প্রাথমিকে শিক্ষক সংকটে ব্যাহত পাঠদান

টাঙ্গাইল জেলায় প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষক পদে বিপুলসংখ্যক পদ শূন্য রয়েছে। শিক্ষক-সংকটের কারণে ব্যাহত হচ্ছে পাঠদান। যেসব বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক নেই, সেসব বিদ্যালয়ে সিনিয়র সহকারী শিক্ষকদের চলতি দায়িত্বে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক পদে পদায়ন করা হয়েছে। এতে বিপুলসংখ্যক সহকারী শিক্ষকের পদ শূন্য হয়ে পড়েছে। তা ছাড়া মামলাজনিত কারণেও ৩০টি বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক পদে নিয়োগ বন্ধ।

টাঙ্গাইল জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা যায়, টাঙ্গাইল জেলায় প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকের পদ রয়েছে ১ হাজার ৬২৩টি। এর মধ্যে ৪৫০টি পদ শূন্য রয়েছে। এর মধ্যে মির্জাপুরে ৮টি, কালিহাতীতে ৯টি ও নাগরপুরে ১৩টি বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক পদ নিয়ে আদালতে মামলা রয়েছে। জেলায় সহকারী শিক্ষকের পদ রয়েছে ৮ হাজার ৪৫৯টি। কর্মরত রয়েছেন ৭ হাজার ৬১৫জন।

জানা গেছে, জাতীয়করণের আগে বিদ্যালয় থেকে যেসব সহকারী শিক্ষক প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করেছেন, অথচ জাতীয়করণের সময় প্রধান শিক্ষক হিসেবে তাদের নাম গেজেটে অন্তর্ভুক্ত হয়নি এবং প্রধান শিক্ষক হিসেবে বেতন স্কেল প্রদান করা হয়নি, সেসব সহকারী শিক্ষক আদালতে রিট পিটিশন করায় ওই সব বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক পদে নিয়োগপ্রক্রিয়া বন্ধ রাখা হয়েছে।

ঘাটাইলে প্রধান শিক্ষক পদে ১৭২ জনের মধ্যে রয়েছেন ৮২ জন। সহকারী শিক্ষক পদে ৯১৬ জনের মধ্যে রয়েছেন ৮২৭ জন। সখীপুরে প্রধান শিক্ষক পদে ১৪৭ জনের মধ্যে কর্মরত রয়েছেন ১৩২ জন। সহকারী শিক্ষক পদে ৭০৮ জনের মধ্যে রয়েছেন ৬৫১ জন। গোপালপুরে প্রধান শিক্ষক পদে ১৬১ জন থাকার কথা থাকলেও রয়েছেন ১১২ জন। সহকারী শিক্ষক পদে ৭৫৯ জনের মধ্যে রয়েছেন ৬৪৭ জন। বাসাইলে প্রধান শিক্ষক পদে ৭৯ জনের মধ্যে রয়েছেন ৬৬ জন। সহকারী শিক্ষক পদে ৪৩৫ জনের মধ্যে রয়েছেন ৩৮৩ জন। টাঙ্গাইল সদর উপজেলায় প্রধান শিক্ষক পদে ১৬৩টি পদের মধ্যে রয়েছেন ১৩২ জন। সহকারী শিক্ষক পদে ৮৭৩টি পদের মধ্যে কর্মরত ৮৩৪ জন শিক্ষক। দেলদুয়ারে প্রধান শিক্ষক পদে ১০০ জনের মধ্যে রয়েছেন ৭২ জন। সহকারী শিক্ষক পদে ৫২৯টি পদের মধ্যে রয়েছেন ৪৭১জন।

মির্জাপুরে প্রধান শিক্ষক পদে ১৭০ জনের মধ্যে রয়েছেন ১৪৭ জন। সহকারী শিক্ষক পদে ৯৪২ জনের মধ্যে ৮৫৩ জন কর্মরত। কালিহাতী উপজেলায় প্রধান শিক্ষক পদে ১৭০ জনের মধ্যে রয়েছেন ৯০ জন। সহকারী শিক্ষক পদে ৯১৪ জনের মধ্যে কর্মরত রয়েছেন ৮৪২ জন। মধুপুরে প্রধান শিক্ষক পদে ১১০ জনের মধ্যে রয়েছেন ৯০ জন। সহকারী শিক্ষক পদে ৫৪৯ জনের মধ্যে রয়েছেন ৪৬৯ জন। নাগরপুরে প্রধান শিক্ষক পদে ১৫৬ জনের মধ্যে রয়েছেন ১১০ জন। সহকারী শিক্ষক পদে ৮২৯ জনের মধ্যে রয়েছেন ৭১৪ জন। ভুঞাপুরে প্রধান শিক্ষক পদে ১১০ জনের মধ্যে রয়েছেন ৮২ জন। সহকারী শিক্ষক পদে ৫৯৮ জনের মধ্যে রয়েছেন ৫২৮ জন। ধনবাড়ী উপজেলায় প্রধান শিক্ষক পদে ৮৫ জন থাকার কথা থাকলেও রয়েছেন ৫৮ জন। সহকারী শিক্ষক পদে ৪০৭ জনের মধ্যে কর্মরত ৩৭২ জন।

নাগরপুর উপজেলার ভারড়া ইউনিয়নের মিরকুটিয়া রিয়াজ তালুকদার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রতিষ্ঠার পর থেকেই প্রধান শিক্ষকের পদ শূন্য রয়েছে। ওই স্কুলে সহকারী শিক্ষক রয়েছেন চারজন। চলতি দায়িত্বে প্রধান শিক্ষকের দায়িত্বে থাকা সহকারী শিক্ষক পারভীন আক্তার বলেন, প্রশাসনিক নানা কাজে বেশির ভাগ সময় ব্যস্ত থাকতে হয়। ব্যাহত হয় পাঠদান।

বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতি টাঙ্গাইল জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ সাজ্জাদুর রহমান খোশনবীশ জানান, দীর্ঘদিন ধরে শিক্ষক শূন্যতার কারণে মানসম্মত পাঠদানে ব্যাঘাত সৃষ্টি হচ্ছে। দ্রুত নিয়োগপ্রক্রিয়া সম্পন্ন হলে প্রাথমিক শিক্ষার গুণগত মান ও কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য অর্জন সম্ভব হবে।

এ ব্যাপারে টাঙ্গাইল জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ বলেন, প্রতি মাসেই প্রধান ও সহকারী শিক্ষকের শূন্য পদের তালিকা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। দীর্ঘদিন প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক নিয়োগপ্রক্রিয়া বন্ধ রয়েছে। যারা চলতি দায়িত্বে প্রধান শিক্ষক পদে রয়েছেন, তাদের পদোন্নতি দিয়ে ওই ঘাটতি পূরণ করা হবে। এছাড়া দ্রুত সময়ের মধ্যে সহকারী শিক্ষক নিয়োগপ্রক্রিয়া সম্পন্ন করে শূন্য পদ পূরণ করা হবে।