পাবনা শহরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে এক গৃহবধূর অপারেশনের (সিজার) পর নবজাতক নিয়ে ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে। চিকিৎসক নবজাতক চুরি করে বিক্রি করেছেন অথবা মেরে ফেলেছেন বলে রোগীর স্বজনদের। তবে চিকিৎসক বলছেন এটা ভৌতিক গর্ভধারণ।
শুক্রবার (১০ ফেব্রুয়ারি) রাতে পাবনার শাপলা প্লাস্টিক মোড়ের মডেল হাসপাতাল অ্যান্ড ডায়াগনেস্টিক সেন্টারে এ ঘটনা ঘটে।
জানা গেছে, শুক্রবার রাত ১০টার দিকে পাবনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের প্রসূতি বিশেষজ্ঞ সার্জন ডা. শাহীন ফেরদৌস শানুর তত্ত্বাবধায়নে ওই গৃহবধূর অপারেশন সম্পন্ন হয়।
রোগীর স্বজনরা বলেন, “শুক্রবার সকালে রোগীকে এই হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। আল্ট্রাসনোগ্রাফিসহ সকল ডাক্তারি রিপোর্ট দেখে চিকিৎসক সিজার করার কথা বলেন। কিন্তু সিজার করার পর ডাক্তার বলছেন যে রোগীর গর্ভে কোন বাচ্চা ছিল না। এরপর চিকিৎসকরা দ্রুত হাসপাতাল ত্যাগ করেন। আর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ২০১৭ সালের রিপোর্ট রেখে রোগীর বর্তমান সকল রিপোর্ট গায়েব করে দিয়েছে।”
তারা আরও বলেন, “অপারেশনের সময় একবার বাচ্চার কান্নার আওয়াজ শোনা গেছে। হয়তো বাচ্চাটি তাদের ভুল চিকিৎসায় মারা গেছে, না হয় তারা চুরি করে বিক্রি করে দিয়েছে।”
ভুক্তভোগী রোগী আকলিমা খাতুন আঁখি বলেন, “আমি ১০ মাস গর্বধারণ করেছি। আল্ট্রাস্নো রিপোর্ট অনুযায়ী আমার ছেলে বাচ্চা হওয়ার কথা। অপারেশনের সময় একবার বাচ্চার কান্নার আওয়াজ শুনেছি। এর কিছুক্ষণ পরে জানতে পারি আমার নাকি সন্তান হয়নি, পেটে নাকি কোন সন্তান ছিল না।“
কান্না কণ্ঠে ভুক্তভোগী আরও বলেন, “পেটে বাচ্চা না থাকলে আমি চিকিৎসকের কাছে কেন যেতাম। আর সিজারই বা কি জন্য করিয়েছি। অনেক আগে থেকে পেটে বাচ্চা নড়াচড়াও করেছে।”
ভুক্তভোগী রোগীর স্বামী নজরুল ইসলাম বলেন, “সিজার করার পর চিকিৎসক জানায় পেটে কোন সন্তান নেই। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আর ডাক্তারের যোগসাজশে আমার ছেলে সন্তানকে ওরা বিক্রি করে দিয়েছে। প্রশাসনের নিকট এর সুষ্ঠু বিচার চাই।”
এ বিষয়ে হাসপাতালের পরিচালক সেলিম উদ্দিন বলেন, “সিজারের রোগী হিসেবেই আকলিমাকে ভর্তি করা হয়েছে। কিন্তু রোগীর কোন বাচ্চা ছিল না। অন্য কোনো সমস্যা ছিল। যেটা চিকিৎসকরা অপারেশনের মাধ্যমে সমাধান করেছেন। কিন্তু এখন রোগীর স্বজনরা মিথ্যা অভিযোগ করছেন।”
ডা. শাহীন ফেরদৌস শানু বলেন, “সিজারের রোগী হিসেবেই অপারেশন করতে গিয়ে দেখি তাদের ২০১৭ সালের কাগজপত্র রয়েছে। কিন্তু আমার আগের রোগী হওয়ায় এবং রোগীর অবস্থা বিবেচনায় অপারেশন করি। কিন্তু কোনো বাচ্চা পাওয়া যায়নি। এটা ভৌতিক গর্ভধারণ ছিল। এটা এক ধরণের রোগ। দুর্ঘটনা বা চুরির অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। আমাকে হেয়প্রতিপন্ন করার জন্য এটা বলা হচ্ছে।”
এ বিষয়ে পাবনা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কৃপা সিন্ধু বালা বলেন, “শনিবার (১১ ফেব্রুয়ারি) রাত ৯ টার দিকে মৌখিক অভিযোগ পেয়ে পুলিশ পাঠানো হয়েছে। পরে আমরা লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। সকল কাগজপত্র দেখে ও তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”
পাবনার সিভিল সার্জন ডা. মনিসর চৌধুরী বলেন, “এ বিষয়টি আমরা জানতে পেরেছি। প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”
আপনার মতামত লিখুন :