• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ১৬ মে, ২০২৪, ২ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ৭ জ্বিলকদ ১৪৪৫

চিকিৎসকের অবহেলায় শিশুর মৃত্যুর অভিযোগ


শরীয়তপুর প্রতিনিধি
প্রকাশিত: মার্চ ১৪, ২০২৪, ১২:০০ পিএম
চিকিৎসকের অবহেলায় শিশুর মৃত্যুর অভিযোগ
১০০ শয্য বিশিষ্ট সদর হাসপাতাল। ছবি : সংগৃহীত

শরীয়তপুরের ১০০ শয্য বিশিষ্ট সদর হাসপাতালে চিকিৎসকের অবহেলায় মুসাফির নামের চার মাস বয়সী এক শিশুর মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। বুধবার (১৩ মার্চ) রাত ৯টার দিকে সদর হাসপাতালে এ ঘটনা ঘটে।

মুসাফির শরীয়তপুর পৌর এলাকার ৩ নম্বর ওয়ার্ডের রাজিব শেখ ও রুবিনা দম্পতির ছেলে।

স্বজনদের অভিযোগ, গত দুই তিন দিন ধরে পেটে গ্যাস ও ঠাণ্ডাজনিত সমস্যায় ভুগছিল শিশু মুসাফির। পরে বুধবার দুপুরে শিশুটিকে সদর হাসপাতালে নিয়ে আসেন তার মা রুবিনা বেগম। এ সময় হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসকের দায়িত্ব পালন করছিলেন চিকিৎসক শরীফ-উর রহমান। শিশুটিকে ভর্তির পরে তরল জাতীয় একটি ওষুধ লিখে দেন তিনি। ওষুধটি খাওয়ানোর পরেও অবস্থার পরিবর্তন হয়নি শিশু মুসাফিরের। অবস্থা খারাপ দেখে মা রুবিনা বেগম ও স্বজনরা বেশ কয়েকবার চিকিৎসককে ডেকে আনতে যান। তবে চিকিৎসক শরীফ-উর রহমান বিষয়টি আমলে না নিয়ে নিচতলার জরুরি বিভাগ থেকে দ্বিতীয় তলার শিশু ওয়ার্ডে চিকিৎসা সেবা দিতে আসেননি।

এক পর্যায়ে কর্তব্যরত স্টাফ নার্স সীমা বৈদ্য ওয়ার্ডের আয়াকে পাঠান ডাক্তারকে ডেকে আনার জন্য, তাতেও তিনি আসেননি। পরে বাধ্য হয়ে চিকিৎসকে ডাকতে যান সিনিয়র স্টাফ নার্স সীমা বৈদ্য। তাতেও ডাক্তার আসেননি, পরে তিনি শিশুটির অক্সিজেন মাস্ক খুলে তার কাছে নিয়ে যেতে বলেন। শিশুটির অবস্থা তখন এতই খারাপ ছিল যে অক্সিজেন মাস্ক খুলে নিয়ে আসার কোনো অবস্থা দেখেননি সীমা বৈদ্য। পরে রাত ৯টার দিকে মারা যায় শিশু মুসাফির।

মুসাফিরের মা রুবিনা বেগম অভিযোগ করে বলেন, “আমার বাবু যখন অনেক অসুস্থ হয়ে পড়ে আমি নিচে অনেকবার দৌড়ে ডাক্তারকে ডাকতে যাই। তিনি আমাকে ধমক দিয়ে ওপরে পাঠিয়ে দিয়ে বলেন, আমি আসতেছি। কিন্তু ডাক্তার আর আসেননি। আজ যদি আমার বাবুটাকে চিকিৎসা দেওয়া হতো তাহলে বেঁচে থাকত।”

বাবা রাজিব শেখ বলেন, “ডাক্তারের অবহেলায় আমার বাচ্চা মারা গেছে। তাকে অনেকবার অনুরোধ করেছি বাবুকে দেখে যেতে। ওনি আসেননি। আজ আমি ডাক্তারের জন্য সন্তানহারা হয়ে গেলাম। আমার বাচ্চার মতো আর কারো বাচ্চা যেন এভাবে চিকিৎসকের অবহেলায় মারা না যায় আমাদের এটাই দাবি।”

চিকিৎসকের অবহেলার বিষয়টি সামনে এনে হাসপাতালে কর্তব্যরত সিনিয়র স্টাফ নার্স সীমা বৈদ্য বলেন, “শিশুটিকে প্রথমে আমি অক্সিজেন লাগিয়ে দিই। এরপর আমাকে বেশ কয়েকবার রোগীর লোক ডাকলে আমি বাচ্চাটাকে দেখে আসি। কিছুক্ষণ পর শিশুটির শ্বাসকষ্ট শুরু হলে ডাক্তারকে ডাকতে আমার ওয়ার্ড বয়কে দুবার নিচে পাঠিয়েছি। যখন বাচ্চাটির খারাপ অবস্থা ছিল তখন ডাক্তার আসলে হয়ত বাচ্চাটা বেঁচে থাকত।”

এ বিষয়ে সদর হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. শরীফ-উর রহমানকে মোবাইল ফোনে কল দিলে তিনি ঘটনারটি অস্বীকার করে বলেন, এমন অভিযোগ সত্য নয়।

তিনি বলেন, “আমাকে কেউ ডাকার জন্য আসেননি।”

এ দিকে ঘটনার তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়ার কথা জানালেন সদর হাসপাতালে আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) মিতু আক্তার। তিনি বলেন, “আমি ইতোমধ্যে এক শিশুর মৃত্যুর খবর পেয়েছি। আমরা বিষয়টি খতিয়ে দেখব। যদি ওই চিকিৎসকের অবহেলায় শিশুর মৃত্যু হয়, তাহলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
 

Link copied!