• ঢাকা
  • শুক্রবার, ০৩ মে, ২০২৪, ২০ বৈশাখ ১৪৩১, ২৪ শাওয়াল ১৪৪৫

মেডিকেলে চান্স পেয়ে মৃত বাবার স্বপ্নপূরণ করলেন কৃষক জনি


ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি
প্রকাশিত: মার্চ ১৩, ২০২৩, ০৭:০৮ পিএম
মেডিকেলে চান্স পেয়ে মৃত বাবার স্বপ্নপূরণ করলেন কৃষক জনি

বাবার দুচোখ ভরে স্বপ্ন ছিল জনিকে (১৮) নিয়ে। বড় হয়ে ছেলে একদিন ডাক্তার হবে। হঠাৎ এক সড়ক দুর্ঘটনায় তার বাবা মারা যান। এরপর সংসারের দায়িত্ব আসে জনির ওপর। নিজেদের কিছু কৃষি জমিতে শুরু করেন কৃষি কাজ। কিন্তু বাবার স্বপ্ন সবসময় তাকে তাড়া করে বেড়াতো। সারাদিন পরিশ্রম করার পরও বাবার স্বপ্ন বাস্তবানে মনযোগ দিয়ে লেখাপড়া চালিয়ে যান। ২০২২—২৩ শিক্ষাবর্ষের এমবিবিএস প্রথম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষার জন্য আবেদন করেন। এরপর পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে সিরাজগঞ্জের শহীদ এম মনসুর আলী মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগ পান তিনি। এত কষ্টের মাঝেও তার এমন সফলতায় খুশি পরিবার ও স্থানীয়রা।

ঠাকুরগাঁওয়ের রাণীশংকৈল পৌরসভা দক্ষিণপাড়া গ্রামের মৃত মনিরুল ইসলাম টিপু ও জরিনা বেগম দম্পতির ছেলে জাহিদ হাসান জনি। তিনি রাণীশংকৈল পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি এবং পীরগঞ্জ সরকারি কলেজ থেকে এইচএসসি পাশ করেছেন।

প্রতিবেশী সাঈদ আহসান বলেন, “তার বাবাকে হারানোর পর সে খুব কষ্ট করেছে। মাঠে কৃষি কাজ করে সংসারের খরচ ও পড়াশোনা চালিয়ে গেছে। আমরা আশা রাখছি সরকারসহ সকলে তার পাশে থেকে তাকে সহযোগিতা করবেন।”

আবেগে আপ্লুত হয়ে জনির মা জরিনা বেগম বলেন, “অনেক কষ্ট করে মোর ছুয়াডা পড়াশোনা করিছে। ভালো করে খাবা পারেনি। সব কৃষি কাজ করিছে ফের সংসারটা চালায়ছে। আইজ ডাক্তারি পড়িবার সুযোগ পাইলো। জনির বাপ থাকিলে আইজ খুবে খুশি হলেহে। সবাই মোর ছুয়াডার তাহানে দোয়া করিবেন। যাতে ভালো ডাক্তার হবা পারে।”

জাহিদ হাসান জনি বলেন, “ছোট বেলায় বাবা বলতেন আমাকে ডাক্তার বানাবেন। আজকে আমার বাবা বেঁচে নেই। তিনি থাকলে সবচেয়ে বেশি খুশি হতেন। তিনি মারা যাওয়ার পর বাড়ির সব দায়িত্ব আমাকে নিতে হয়। আমার শুধু আরেক বোন আছেন। কৃষি কাজ করার পাশাপাশি পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়া খুব কঠিন হয়ে পরতো। তবুও হাল ছাড়িনি কারণ স্বপ্নটা আমার বাবার।”

জনি আরও বলেন, “এক ভাইয়ের মাধ্যমে অল্প টাকায় কোচিংয়ে ভর্তি হই। তারপর বাড়িতে এসে কাজ করে আবার চলে যেতাম। আসা যাওয়ার মধ্যে থাকতাম সবসময়। কষ্ট হলেও হার মানিনি। আজকে মেডিকেলে ভর্তির সুযোগ পেয়েছি। কেবল পথচলাটা শুরু করেছি। সকলে আমার জন্য দোয়া করবেন যাতে করে একজন মানবিক ডাক্তার হয়ে পরিবার, আত্মীয় স্বজনসহ দেশবাসীর সেবা দিয়ে যেতে পারি।“

রাণীশংকৈল পৌরসভার মেয়র মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, “জনি আমার পৌরসভার বাসিন্দা। তার বাবা মারা যাওয়ার পর সে অনেক পরিশ্রম করে আজ সফল হয়েছে। মাঝে মধ্যে আমি তাদের খোঁজখবর নিই। পরেও তাকে সার্বিক সহযোগিতা করা হবে।”

Link copied!