• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ০২ মে, ২০২৪, ১৯ বৈশাখ ১৪৩১, ২৩ শাওয়াল ১৪৪৫

জুয়ায় হেরে চাচাতো ভাইকে অপহরণ, টাকা না পেয়ে হত্যা


পাবনা প্রতিনিধি
প্রকাশিত: জানুয়ারি ১৮, ২০২৪, ০৪:২০ পিএম
জুয়ায় হেরে চাচাতো ভাইকে অপহরণ, টাকা না পেয়ে হত্যা
সালমান ও অভিযুক্ত ফয়সাল হোসেন। ছবি : সংগৃহীত

অনলাইনে জুয়ার নেশায় পড়ে ফয়সাল হোসেন (২৩) নামের এক যুবক অনেক টাকা খোয়ান। একপর্যায়ে তিনি জুয়া খেলতে গিয়ে বিপুল টাকা দেনা হয়ে পড়েন। আর সেই টাকা জোগাড় করতে নিজের আপন চাচাতো ভাই চার বছরের শিশু সালমানকে অপহরণ করেন। তারপর মুঠোফোনে মেসেজে পাঠিয়ে পরিবারের কাছে ১০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করেন। একপর্যায়ে মুক্তিপণের টাকা না পেয়ে শিশুটিকে শ্বাসরোধে হত্যা করে নিজের ঘরে বাক্সের ভেতরে লুকিয়ে রাখেন ফয়সাল।

পাবনা সদর উপজেলার আতাইকুলা থানার সাদুল্লাপুর ইউনিয়নের আলোকচর গ্রামে এমনই এক রোমহর্ষক ঘটনা ঘটে।

মঙ্গলবার (১৬ জানুয়ারি) রাত ১০টায় ফয়সালের ঘরের বাক্সের ভেতর থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। পরে এ ঘটনায় জড়িত ফয়সালসহ তার বাবা-মাকে আটক করে পুলিশ।

সোমবার সকাল ৯টায় নিখোঁজ হয় শিশু সালমান।

নিহত শিশু সালমান আলোকচর গ্রামের বাসিন্দা ও স্কুলশিক্ষক আবুল হাশেমের ছেলে। আর ফয়সাল একই গ্রামের আনোয়ার হোসেন শাহাদতের ছেলে। নিহত শিশু সালমান ও অভিযুক্ত ফয়সাল সম্পর্কে আপন চাচাতো ভাই। তাদের বাড়িও পাশাপাশি।

আটকরা হলেন আনোয়ার হোসেন শাহাদত (৪৮), তার স্ত্রী ফাহিমা খাতুন (৪০) ও ছেলে ফয়সাল হোসেন (২৩)। আটকের পর শিশু সালমানকে অপহরণ, হত্যা এবং হত্যার কারণ সম্পর্কে পুলিশের কাছে স্বীকারোক্তি দেন ফয়সাল।

নিহত শিশু সালমানের বাবা আবুল হাশেম বলেন, “সোমবার সকাল সাড়ে ৮টার দিকে আমি স্কুলে যাবার প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। এ সময় বাচ্চার কান্না শুনে বাইরে বের হয়ে দেখি সালমানের হাত ধরে আছে ফয়সাল। পরে আমি গোসল খাওয়া শেষ করার পর আমার স্ত্রী বলে ছেলেটাকে এনে তার কাছে রেখে যেতে। আমি তখন বাইরে বের হয়ে আর ছেলেটাকে খুঁজে পাইনি। আশপাশের বিভিন্ন বাড়িতে, পুকুরে সবখানে খুঁজেও তার সন্ধান পাইনি। ফয়সালকে জিজ্ঞেস করলে সে বলে সালমানকে পরে আর দেখেনি কোথায় গেছে।”

আবুল হাশেম বলেন, “খোঁজাখুঁজির একপর্যায়ে আমার আরেক ভাই সাদ্দাম হোসেনের মোবাইল ফোনে মেসেজ আসে আমার ছেলেকে অপহরণ করা হয়েছে। ১০ লাখ টাকা নিয়ে আতাইকুলা-সুজানগর সড়কের হিজলতলা নামক স্থানে টাকা রেখে সালমানকে নিয়ে যেতে হবে।”

পরে এ বিষয়ে আতাইকুলা থানায় অভিযোগ দেন আবুল হাশেম। পুলিশ ওই মেসেজের সূত্রধরে পরদিন মঙ্গলবার (১৬ জানুয়ারি) বিকেলে প্রথমে ফয়সালকে আটক করে। পরে জিজ্ঞাসাবাদে তার চাচাতো ভাই শিশু সালমানকে অপহরণ ও হত্যার কথা স্বীকার করে। তার দেয়া তথ্য ও দেখিয়ে দেয়া তার ঘরের বাক্সের ভেতর থেকে নিহত শিশু সালমানের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।

আতাইকুলা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মিজানুর রহমান বলেন, “অভিযোগের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে অপহৃত সালমানের চাচাতো ভাই ফয়সালকে মঙ্গলবার বিকেলে প্রথমে আটক করা হয়। তাকে নিয়ে রাত ১০টার দিকে তার ঘরের বাক্সের ভেতর থেকে শ্বাসরোধে হত্যা করা শিশুর মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এ সময় ফয়সালের বাবা ও মাকেও আটক করা হয়।”

ওসি আরও বলেন, আটক ফয়সাল পুলিশের কাছে স্বীকার করেছেন তিনি অনলাইনে জুয়ায় হেরে অনেক টাকা দেনা হয়ে গেছে। সেই টাকা জোগাড় করতে সালমানকে অপহরণ করে মুক্তিপণ দাবি করে।

বুধবার (১৭ জানুয়ারি) সকালে লাশ ময়নাতদন্তের জন্য পাবনা জেনারেল হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়। ময়নাতদন্ত শেষে মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তরের পর বিকেল সাড়ে চারটার দিকে জানাযা ও দাফন সম্পন্ন হয়েছে। আর আটক ফয়সাল ও তার বাবা-মাকে মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে বুধবার (১৭ জানুয়ারি) দুপুরে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে বলে জানান ওসি।

Link copied!