• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ২৬ আগস্ট, ২০২৫, ১০ ভাদ্র ১৪৩২, ২ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

অ্যাম্বুলেন্সচালক থেকে সফল মাল্টা চাষি হুমায়ুন


মো. জহিরুল ইসলাম, ঠাকুরগাঁও
প্রকাশিত: অক্টোবর ১৭, ২০২৩, ০২:৫১ পিএম
অ্যাম্বুলেন্সচালক থেকে সফল মাল্টা চাষি হুমায়ুন
মাল্টা চাষ করে সাফল্য পেয়েছেন হুমায়ুন কবির

ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা আখানগর ইউনিয়নের মহেশপুর গ্রামের হুমায়ুন কবির। পেশায় ছিলেন অ্যাম্বুলেন্স চালক। রোগী নিয়ে যেতেন দেশের বিভিন্ন জেলায়। একবার এক রোগী নিয়ে গিয়েছিলেন বরিশালে। সেখানে তার নজরে পড়ে এক মাল্টা বাগানের। সেই বাগান দেখেই তার ইচ্ছা জাগে মাল্টা চাষ করার। সে চিন্তাই বদলে দেয় হুমায়ুন কবিরের জীবন। তিনি এখন সফল এক মাল্টাচাষি।

বিভিন্ন জায়গা থেকে মাল্টা চারা সংগ্রহ করে জমি লিজ নিয়ে বাগান সৃজন করেন হুমায়ুন। অল্প কিছু গাছে মাল্টা থেকে ভালো আয় আসায় পর ১১ বিঘা জমি নিয়ে বাণিজ্যিক ভাবে মাল্টা বাগান করে ফেলেন। দুই বছরে ভালো ফলন পাওয়ায় ও লাভবান হওয়ায় মাল্টা বাগান আরও বড় করার আশা প্রকাশ করেন তিনি। বারি-১, ইন্ডিয়ান, পাকিস্তানি ও ভিয়েতনামের ইয়ালো জাতের মাল্টা রয়েছে হুমায়ুনের বাগানে।

হুমায়ুন কবির বলেন, “আমি বর্তমানে ১১ বিঘা জমিতে মাল্টা চাষ করেছি। গতবারের তুলনায় এ বছর বেশি ফলন হয়েছে। আশা করছি ৩/৪ লাখ টাকার মাল্টা বিক্রি করতে পারব।”

এই উদ্যোক্তা আরও বলেন, “ব্যক্তি উদ্যোগে বাগান করতে গিয়ে তেমন ধারণা না থাকায় প্রথম দিকে চারা নির্বাচন করতে আমাকে অসুবিধায় পড়তে হয়। তবে এখন ইউটিউব দেখে বাগানের পরিচর্যা করে ভালোই হয়েছে আমার। সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা পেলে কিংবা স্বল্প সুদে কৃষি ঋণ পেলে আগামীতে ৩০ বিঘা জমিতে মাল্টা চাষের পরিকল্পনা আছে।”

বাগানের ম্যানেজার দবিরুল ইসলাম বলেন, “বর্তমানে বাগানে গড়ে ৬/৭ জন শ্রমিক কাজ করেন। আমরা অক্টোবর-নভেম্বরের দিকে ফল হারভেস্টিং শুরু করবো। এখন বাগান পাহারা দিতে হচ্ছে ও নিয়মিত ফলের যত্ন নিতে হচ্ছে।”

বাগানের শ্রমিক ইন্তাজ আলী বলেন, “আমরা দিন হাজিরা হিসেবে এখানে কাজ করি। এই উপার্জনে আমাদের সংসার ভালোই চলে। বাগানের পরিধি আরও বৃদ্ধি করা গেলে অনেকের কর্মসংস্থান হবে।”

বাগান দেখতে আসা দর্শনার্থী খালেদ আল মাসুদ বলেন, “হুমায়ুন ভাইয়ের মাল্টার বাগানটা দেখতে এসেছি। দেখে ভালো লাগলো, ভবিষ্যতে আমিও মাল্টার বাগান করবো। বিদেশি ফল হলেও দেশে এই ফলের ভালোই চাহিদা রয়েছে। আর ফলনও খুব ভালোই হচ্ছে। তাই হুমায়ুন ভাইয়ের কাছে পরামর্শ ও চারা দুটোই নেওয়ার জন্য এসেছি।”

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সূত্র মতে, ঠাকুরগাঁও জেলায় ছোট-বড় মোট আট শর অধিক লেবু জাতীয় বাগান রয়েছে, যা মাল্টা এবং কমলা লেবু। ১০০ হেক্টরের অধিক জমিতে মাল্টা বা লেবু জাতীয় বাগানের চাষ হচ্ছে।

ঠাকুরগাঁও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কৃষিবিদ সিরাজুল ইসলাম বলেন, ঠাকুরগাঁওয়ের মাটি লেবু জাতীয় অর্থাৎ মাল্টা চাষের জন্য উপযোগী। সদর উপজেলা বাদে বাকি চারটি উপজেলায় লেবু জাতীয় প্রকল্পের আওতায় প্রান্তিক পর্যায়ের কৃষকদের মাঝে বিভিন্ন ধরনের কারিগরি সহায়তা, প্রশিক্ষণ ও চারা বিতরণ প্রকল্প বিদ্যমান। জেলার প্রতিটি ইউনিয়ন পর্যায়ের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা, উপজেলা কৃষি কর্মকর্তাসহ সকলেই নিরলস ভাবে চেষ্টা করে যাচ্ছেন এ ধরনের বাগান সম্প্রসারণের জন্য।

Link copied!