• ঢাকা
  • রবিবার, ২৮ এপ্রিল, ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১, ১৮ শাওয়াল ১৪৪৫

ভালোবাসার টানে বাংলাদেশে থেকে যাওয়া অস্ট্রেলিয়ার চিত্রশিল্পী ম্যালকমের মৃত্যু


খুলনা প্রতিনিধি
প্রকাশিত: জানুয়ারি ২৫, ২০২৪, ০৯:০৫ এএম
ভালোবাসার টানে বাংলাদেশে থেকে যাওয়া অস্ট্রেলিয়ার চিত্রশিল্পী ম্যালকমের মৃত্যু
চিত্রশিল্পী ম্যালকম আরনল্ড। ছবি : সংগৃহীত

অস্ট্রেলিয়ার নাগরিক চিত্রশিল্পী ম্যালকম আরনল্ড ২০০৪ সাল থেকে স্থায়ীভাবে বাংলাদেশে ছিলেন। এ দেশে তার নাগরিকত্ব ছিল না। বছর বছর ভিসার মেয়াদ বাড়িয়ে বাংলাদেশে থেকেছেন। এর আগে ভিড়বাট্টা এড়াতে বছর দশেক পাহাড়ে উঠে বসেছিলেন। তাও বাংলাদেশের মতো ঘনবসতিপূর্ণ দেশে নয়, অস্ট্রেলিয়ায়। তারও আগে যুবক বয়সেই চাকরি ছেড়েছিলেন শুধু ছবি আঁকবেন বলে।

সেই ম্যালকম নানা পথ ঘুরে ১৮ বছর ধরে খুলনা শহরের সোনাডাঙ্গায় সবুজ রঙের দেয়ালের একটি ঘরে ছিলেন। যেখানে দিনরাত কোলাহলই ছিল তার জীবন। বাগেরহাটের রামপালের পেড়িখালী গ্রামের হালিমা বেগমকে ভালোবেসে তিনি খুলনায় থেকে গিয়েছিলেন।

দেড় যুগ ধরে ভালোবাসার টানে বাংলাদেশে বসবাস করা চিত্রশিল্পী ম্যালকম আরনল্ড মারা গেছেন। বুধবার (২৪ জানুয়ারি) সকালে খুলনার সোনাডাঙ্গা এলাকায় একটি ভাড়াবাড়িতে তার মৃত্যু হয়। দীর্ঘদিন ধরে তিনি অসুস্থ ছিলেন।

বিষয়টি নিশ্চিত করে সোনাডাঙ্গা মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. আমিরুল ইসলাম বলেন, ম্যালকমের মৃত্যুর খবর পেয়ে তারা বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানান। একই সঙ্গে ঢাকায় অস্ট্রেলিয়ার হাইকমিশনে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র পাঠানো হয়। হাইকমিশন থেকে তার লাশ দাফনের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। পরে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নির্দেশনা অনুযায়ী তার লাশ নগরের বসুপাড়া কবরস্থানে দাফন করা হয়।

ম্যালকমের স্ত্রী হালিমা বেগম জানান, মঙ্গলবার রাতের খাবার ও ওষুধ খেয়ে ঘুমিয়ে পড়েন ম্যালকম। সকালে ঘন ঘন শ্বাস নেওয়ার শব্দ শুনে দৌড়ে যান। তখন তিনি মুখের স্প্রে দিতে বলেন। স্প্রে দেওয়ার কিছুক্ষণ পর ম্যালকম নিস্তেজ হয়ে পড়েন। পরে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। তিনি স্ট্রোক করে মারা গেছেন বলে চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন। হৃদ্রোগ, ডায়াবেটিসসহ বিভিন্ন জটিলতা ছিল ম্যালকমের।

হালিমা বেগম বলেন, “খুব ভালো মনের মানুষ ছিলেন তিনি। আমার জন্য ইসলাম ধর্মও গ্রহণ করেছিলেন। অস্ট্রেলিয়ায় তার পরিবার রয়েছে। আমি তাকে অস্ট্রেলিয়ায় ফিরে যেতে বলতাম। কিন্তু ম্যালকম বলতেন, তুমি ছাড়া আমার খেয়াল কেউ রাখতে পারবে না। আমি এ দেশেই থাকবো। এমনকি মারা গেলেও এই দেশের মাটিতে আমাকে কবর দিও।

হালিমা আরও বলেন, “আমি অস্ট্রেলিয়ায় তার পরিবারের সঙ্গে কথা বলেছি। তারা বলেছেন, বাংলাদেশে তাকে দাফন করলে সমস্যা নেই। বিষয়টি থানা পুলিশকে জানিয়েছি। তারা অস্ট্রেলিয়া দূতাবাসকে জানিয়েছেন। সেখান থেকে অনুমতিও পেয়েছি। কিছু কাগজপত্র প্রয়োজন, সেগুলো সংগ্রহ করে রাতেই বসুপাড়া কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে।”

হালিমা বেগম জানান, প্রথম স্বামীর সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন হওয়ার পর তিনি মোংলায় ওয়ার্ল্ড ভিশনে কাজ করতেন। ২০০১ সালে ম্যালকম মোংলায় এলে তার সঙ্গে পরিচয় হয়। হালিমার বাড়ি বাগেরহাট জেলার রামপাল উপজেলার পেড়িখালি গ্রামে। পরে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়লে ম্যালকমকে চিঠি পাঠান। ২০০৩ সালে বাংলাদেশে এসে তার চিকিৎসা করান। এরপর ম্যালকম তাকে বিয়ের প্রস্তাব দিলে তিনি ইসলাম ধর্ম গ্রহণের কথা বলেন। ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে ২০০৪ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি তাকে বিয়ে করেন। ২০১৮ সালে প্রথম স্ট্রোকে আক্রান্ত হন। সেই থেকে ম্যালকম অসুস্থতার মধ্য দিয়ে সময় অতিবাহিত করছিলেন।
 

স্বদেশ বিভাগের আরো খবর

Link copied!