জামালপুরের বকশীগঞ্জে পাঁচ মাসের শিশু সন্তানকে হত্যার পর আত্মগোপনে থাকা পিতাকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব। পাষণ্ড ওই পিতার নাম মো. মোস্তফা (৪০)। তিনি শেরপুরের ঝিনাইগাতি উপজেলার দুধনই গজারীকুড়া গ্রামের আ. রহিমের ছেলে। সোমবার (২ জানুয়ারি) দুপুরে জামালপুর র্যাব কার্যালয়ে কোম্পানি কমান্ডার আশিক উজ্জামান এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান।
হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় নিহতের মা বাদী হয়ে মামলা করলে মোস্তফাকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেন আদালত। পরবর্তীতে বিভিন্ন তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ ও বিশ্লেষণ করে আসামির অবস্থান নিশ্চিত করে জামালপুর ক্যাম্পের একটি অভিযানিক দল রোববার বিকেল সাড়ে ৪টায় ঢাকা জেলার খিলগাঁও থানার নন্দিপাড়া ঘজীবাড়ী এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে।
আশিক উজ্জামান আরও জানান, ২০০৭ সালে গার্মেন্টসে চাকরির করার সুবাদে মো. মোস্তফার সঙ্গে বকশীগঞ্জ উপজেলার টুপকারচর গ্রামের মো. উজির আলীর মেয়ে রোজিনা বেগমের পরিচয় ও প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। দুই বছর পর তাদের পারিবারিকভাবে বিয়ে হয়। কিছুদিন দেশের বাড়িতে সংসার করার পর পুনরায় দুজনেই ঢাকায় গিয়ে আবার গার্মেন্টসে চাকরি শুরু করেন। রোজিনা অন্তঃসত্ত্বা হলে তারা ফের দেশের বাড়িতে চলে আসেন। তাদের ঘরে আসিফ নামে একটি পুত্র সন্তানের জন্ম হয়। রোজিনা তার স্বামীর সঙ্গে পিত্রালয়ে বসবাস করতে থাকেন। স্বামী মোস্তফা জীবিকা নির্বাহের জন্য দিনমজুরি করছিল। রোজিনার পিতা নিতান্তই গরিব হওয়ার ফলে বসবাসের জায়গা না থাকায় একই গ্রামের জনৈক মৃত সোহরাব মেম্বারের ছেলে গিয়াস উদ্দিনের বাড়িতে একটি পরিত্যক্ত রান্নাঘরে সপরিবারে বসবাস করতেন।
একপর্যায়ে ২০১১ সালের ২০ মে শুক্রবার বিকেলে তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে তাদের পারিবারিক দ্বন্দ্বের সূত্রপাত শুরু হয়। কলহের একপর্যায়ে মোস্তফা রোজনার ওপর নির্মম শারীরিক নির্যাতন চালান। নির্যাতনে নিস্তেজ হয়ে পড়েন রোজিনা। এতেও আক্রোশ না কমলে মোস্তফা তার পাঁচ মাস বয়সী শিশুসন্তান মো. আসিফকে দুই পা ধরে ঘরে থাকা ঢেঁকির সঙ্গে সজোরে পরপর তিনবার আছাড় দিলে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। হত্যাকাণ্ড ঘটিয়ে পালিয়ে যাবার সময় ওই পাষণ্ড পিতাকে আটকের পর পুলিশে সোপর্দ করে আশেপাশের লোকজন। পরবর্তীতে বিজ্ঞ আদালতের মাধ্যমে জামিন পেলে আত্মগোপনে চলে যান মোস্তফা। আত্মগোপনে থাকা অবস্থায় বিভিন্ন নামপরিচয়ে (কুদ্দুস, রজব আলী, ইয়াসিন আলী ও সজিব ইত্যাদি) ঢাকার বিভিন্ন স্থানে অটোচালক হিসেবে বসবাস করে আসছিলেন। এরমধ্যেই চলমান মামলায় আদালত ২ ডিসেম্বর ২০২২ তারিখে মোস্তফাকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দিলে র্যাব তাকে গ্রেপ্তার করে সোমবার ঝিনাইগাতি থানায় হস্তান্তর করে।