• ঢাকা
  • শুক্রবার, ০৩ মে, ২০২৪, ২০ বৈশাখ ১৪৩১, ২৩ শাওয়াল ১৪৪৫

কর্মস্থলে যাওয়ার পথে ট্রাকচাপায় প্রাণ হারালেন সাইকেল আরোহী


চট্টগ্রাম প্রতিনিধি
প্রকাশিত: জানুয়ারি ৩০, ২০২৪, ১১:৩০ এএম
কর্মস্থলে যাওয়ার পথে ট্রাকচাপায় প্রাণ হারালেন সাইকেল আরোহী
বাবার লাশের পাশে ছেলের আহাজারি।ছবি : সংগৃহীত

চট্টগ্রামে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল সংযোগ সড়কে ট্রাকচাপায় এক সাইকেল আরোহী নিহত হয়েছেন। মঙ্গলবার (৩০ জানুয়ারি)সকাল পৌনে ৭টার দিকে টানেল সংযোগ সড়কের আনোয়ারা প্রান্তে এ দুর্ঘটনা ঘটে।

নিহত আনোয়ার পারভেজ (৪৫) কোরীয় রপ্তানি প্রক্রিয়াজাতকরণ অঞ্চলে (কেইপিজেড) কর্ণফুলী শুজ ইন্ডাস্ট্রি (কেএসআই) নামে একটি কারখানায় নিরাপত্তাকর্মী হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তিনি আনোয়ারা উপজেলার পরৈকোড়া ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের ছৈয়দ আহমেদের ছেলে।

আরেক নিরাপত্তাকর্মী নাজিম উদ্দীনসহ তিনজন তিনটি সাইকেল নিয়ে চাতরি চৌমুহনী থেকে কেইপিজেডের দিকে যাচ্ছিলেন। টানেলের সংযোগ সড়কের এক কিলোমিটার পথ অতিক্রম করার পর পেছন থেকে একটি ট্রাক আনোয়ার পারভেজকে চাপা দিয়ে চলে যায়।

নাজিম উদ্দীন বলেন, “ঘটনার সময় আমি সামনে ছিলাম। পেছনে আওয়াজ শুনে দেখি সাইকেলসহ আনোয়ার পড়ে আছে। মুহূর্তে একজন মানুষ নাই হয়ে গেল।”

দুর্ঘটনার পর সরেজমিন দেখা যায়, আনোয়ার পারভেজের লাশ সড়কে পড়ে আছে। সাইকেলটি পড়ে আছে লাশের ওপর। সামান্য দূরে পড়ে আছে জুতা জোড়া। টিফিন বাক্স ছড়িয়ে–ছিটিয়ে আছে সড়কে।

নিহত আনোয়ার পারভেজের দুই ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে। সবার বড় ১০ বছর বয়সী আবু সায়েম স্থানীয় একটি মাদ্রাসায় পড়াশোনা করে। বাবার মৃত্যুর খবর পেয়ে মাদ্রাসা থেকে তাকে ঘটনাস্থলে নিয়ে আসেন চাচারা। সেখানে এসে আহাজারি করতে করতে আবু সায়েম বলছিল, “আমার আব্বু মরেনি। আমার আব্বুর কিচ্ছু হয়নি। তোমরা আমার আব্বুকে রাস্তা থেকে তুলে হাসপাতালে নিয়ে চল। আমার আব্বুর টিফিন বাক্স (রাস্তা থেকে) তুলে দাও। আমি আব্বুকে ছাড়া যাব না।”

নিহত ব্যক্তির ছোট ভাই আনোয়ার সাদেক বলেন, “আমার ভাইয়ের তিনটি ছোট ছোট সন্তানদের কী সান্ত্বনা দিব আমরা। আমাদের তো সব শেষ হয়ে গেল।”

ঘটনাস্থলে আনোয়ারা থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. কাউছার জানান, ঘটনার পরপরই তিনি ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন।

আনোয়ারা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি)সোহেল আহমেদ জানান, তবে ট্রাকটি জব্দ করা যায়নি। টানেল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে ট্রাক শনাক্তের চেষ্টা করা হবে

এ নিয়ে গত তিন মাসে টানেলের ভেতরে-বাইরে ছয়টি দুর্ঘটনা ঘটল। এতে দুজন নিহত হয়েছেন। এর আগে ১৮ জানুয়ারি সকালে টানেলের ভেতর চাকা ফেটে মুরগিবাহী পিকআপ নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ধাক্কা দেয় টানেলের টিউবে। এতে ডেকোরেশন বোর্ড ভেঙে যায় এবং অগ্নিনির্বাপণ সরঞ্জাম ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ১৬ জানুয়ারি সকালে টানেল সড়কের বৈরাগ এলাকায় দ্রুতগতির মাইক্রোবাসের ধাক্কায় সিকিউরিটি পোস্ট ভেঙে দায়িত্বরত একজন নৌবাহিনীর সদস্যসহ সাতজন আহত হন। গত বছরের ১০ নভেম্বর টানেলের পতেঙ্গা প্রান্তে ওয়াই জনশনসংলগ্ন এলাকায় বাসের ধাক্কায় একজন নিহত হন।

৩ নভেম্বর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেলের ভেতরে একটি প্রাইভেট কারকে পেছন থেকে একটি বাস ধাক্কা দিলে প্রাইভেট কারটি দুমড়েমুচড়ে যায় এবং চারজন আহত হন। ৩০ অক্টোবর আনোয়ারা প্রান্তে টোল প্লাজা–সংলগ্ন এলাকায় একটি প্রাডো গাড়ি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে রেলিংয়ের সঙ্গে ধাক্কা লেগে দুর্ঘটনা ঘটে।

গত বছরের ২৮ অক্টোবর চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীর তলদেশে নির্মিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পরদিন সকাল ছয়টায় সর্বসাধারণের গাড়ি চলাচলের জন্য টানেলটি খুলে দেওয়া হয়।

Link copied!