• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ১৬ মে, ২০২৪, ২ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ৭ জ্বিলকদ ১৪৪৫

ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে সাংবাদিকসহ শিক্ষার্থীদের পেটানোর অভিযোগ


রাজশাহী প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ২৩, ২০২৩, ০৫:১৯ পিএম
ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে সাংবাদিকসহ শিক্ষার্থীদের পেটানোর অভিযোগ

মিছিলে না যাওয়ায় রাজশাহী কলেজ হোস্টেলে সংবাদকর্মীসহ ৩০ জন শিক্ষার্থীকে মারধরের অভিযোগ পাওয়া গেছে।

বুধবার (২২ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় রাজশাহী কলেজ মুসলিম ছাত্রাবাসের ই ব্লক ও বি ব্লকে এ নির্যাতনের ঘটনা ঘটে।

এর আগে, মঙ্গলবার (২২ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় কলেজ হোস্টেলে মারপিটের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় রাজশাহী কলেজ রিপোর্টার্স ইউনিটির দুই সদস্য আহত হন।

নির্যাতনের শিকার গণমাধ্যমকর্মীরা হলেন কলেজের উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী নাজমুস সাকিব ও শরীফুল ইসলাম। তারা ক্যাম্পাস সাংবাদিক সংগঠন রাজশাহী কলেজ রিপোর্টার্স ইউনিটির (আরসিআরইউ) সদস্য।

হামলাকারীরা হলেন শাহরুখ, রাফি, ইমন, তরিকুল, রাজু, হাসান ও আহসান। তারা সবাই রাজশাহী কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি রাশিক দত্তের অনুসারী।

জানা গেছে, কলেজ ছাত্রাবাসে থাকা শিক্ষার্থীদের জোরপূর্বক মিছিল-মিটিং দলীয় কর্মসূচিতে নিয়ে যায় ছাত্রলীগ। যেতে না চাইলে মারধরসহ নানাভাবে হয়রানির শিকার হতে হয়। নির্যাতন করা হয় টর্চার সেলে। গুরুত্বপূর্ণ কাজ বা অসুস্থ থাকলেও ছাড় পান না শিক্ষার্থীরা। এ ছাড়া রয়েছে সিট বাণিজ্যের অভিযোগ।

মারধরের শিকার নাজমুস সাকিব বলেন, “ছাত্রলীগের কর্মীরা বিভিন্ন সময় তাদের দলীয় প্রোগ্রামে জোর করে সাধারণ শিক্ষার্থীদের নিয়ে যায়। মঙ্গলবার বিকেলে ছাত্রলীগের একটা প্রোগ্রামে যেতে হয়। সেখান থেকে ছাত্রলীগ নেতা রাফিকে (প্রোগ্রাম কনভেনর) মেডিকেলে যাওয়ার কথা বললে হোস্টেল ছেড়ে দিতে বলে। তাকে মানিয়ে আমি মেডিকেলে যাই। সেখান থেকে সন্ধ্যা ৬টায় হোস্টেলে ফিরলে ছাত্রলীগের শাহরুখ, রাজু, রাফি, হাসানসহ ৮ থেকে ১০ জন মিলে আমার রুমে ঢুকে মারধর করতে থাকে। তারা আমার মোবাইল ফোনসহ বেশ কিছু দামি জিনিসপত্র কেড়ে নেয়। একপর্যায়ে সব শিক্ষার্থীকে ব্লকে আটকে রেখে অশ্লীল ভাষায় গালাগালি করতে থাকে, অনেককে মারধরও করে। পরে সবাইকে ধাক্কা দিয়ে গণরুমে নিয়ে যায়। এককথায় হোস্টেলে আমাদের কোনো নিরাপত্তা নেই।”

ভুক্তভোগী শরিফুল ইসলাম বলেন, “সকাল সাড়ে ৯টায় বের হয়ে ব্যক্তিগত কাজে সারা দিন ব্যস্ত ছিলাম। সন্ধ্যায় রুমে ঢুকে নিউজ লিখছিলাম। এমন সময় হঠাৎ রাশিক দত্তের কর্মী শাহরুখ রুমে ঢুকে পড়ে। কিছু জিজ্ঞেস না করেই অতর্কিত মারতে থাকে। সাংবাদিক পরিচয় দিলে আরও মারতে শুরু করে। তার সঙ্গে আরও ছেলেরা এসে আমাকে মেরে রুম থেকে বের করে দেয়। বকাবকি ও ধাক্কাধাক্কি করে অন্য ব্লকে নিয়ে যায়। সেখানে আরও শিক্ষার্থীদের দেখি, যাদেরকে আটকে রেখেছে। পরে সবাইকে জোর করে নিয়ে যায় প্রোগ্রামে।”

