• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৩ মে, ২০২৫, ৯ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২, ২৪ জ্বিলকদ ১৪৪৬

নানা বিড়ম্বনার পর পাটচাষিদের মুখে হাসি


পাবনা প্রতিনিধি
প্রকাশিত: আগস্ট ২৩, ২০২২, ০৮:৩৮ এএম
নানা বিড়ম্বনার পর পাটচাষিদের মুখে হাসি

খাল-বিলে পানি না থাকায় পাবনার কৃষকরা এবার পাট জাগ নিয়ে ভোগান্তিতে পড়েছিলেন। কিন্তু সব হতাশা-সংকট কাটিয়ে মাসখানেক হলো কৃষকরা নতুন পাট ঘরে তুলছেন। দাম ভালো পাওয়ায় তাদের মুখে হাসি ফিরেছে।

জেলার আটঘরিয়া উপজেলার চকতারাপাশ গ্রামের কৃষক আবুল কাশেম এবার দুই বিঘা জমিতে পাট চাষ করেছিলেন। জমিতে সেচ ও জাগের পানি সংকট মোকাবিলা করেও তার জমিতে ১৩ মণ পাট উৎপাদন হয়েছে। শুরুতে তিনি প্রতি মণ বিক্রি করেছিলেন ৩ হাজার ২০০ টাকায়। বাজারে এখন প্রতি মণ পাট বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ৮০০ থেকে ৩ হাজার টাকায়। বাজারে দাম পাওয়ায় তার মতো খুশি অন্য পাটচাষিরাও।

জেলা সদরসহ ঈশ্বরদী, সুজানগর, বেড়া, সাঁথিয়া, চাটমোহর, ভাঙ্গুড়া ও ফরিদপুর উপজেলায় বেশ কয়েকজন পাটচাষির সঙ্গে আলাপকালে তারা বলেন, এবার পাটের আবাদ করতে গিয়ে নানাভাবে বিড়ম্বনায় পড়েছেন তারা। বৃষ্টির কারণে পাটের চারা ক্ষতিগ্রস্ত হয় আবাদের শুরুতেই। এছাড়া পাট কাটার সময় খরা পরিস্থিতির কারণে অন্যান্য বছরের মতো তারা পাটক্ষেতের কাছে পাট জাগ দিতে পারেননি। তিন থেকে পাঁচ কিলোমিটার দূরে নিয়ে গিয়ে পাট জাগ দিতে হয়েছে। এ জন্য প্রতি বিঘায় অতিরিক্ত খরচ গুনতে হয়েছে প্রায় সাড়ে চার হাজার টাকা। এ ছাড়া এবার পাট আবাদের পুরো মৌসুমে বেশি মজুরিতে শ্রমিক খাটাতে হয়েছে। গত বছর সাড়ে পাঁচশ থেকে ছয়শ টাকা দিন চুক্তিতে শ্রমিক পাওয়া গেলেও এবার তা বেড়ে সাড়ে ছয়শ থেকে সাতশ টাকা হয়েছে। এ ছাড়া বীজ, কীটনাশক, সারসহ চাষের অন্যান্য খরচও এবার বেড়েছে। ফলে পাট জাগ দেওয়াসহ সব খরচ মিলিয়ে গত বছরের চেয়ে এবার প্রায় ছয় হাজার টাকা বেশি খরচ হয়েছে। তা সত্ত্বেও পাটের আবাদে এবার প্রতি মণে সাতশ থেকে আট শ টাকা লাভ করায় খুশি তারা।

সদর উপজেলার হেমায়েতপুর গ্রামের কৃষক মানিক মিয়া বলেন, “পাটের রং ভালো হওয়ায় গত হাটে ৩ হাজার টাকা মণ দরে বিক্রি করেছি। পানি সংকটের কারণে তিন কিলোমিটার দূরে এক ডোবায় জাগ দিয়েছি। তাতে অনেক কষ্ট হয়েছে। দাম ভালো পাওয়ায় এখন আর সে কষ্ট মনে নেই।”

সাঁথিয়া উপজেলার তলট গ্রামের ইছামতী সেচখালে গিয়ে দেখা যায়, কৃষকেরা দল বেঁধে জাগ দেওয়া পাট থেকে আঁশ ছাড়াচ্ছেন। কেউবা আবার পাট ও পাটখড়ি শুকাচ্ছেন।

কৃষকরা জানান, দুই থেকে তিন কিলোমিটার দূরে তাদের পাটের ক্ষেত। অন্যান্য বছর পাটক্ষেতের পাশেই তারা পাট জাগ দিলেও এবার পানির অভাবে তারা ট্রলিতে করে পাট এই স্থানে এনে জাগ দিয়েছিলেন।

শ্রমিকদের সঙ্গে নিয়ে পাট ছাড়াচ্ছিলেন সাঁথিয়ার করমজা গ্রামের পাটচাষি আলম হোসেন। তিনি বলেন, “গতবারের চেয়ে এবার মণে সাত-আটশ টাকা বেশি খরচ হয়ে গেল। উৎপাদনও কিছুটা কম। তবে আশা, প্রতি মণে সাতশ-আটশ টাকা লাভ থাকবে।”

বেড়া উপজেলার জোড়দহ গ্রামের ফসলের মাঠে গিয়ে দেখা যায়, বিলের অল্প পানিতে পাট ছাড়াচ্ছেন শামীম। তিনি বলেন, এবার কাছে পানি না থাকায় দুই কিলোমিটার দূরে বিলে জাগ দিয়েছেন। পরিবহনে বাড়তি খরচ হলেও প্রতি মণে এক হাজার টাকার মতো লাভের আশা করছেন।  

বেড়া বাজারের পাট ব্যবসায়ী শামসুল হক বলেন, গত বছরের মতো এবারও পাটের ভালো দাম পাচ্ছেন চাষিরা। এমন দামে পাটচাষিরা বাজারে পাট বিক্রি করে খুশিমনেই বাড়ি ফিরে যাচ্ছেন।

জেলা কৃষি কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, এবার পাবনা জেলায়  ৪৫ হাজার ৫০ হেক্টর জমিতে পাটের আবাদ হয়েছে। আবাদ লক্ষ্যমাত্রা এটাই ছিল। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ১ লাখ ৫ হাজার ৪৬৪ টন।  তবে প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে ফলন কিছুটা কম হওয়ায় ও আবাদের খরচও বেড়ে যাওয়ায় কৃষকরা লাভ নিয়ে চিন্তিত ছিলেন। তবে শেষ পর্যন্ত বাজারে পাটের দাম ভালো হওয়ায় তারা লাভের দেখা পেয়েছেন।

পাবনা খামারবাড়ির সহকারী পরিচালক কৃষিবিদ ড. সাইফুল আলম জানান, খরা পরিস্থিতির কারণে শুরুতে কৃষকেরা পাট জাগ দিতে সমস্যায় পড়েছেন। তবে গত কয়েক দিন বৃষ্টি হওয়ায় এখন অনেকে জমির কাছেই পাট জাগ দিতে পারছেন। ইতোমধ্যে ৪২ হাজার ৮০৬ হেক্টর জমির পাট কাটা শেষ। দিন দশেকের মধ্যে বাকি জমির পাট কাটা শেষ হবে। এবার পাটের ফলন কিছুটা কম হলেও কৃষকেরা ভালো দাম পাচ্ছেন।

Link copied!