আবার শুরু হয় অসুস্থতা। ধীরে ধীরে বাড়তে শুরু করে এ অসুস্থতা। এখন শিকলে বেঁধে না রাখলে নানাভাবে মানুষকে হয়রানি করেন। একদিকে স্বামীর অসুস্থতা অন্যদিকে ছেলের শিকলবন্দী জীবন নিয়ে দুশ্চিন্তায় সময় পার করেন বৃদ্ধা শাহেদা বেগম। নিজে অসুস্থ থাকা সত্বেও বাধ্য হয়ে অন্যের বাড়িতে কাজ করতে হয় তাকে।

স্বামী ব্রেন স্ট্রোক করে প্যারালাইসড, ছেলে শিকলে বাঁধা। স্বামী সন্তানের মুখের খাবার জোগার করবেন না চিকিৎসা করাবেন এই দোটানার মধ্য দিয়েই চলছে শাহেদার জীবন। মানুষের বাসায় কাজ করে স্বামী-সন্তানের জন্য দুমুঠো খাবারের ব্যবস্থা করতে পারছেন তিনি। চিকিৎসা করানোর ক্ষমতা নেই তাই স্বামী সন্তানের এমন খারাপ অবস্থা দেখতে হচ্ছে তাকে। এখন সন্তানের চিকিৎসার জন্য মানুষের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন তিনি।

প্রতিবেশী আজহারুল ইসলাম বলেন, “তাদের পরিবারটা চলতে পারছে না। তার বাবা ব্রেইন স্ট্রোক করে পড়ে আছেন। ছেলেটাও শিকলে বন্দি হয়ে রয়েছে। আমরা মাঝে মধ্যে টুকটাক সহযোগীতা করি। কিন্তু মিলনের প্রয়োজন উন্নত চিকিৎসার। তা না হলে পরিবারটার বেঁচে থাকা আরও কঠিন হয়ে দাঁড়াবে।”

মিলনের মা শাহেদা বেগম বলেন, “ভিটেমাটি ছাড়া আর কিছু নেই আমাদের। মিলনের বাপ অসুস্থ হয়ে বিছানায় পড়ে আছে। সুস্থ থাকলে উনি কাজে যেত। আমি একদিন গেলে আবার অসুস্থ হয়ে যাই। এখন মিলনের চিকিৎসা না হলে আমাদের পরিবারটা কীভাবে চলবে। যা ছিল সব শেষ হয়ে গেছে। এখন আমাদের পাশে কেউ না দাঁড়ালে আমাদের অস্তিত্ব থাকবে না।”

ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বেলায়েত হোসেন বলেন, “বিষয়টি অবগত হলাম। বিষয়টি খুবই দুঃখজনক। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাদের সার্বিক সহযোগিতা করা হবে।”

স্বদেশ বিভাগের আরো খবর

Link copied!