• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ০২ মে, ২০২৪, ১৯ বৈশাখ ১৪৩১, ২২ শাওয়াল ১৪৪৫

ভোর হতেই ঢল নামে হাজীর বাজারে


শেরপুর প্রতিনিধি
প্রকাশিত: জুলাই ২৩, ২০২৩, ১০:০৬ এএম
ভোর হতেই ঢল নামে হাজীর বাজারে

তরতাজা সবজি-মাছ-মাংসে শেরপুরের ক্রেতাদের আস্থা কুড়িয়েছে হাজীর বাজার। বাজারটি জেলা শহর থেকে সামান্য দূরে ঢাকা-শেরপুর মহাসড়কের নবীনগর বাসস্ট্যান্ড এলাকায়। ক্রেতারা বলছেন, কৃষকের সদ্য তোলা টাটকা শাক-সবজি পাওয়া যায় ওই বাজারে। এ ছাড়া এক জায়গাতেই মিলছে মাছ-মাংস-দুধ-ডিমসহ প্রায় সব নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য। অন্যদিকে বিক্রেতারা বলছেন, বাজারের প্রতিটি পণ্যের মান ভালো হওয়ায় গেল ৩০ বছরে তিলে তিলে সুনাম অর্জন করেছে এই বাজার। মাত্র পাঁচ ঘণ্টার এই বাজারে নানাভাবে যুক্ত হয়ে আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন প্রান্তিক কৃষক, পাইকার ও দিনমজুরসহ হাজারো মানুষ। এদিকে বাজারটিকে স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশ বজায় রাখতে উন্নয়নমূলক কাজ চলমান আছে বলে জানিয়েছে পৌর কর্তৃপক্ষ।

সরেজমিনে হাজীর বাজারে গেলে কথা হয় ক্রেতা, বিক্রেতা, দিনমজুর, প্রান্তিক কৃষক ও পাইকারদের সঙ্গে। তারা বাজারটি তুমুল জনপ্রিয় হওয়ার মূল কারণগুলো ব্যাখ্যা করেন।  

ভীমগঞ্জ এলাকার কৃষক সোলায়মান মিয়া, কাজল শেখ ও রতন মিয়া বলেন, ডিসি, এসপি, মেয়র, চেয়ারম্যান ও মেম্বারদের ঘরে প্রতিদিন এই বাজার থেকে নানা ধরণের সবজি ও মাছ-মাংস-ডিম-দুধ যায়। পাশাপাশি বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত কর্মকর্তা, কর্মচারী ছাড়াও নানা শ্রেণি পেশার মানুষের আস্থার স্থল এই বাজার।  

তারা আরও জানান, জেলা কৃষি বিভাগের কর্মকর্তাদের পরামর্শে কৃষকরা জমিতে জৈব সার ব্যবহার করেন। এ ছাড়া সেক্স ফেরোমন ফাঁদসহ নানা কৃষি প্রযুক্তি ব্যবহারের ফলে সবজির মান যেমন ভালো থাকে তেমনি বাজারে এর চাহিদাও ব্যাপক।

কৃষক সাব্বির হোসেন বলেন, সদর উপজেলার দশানী, ভীমগঞ্জ, কনাসাখলা, কুসুমহাটিসহ ১০-১২টি গ্রাম থেকে আসা কৃষকরা বেগুন, আলু, পটল, ঝিঙ্গা, শশা, ঢেঁড়স, কাঁচাকলা, লাউ, বরবটি, করলা, কলার মোচা, মুলা, মিষ্টি কুমড়াসহ নানা ধরণের সবজির পসরা নিয়ে বসেন।

খুচরা সবজি বিক্রেতা কুসুমহাটির হাবেদ আলী বলেন, নিজ এলাকা ছাড়াও পাশের আরও কয়েকটি গ্রাম থেকে তিনি সবজি সংগ্রহ করেন। প্রতিদিন ৭ হাজার থেকে ৮ হাজার টাকার সবজি বিক্রি হয়। আয় হয় ৮০০ থেকে ১০০০ টাকা পর্যন্ত।