এ বিষয়ে কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি রাশিক দত্ত বলেন, “ঘটনাটা আমি শুনেছি। আমার ছেলেরা এ ঘটনা করেছে। আমাদেরকেও তো রাজনীতি করতে হয়। বিভিন্ন সংগঠনের চার-পাঁচজন করে যদি ২০ জন ছেলে চলে যায়, তাহলে আমরা কীভাবে প্রোগ্রাম চালাব?  তবে এরপর থেকে এমন হবে না, তাদের সঙ্গে বসে সমঝোতা করে নেব।”

নগর ছাত্রলীগের সভাপতি ও রাজশাহী কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি নূর মোহাম্মদ সিয়াম বলেন, “ঘটনা শুনে আমিও বিব্রত। এর আগে আমরাও ছিলাম, এ রকম ঘটনা কখনো ঘটেনি। আমরা খুব আন্তরিকতার সঙ্গে ছিলাম। এখন তাদের সঙ্গে কথা বলে দেখি কী করা যায়।”

ছাত্রলীগের সাবেক কেন্দ্রীয় সহসভাপতি আনিকা ফারিয়া জামান অর্ণা বলেন, “আমি এ ব্যাপারে সব জেনে অ্যাকশন নেব। যারা রাজশাহী কলেজে পড়াশোনা করে তাদের টেককেয়ারের জন্যই তো তাদেরকে এ পর্যায়ে নিয়ে আসা। সুতরাং সেখানে যদি কোনোরকম অব্যবস্থাপনা ঘটে, সে বিষয়ে আমরা খতিয়ে দেখব।”

এ বিষয়ে কলেজ অধ্যক্ষ প্রফেসর মো. আব্দুল খালেক বলেন, “এর আগেও রাশিক নেতৃত্বে এসে একবার এমন ঘটনা ঘটিয়েছে, সেটা মোটামুটি একধরনের দফারফা হয়েছিল। আর সে এ রকম ঘটনা করবে না বলে আমাদের কাছে জানিয়েছিল। আবার হঠাৎ করে কেন এ ধরনের ঘটনা ঘটিয়েছে? তা শুনে আমরা বিব্রত। এ রকম ঘটনা যাতে আর না ঘটাতে পারে, সেভাবে আমরা ব্যবস্থা নেব। আমরা তাদের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানোর কথা ভাবছি, দেখি তারা কী বলেন। এ ছাড়া আমি রাশিক দত্তের সঙ্গে কথা বলে বিষয়টি দেখছি। কারা কারা এর সঙ্গে জড়িত আছে, সে বিষয়গুলো খতিয়ে দেখব। এটা শুধু সাংবাদিকদের সঙ্গে নয়, যদি সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গেও করত, তাহলেও আমরা ব্যবস্থা নিতাম। কারণ, এতে একটা কলেজের মান নিয়ে প্রশ্ন ওঠে।”

এর আগে ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে রিপোর্টার্স ইউনিটির কার্যালয়ে হামলা চালায় রাশিক দত্তের অনুসারী ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। দেড় বছর নেতৃত্বহীন থাকার পর গত বছরের ৬ সেপ্টেম্বর কলেজ ছাত্রলীগের নেতৃত্বে আসেন রাশিক দত্ত ও আশরাফুল ইসলাম জাফর। সম্প্রতি কলেজ হোস্টেলের কক্ষে মাদক সেবনের ভিডিও ভাইরাল হলে আলোচনায় আসেন রাশিক দত্ত। যা জাতীয় সংবাদমাধ্যমেও প্রচারিত হয়েছে। এ ছাড়া সালাম না দেওয়া, দেখে না দাঁড়ানো, মিছিলে না আসা, প্রোগ্রামে না যাওয়ার মতো তুচ্ছ ঘটনায় ক্যাম্পাসে ও হোস্টেলে একাধিক শিক্ষার্থীকে মারধর করেন বলে রাশিক ও তার অনুসারীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে। 

Link copied!