• ঢাকা
  • বুধবার, ০৪ জুন, ২০২৫, ২০ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২, ০৭ জ্বিলহজ্জ ১৪৪৬

‘তাহফিজ টুপি’ ভাইরাল


বগুড়া প্রতিনিধি
প্রকাশিত: এপ্রিল ১৫, ২০২২, ০৫:৫১ পিএম
‘তাহফিজ টুপি’ ভাইরাল

এখন রমযান মাস। এ মাসে মুসলমানরা কমবেশি সবাই মসজিদে নামাজ পড়েন, তাই বছরের অন্যান্য মাসের তুলনায় এ মাসে টুপি বিক্রি হয় সর্বাধিক। সামনেই আসছে ঈদ, পাঞ্জাবির পাশাপাশি অবশ্যই টুপি চাই। এরই মধ্যে আন্তর্জাতিক হিফজুল কোরআন প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশের প্রতিযোগী হাফেজ সালেহ আহমাদ তাকরীম একটি টুপি পড়ে অংশগ্রহণ করেন। তিনি প্রথম স্থান অর্জন করে বিশ্ব মানচিত্রে বাংলাদেশের সুনাম বয়ে এনেছেন। এরপর থেকে ‘তাহফিজ টুপি’ নামে সেই টুপিটি ভাইরাল হয়ে যায়। বাজারে প্রচুর চাহিদা বেড়ে যায়।

যেভাবে তৈরি হয় টুপি

গ্রামের বধূরা ঘরের কাজ শেষ করে অবসর সময়ে নানা সুখ-দুঃখের আলাপচারিতা আর জমানো গল্পের আসরেই চলে তাদের রকমারি হাতের কাজ। ওদেরই নিপুণ হাতের ছোঁয়া আর সুতা ও ক্রুশ কাটা এই দুয়ের মিলিত বন্ধনেই তৈরি হচ্ছে রং-বেরংয়ের টুপি। এদের পাশাপাশি শিক্ষার্থীরা নিজের হাত খরচ জমাতেও তৈরি করছে টুপি। এতে মাসে তাদের ১৫শ’ থেকে ৩ হাজার টাকা পর্যন্ত এক একজন আয় করেন।

জানা যায়, বগুড়ার শেরপুরের কাশিয়াবালা, তালপুকুরিয়া, চকধলী, জয়লা-জুয়ান, জয়লা-আলাদি, কল্যাণী, চক-কল্যাণী ও গুয়াগাছী এবং ধুনটের বোহালগাছা, চৌকিবাড়ি, ফড়িংহাটা, কুড়হা-হাটা, বিশ্বহরিগাছা, চাঁনদার, ভূবনগাতি, চালাপাড়া, পাঁচথুপি, থেউকান্দি ও বাটিকাবাড়িসহ এই দুই উপজেলায় ৬০০ পরিবার টুপি শিল্পের সঙ্গে জড়িত।

ব্যাপারি রাজু আকন্দ জানান, অনেক নারী এ পেশার সঙ্গে জড়িত। প্রতিবারের মতো এবারও ঈদকে সামনে রেখে এ পেশায় আরও কয়েক হাজার নারী-পুরুষের আগমন ঘটেছে। টুপি দেশের সীমানা পেরিয়ে সৌদি আরব, পাকিস্থান, দুবাই, কাতার, ভারতসহ মুসলিম সকল দেশেই প্রায় রপ্তানি হচ্ছে। বেশ কয়েকটি দেশে সুনাম কুড়িয়েছে জালি টুপি। এই সকল টুপি তৈরির সঙ্গে জরিত ৫ লক্ষাধিক নারী শ্রমিক ও শিক্ষার্থী এবং প্রায় ২০০ ব্যাপারি।

এই জালি টুপি থেকে প্রায় ৫০ কোটি টাকা বৈদেশিক অর্থ আয় হয়। সেই সঙ্গে ওদের ভাগ্যের সঙ্গে দেশীয় অর্থনীতির চাকাও বেশ জোরেশোরেই ঘুরে। কিন্তু এ বছর সুতার দাম বেশি থাকায় চাহিদামত উৎপাদন হচ্ছে না টুপি।

খানপুর ইউনিয়নের তালপুকুরিয়া গ্রামের শানু খাতুন, আলেয়া ও মর্জিনা বিবি জানান, তারা জন্মের পর থেকেই নিজেকে টুপি বানানোর পেশার সঙ্গে যুক্ত। তাদের মতে, বাড়িতে কর্মহীন হয়ে বসে থাকার চেয়ে কিছু একটা করাই ভালো। এমন ভাবনা এবং বংশীয় ঐতিহ্যকে ধারণ করতেই অনেকেই টুপি তৈরির শিল্পের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছেন।

ছাতিয়ানি উচ্চ বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণীর মিম সুলতানাসহ সাবিনা ইয়াসমিন, সুর্বনা ও শিউলি জানান, তারা স্কুলে লেখাপড়ার পাশাপাশি টুপি তৈরি করে। দিনে ১টি করে টুপি তৈরি করে। সেই টুপি ২৫ টাকায় বিক্রয় করা হয়। তারা আরও জানান, ৭৫ টাকার সুতা দিয়ে ৮ থেকে ৯টি টুপি তৈরি হয়। আগে যে সুতার দাম ছিল ৬০ টাকা এখন সেই সুতা ৭৫টাকায় ক্রয় করতে হচ্ছে তাদের।

ব্যাপারি মো. সোহাগ জানান, ঠিকমত কাজ করলে দিনে সর্বোচ্চ ৩/৪টি টুপি তৈরি সম্ভব। ৭০ টাকায় সুতা কিনে ১২টি টুপি তৈরি করা যায়, যার দাম ৪০০ টাকা। ব্যাপারিরা বাড়িতে গিয়ে সুতার ববিন দিয়ে আসেন এবং টুপি তৈরি শেষ হলে নিজেরাই খরিদ করে থাকেন। ওইসব রকমারি টুপি বিভিন্ন মুসলিম দেশে বিক্রি হয়।

বাংলাদেশ জালি টুপি অ্যাসেসিয়েশনের বগুড়া জেলা শাখার সভাপতি জুয়েল আকন্দ বলেন, “প্রতি বছর প্রায় আমরা ৫০ কোটি টাকার অধিক বৈদেশিক মুদ্রা দেশে আনি। করোনার কারণে ব্যবসা থমে গেলেও এবার “তাহফিজ টুপি” প্রচুর চাহিদা বাজারে। আমরা এর চাহিদা মেটাতে পারছি না। তবে আমরা সরকার থেকে কোনো অনুদান বা কোনো সহযোগিতাও পায় না। এই শিল্পকে টিকে রাখতে হলে সরকারকে পাশে দাঁড়াতে হবে। তাছাড়া এই শিল্প ধ্বংস হবে। কোটি কোটি টাকা প্রতি বছর রাজস্ব খাত হতে বঞ্চিত হবে।”

 

Link copied!