• ঢাকা
  • শনিবার, ২৭ জুলাই, ২০২৪, ১২ শ্রাবণ ১৪৩১, ২০ মুহররম ১৪৪৫

তীব্র দাবদাহে ঝরে পড়ছে আমের গুটি


রাজশাহী প্রতিনিধি
প্রকাশিত: এপ্রিল ১২, ২০২৩, ০৮:৫৭ এএম
তীব্র দাবদাহে ঝরে পড়ছে আমের গুটি

রাজশাহীর ওপর দিয়ে বয়ে চলেছে তাপপ্রবাহ। তীব্র গরমে ও দাবদাহে অতিষ্ঠ ও স্থবির হয়ে পড়েছে জনজীবন। দেখা নেই বৃষ্টির। বৃষ্টির অভাবে গাছ থেকে ঝরে পড়ছে আমের গুটি।

চলতি মৌসুমে আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় গাছে প্রচুর মকুল আসে। গুটিও এসেছে প্রচুর। কিন্তু বৃষ্টির অভাবে ঝরে যাচ্ছে এসব গুটি।

রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বলছে, তাপপ্রবাহের আগে রাজশাহীতে কয়েক দফা বৃষ্টিপাত হয়েছে। তাই গুটি ঝরার আশঙ্কা একটু কম। যেটুকু ঝরছে, সেটা স্বাভাবিক বলেই ধরা হচ্ছে। তারা আমচাষিদের গাছ ও গুটির পরিচর্যায় পরামর্শ দিচ্ছে। 

এবার রাজশাহীতে আমের চাষ হয়েছে ১৯ হাজার ৫৭৮ হেক্টর জমিতে। গত বছর ১৮ হাজার ৫১৫ হেক্টর জমিতে আমের চাষ হয়েছিল। ২০২২ সালে আম উৎপাদন হয়েছিল ২ লাখ ৬ হাজার ১৫৬ মেট্রিক টন। এ বছর আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে ২ লাখ ২৫ হাজার ৯১২ মেট্রিক টন আম উৎপাদন হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

রাজশাহী জেলার পবা উপজেলার হরিয়ানে ১৮টি গাছ নিয়ে আমবাগান রয়েছে মোয়াজ্জেম হোসেনের। তিনি বলেন, এ বছর আমের মুকুল দেরিতে এসেছে। ছয়টি গাছ ছাড়া সব গাছেই ৮০ শতাংশের বেশি আমের গুটি রয়েছে। দক্ষিণের গাছগুলোর গুটি ঝরেছে। কারণ, দক্ষিণের দিকে সূর্যের তাপ বেশি লাগে। আর উত্তরের গাছগুলোতে সূর্যের তাপ কিছুটা লাগলেও ছায়া থাকে বেশি।

মোয়াজ্জেম হোসেন আরও বলেন, “স্থানীয় কৃষি কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করে পরামর্শ নিচ্ছি। সে অনুযায়ী কাজ করছি। এ ছাড়া গুটি ঝরে পড়া রোধে আমগাছের গোড়া খুঁড়ে পানি দিচ্ছি। দেখা যাক কতটুকু কাজে লাগে। তবে বৃষ্টির সঙ্গে আবহাওয়াগত একটা ব্যাপার থাকে। বৃষ্টি হলে পরিবেশ ঠান্ডা হয়ে যায়। এমন অবস্থায় বৃষ্টির কোনো বিকল্প নেই।”

আব্দুস সালাম নামের এক আম ব্যবসায়ী জানান, এ বছর তিনটি বাগানের ৪৫টি গাছ কিনেছেন। তিনি বলেন, মার্চ মাসে বেশ কয়েক দিন বৃষ্টিপাত হয়েছিল। এই বৃষ্টি মুকুলের জন্য ভিটামিনের মতো কাজ করেছে। সেই বৃষ্টিতে মুকুলের গায়ে লেগে থাকা মরা ও শুকনা ফুলগুলো ঝরে যায়। একই সঙ্গে আমের পাতা ও মুকুলগুলো বৃষ্টির পানিতে ধুয়ে যায়। ফলে মুকুল বা গুটিতে এ সময়ে যে বিষ ও পানি স্প্রে করতে হয়, সেটি করার প্রয়োজন হয়নি। এ বছর প্রায় সব গাছেই মুকুল এসেছিল। আমের গুটিও ভালো আছে। তবে বৃষ্টি না হওয়ায় তাপমাত্রা বাড়ায় আমের গুটি ঝরা শুরু হয়েছে। এখন যে গুটি ঝরছে, সেটা বন্ধ না করা গেলে ক্ষতি হয়ে যাবে।

রাজশাহী আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের পর্যবেক্ষক আবদুস সালাম বলেন, মঙ্গলবার (১১ এপ্রিল) রাজশাহীর সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৮ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আগের দিন সোমবার তাপমাত্রা ছিল একই। রোববার ৩৮ দশমিক ১ ডিগ্রি, শনিবার ৩৮ ডিগ্রি, শুক্রবার ৩৭ দশমিক ৫ ডিগ্রি ও  বিকেল সাড়ে ৩টায় রাজশাহীর সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৬ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বৃষ্টি না হওয়া পর্যন্ত তাপমাত্রা আরও বাড়তে পারে।

রাজশাহী ফল গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. শফিকুল ইসলাম বলেন, “খরা হলে আমের গুটি ঝরবে এটাই স্বাভাবিক। আমের গুটি ঝরা রোধে আমরা গাছের গোড়ায় পানি দিতে পারি। তাহলে গুটি ঝরা অনেকটাই কমে যাবে। তবে বর্তমানে গাছে প্রচুর আমের গুটি রয়েছে। প্রাকৃতিক নিয়মেই এখান থেকে আরও গুটি ঝরে যাবে। সব গুটি টিকলে আমের গাছ নিতে পারবে না। তবে আমের গুটি ঝরা নিয়ে চিন্তার কোনো কারণ নেই।”

রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মোজদার হোসেন বলেন, রাজশাহীতে গাছে গাছে প্রচুর মুকুল এসেছিল। মৌসুমের প্রথমে হওয়া বৃষ্টিতে আমের অনেক উপকার হয়েছে। রাজশাহীতে তাপমাত্রা বাড়ার পরেও আমের গুটি যেটুকু ঝরছে সেটা স্বাভাবিক। কৃষক বা চাষিদের হতাশার কিছু নেই। বেশি গুটি ঝরছে মনে হলে সেচ দিতে হবে। এ ছাড়া আম চাষিদের গুটি ঝরা রোধে বিভিন্ন পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।

Link copied!