কয়েক দিনের টানা বৃষ্টি আর ভারতের উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে ফেনীর ফুলগাজী ও পরশুরামে মুহুরি ও কহুয়া নদীর বাঁধের তিনটি স্থান ভেঙে লোকালয় প্লাবিত হয়েছে। এতে মঙ্গলবার (৮ আগস্ট) অন্তত ২০টি গ্রাম বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়েছে। তবে পানি পরশুরাম পয়েন্টে বর্তমানে বিপৎসীমার ২৮ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তবে ভাঙা অংশ দিয়ে লোকালয়ে পানি প্রবেশ অব্যাহত রয়েছে। এতে নতুন নতুন এলাকায় পানি ছড়িয়ে পড়েছে।
মঙ্গলবার দুপুরে ফুলগাজী ও পরশুরামে ক্ষতিগ্রস্ত ও বানভাসি মানুষের ঘরবাড়ি পরিদর্শন ও ত্রাণসামগ্রী বাড়ি বাড়ি পৌঁছে দেন ফেনী-১ আসনের সংসদ সদস্য শিরীন আখতার।
এ সময় ফুলগাজী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আবদুল আলিম, নির্বাহী কর্মকর্তা তানিয়া ভূঞাসহ স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, আওয়ামী লীগ ও জাসদ নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
স্থানীয়রা জানান, ফেনীর ফুলগাজীর সদর ইউনিয়নের উত্তর বরইয়া, উত্তর দৌলতপুর গ্রামের বেড়িবাঁধের দুটি স্থানে এবং পরশুরামের চিথলিয়া ইউনিয়নের অলকা গ্রামে একটি স্থানে ভাঙনের কবলে পড়ে। এতে প্রায় ২০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।
ফুলগাজীর উত্তর বরইয়া, বণিকপাড়া, বিজয়পুর, কিসমত বিজয়পুর, বসন্তপুর, জগৎপুর এবং পরশুরামের পশ্চিম অলকা, পূর্ব অলকা, নোয়াপুর, অনন্তপুর, চিথলিয়া, ধনীকুন্ডা, রামপুর, রতনপুর, দুর্গাপুর,জয়পুর, ঘনিয়ামোডা, সাতকুচিয়াসহ বেশ কিছু গ্রামে বানের পানি ঢুকে পড়েছে। তলিয়ে গেছে আমনের কয়েক হাজার হেক্টর জমি। ভেসে যায় পুকুরের মাছ। ঝুঁকিতে রয়েছে ১২২ কিলোমিটারের বাঁধের বেশ কয়েকটি স্থান।
দৌলতপুর এলাকার মো. জামাল উদ্দিন জানান, চার পাঁচ দিনের বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের কারণে, মুহুরি নদীর দুই পাশে দুটি ভাঙনের সৃষ্টি হয়। এতে অনেক পুকুর পানির নিচে ডুবিয়ে গেছে, নষ্ট হয়েছে কৃষিজমি, আনুমানিক ৫০০ পরিবার পানিবন্দী।
মো. মোস্তফা নামে আরেকজন জানান, সোমবার ভোররাতে ঘরে পানি উঠে গেছে। রান্নাবান্না করা বন্ধ, ছোট ছোট বাচ্চা নিয়ে খুব কষ্ট হচ্ছে।
ফুলগাজী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. মাসুদ রানা জানান, এই পর্যন্ত উপজেলার প্রায় ৭০০ হেক্টর আমন ধান পানির নিচে নিমজ্জিত। যদি পানি নেমে যায় দু-এক দিনের মধ্যে তাহলে ফসলের তেমন কোনো ক্ষতি হবে না।
এ বিষয় পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপপ্রকৌশলী মো. আরিফুর রহমানের কাছে জানতে চাইলে তিনি জানান, কিছুদিনের টানা বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পানির কারণে মুহুরি ও কহুয়া নদীর তিনটি স্থানে ভাঙনের সৃষ্টি হয়েছে। বর্তমানে নদীর পানি বিপৎসীমার ২৮ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পানি নামার সঙ্গে সঙ্গে ভাঙন মেরামত করা হবে।