হাবেদ আলী আরও বলেন, প্রতিদিন ভোর হতেই ক্রেতাদের ঢল নামে বাজারে। এই বাজারের সঙ্গে নানাভাবে যুক্ত প্রান্তিক কৃষক, পাইকার ও দিনমজুরসহ হাজারো মানুষ আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন।

পাইকার রফিক মিয়া বলেন, সাপমারী, ছনকান্দা আর ভাতশালা এলাকা থেকে ১০ হাজার টাকায় ৪-৫ ভ্যান সবজি কিনে খুচরা বিক্রি করি। গড়ে ৬০০-৭৫০ টাকা আয় হয়।

নবীনগর এলাকার বলা মিয়া বলেন, “ভোর ছয়টা থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত এই বাজারে সবজির ব্যবসা করি। এরপর রড, সিমেন্টের দোকানে ভ্যান গাড়ি চালাই।”

বাজারের শুটকি বিক্রেতা মজনু, ওমর ফারুক ও শামীম মিয়া বলেন, “চেপা, নুনা ইলিশ, ফেপি, চেলাসহ ১৫-২০ প্রকারের শুটকি মাছ নিজেরাই বাড়িতে প্রসেস করে বিক্রি করি। দীর্ঘ দিন সংরক্ষণ করার জন্য এতে কোনো ক্যামিকেল ব্যবহার করা হয় না।”

মেসার্স দুদু মিয়া মৎস্য আড়তের মালিক রিপন মিয়া বলেন, যশোর, খুলনা, রাজশাহীর আঠারোমাইল, সুনামগঞ্জ ও সিলেট থেকে এখানকার ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন আইটেমের মাছ আমদানি করেন। এই বাজারে বেশী বিক্রি হয় রুই, মৃগেল, কার্প, কাতল, সিলভার কার্প, গ্রাস কার্পসহ দেশি প্রজাতির নানা পদের মাছ। জেলার মধ্যে এটিই সবচেয়ে বড় মাছের বাজার।

জেলা সেক্টর কমান্ডার্স ফোরামের সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট আখতারুজ্জামান বলেন, “বাড়ির কাছে টাটকা জিনিসপত্র পাওয়া যায়। তাই অন্য বাজারে যাই না।”

ক্রেতা শফিকুল ইসলাম বলেন, “খুব সকালে হাঁটতে বের হই। ফেরার সময় এখান থেকে বাজার করে বাড়ি ফিরি। এরপর রান্না শেষে খাবার খেয়ে অফিসে যাই। এ বাজারে সবজির সঙ্গে টাটকা গরু, খাসি, মুরগির মাংস এবং দেশি নানা জাতের মাছও পাওয়া যায়।”

ঝিনাইগাতী থেকে আসা আবুল কালাম বলেন, “ছোট বোনের বিয়ে প্রায় ২৫০-৩০০ লোকের আয়োজন করতে হবে। মাছ ও মাংসের জন্য অর্ডার দিয়ে গেলাম।”

ঠেলাগাড়ি চালক ইন্তাজ আলী বলেন, “প্রায় ২০ বছর ধরে এ বাজারে কেনাকাটা করি। জীবিকার তাগিদে দৈনিক সকালে ঠেলাগাড়ি নিয়ে গরুহাটি চলে যাই, যাওয়ার আগে বাড়িতে এই হাট থেকেই বাজার করে পাঠাই। গ্রাম থেকে আসা কৃষকদের কাছ থেকে সাশ্রয়ী মূল্যে সবজি কিনতে পারি।”

শেরপুর পৌরসভা কার্যালয় সূত্র জানায়, ১৯৯৩ সালে নিজস্ব অর্থায়নে প্রায় ৪২ শতাংশ জমি কিনে এই বাজার চালু করা হয়। পৌর এলাকার

পৌরসভার সহকারী প্রকৌশলী (সিভিল) খুরশেদ আলম জানান, বাজারটিতে স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশ বজায় রাখতে উন্নয়নমূলক কাজ চলমান আছে। সরকারের প্রাণী সম্পদ ও ডেইরি প্রকল্পের আওতায় এক কোটি ৮০ লাখ টাকা ব্যয়ে বাজার পাকাকরণ করা হচ্ছে।

Link copied!