• ঢাকা
  • বুধবার, ২৬ মার্চ, ২০২৫, ১২ চৈত্র ১৪৩০, ২৫ রমজান ১৪৪৬

অপরিকল্পিত সেতুর ছড়াছড়ি


পাবনা প্রতিনিধি
প্রকাশিত: অক্টোবর ৭, ২০২১, ০৯:১৪ এএম
অপরিকল্পিত সেতুর ছড়াছড়ি

পাবনায় অপরিকল্পিত সেতুর ছড়াছড়ি। বিলের মধ্যে, মাঠের মধ্যে, সংযোগ ছাড়াই নির্মাণ করা হয়েছে সেতু। মানুষ পারাপার হতে না পারলেও খড়ের পালা দেওয়া বা পাটকাঠি শুকানোর কাজে ব্যবহার করছেন এলাকাবাসী।

এই সেতুগুলো উপকারের পরিবর্তে দুর্ভোগের সৃষ্টি করেছে। অন্যদিকে অপরিকল্পিত এই সেতুগুলো নির্মাণের নামে যেনতেন কাজ করে দুর্নীতির আশ্রয় নেওয়া হয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, জেলার চাটমোহর উপজেলার সোনাহারপাড়া গ্রামের খলিশাগাড়ি বিল। গ্রাম থেকে এ বিলে যাতায়াতের রাস্তা নেই বললেই চলে। অথচ বিলের শেষ মাথায় কোনো প্রয়োজন না থাকলেও নির্মাণ করা হয়েছে একটি সেতু। ব্রিজের উত্তরপাশে নেই যাওয়ার কোনো রাস্তা বা কোনো গ্রাম। ২০১৬-১৭ অর্থ বছরে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের সেতু ও কালভার্ট কর্মসূচির অধীনে এই সেতুটি নির্মাণে ব্যয় দেখানো হয়েছে ৩২ লাখ ৫২ হাজার টাকা।

স্থানীয় কয়েকজনের সঙ্গে আলাপকালে তারা বলেন, গ্রামে ও বিলে যাতায়াতের জন্য প্রয়োজন রাস্তার। কিন্তু সেই রাস্তা না করে উল্টো সেতু করে সরকারি অর্থের অপচয় করা হয়েছে। সেতুটি মানুষের কোনো উপকারেই আসছে না।

এদিকে অবস্থা উপজেলার সিংগা খালের উপর ২১ লাখ ৩৫ হাজার টাকা ব্যয়ে ২০১৫-১৬ অর্থ বছরে একটি সেতু নির্মাণ করা হয়েছে। প্রয়োজনীয় সংযোগ সড়ক না থাকাই কোনো উপকারে আসছে না এই সেতুটি। 

অপরদিকে, নিমাইচড়া গ্রামে সেতু নির্মাণ হলেও সংযোগ সড়কের বেহাল দশায় কষ্ট বেড়েছে মানুষের। উঁচু খাড়া সেতুতে উঠতে নামতে নাভিশ্বাস ওঠে বয়স্ক ও শিশুদের। একই চিত্র জেলার ফরিদপুর উপজেলার বেড়হাউলিয়া গ্রামের পশ্চিমপাড়া খালের উপর নির্মিত সেতুটির। বর্ষা মৌসুমে সংযোগ সড়ক পানিতে তলিয়ে থাকে। সেতুর উপর বসানো হয়েছে খড়ের পালা।

শুধু চাটমোহর বা ফরিদপুর উপজেলাতেই না, এ রকম অসংখ্য সেতু রয়েছে জেলার সুজানগরসহ বিভিন্ন উপজেলার গ্রামীণ জনপথে। এসব সেতু উপকারের পরিবর্তে উল্টো দুর্ভোগ বাড়িয়েছে এলাকাবাসীর।

অভিযোগ, এসব সেতু নির্মাণ কাজও করা হয়েছে নিম্নমানের। এলাকাবাসী বাধা দিলেও তোয়াক্কা করেনি ঠিকাদাররা। ঠিকাদারের সঙ্গে প্রশাসনের কিছু অসাধু কর্মকর্তা যোগসাজশে এসব অপ্রয়োজনীয় ব্রিজ নির্মাণ করে সরকারি অর্থের লুটপাট চলছে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।

অপরিকল্পিত সেতু সম্পর্কে পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের চেয়ারম্যান সোহেল রানা বলেন, কোনো পরিকল্পনা না করেই প্রকল্পের শেষ পর্যায় এসে পকেট ভারি করতেই তড়িঘরি করে অপরিকল্পিতভাবে সেতুগুলো নির্মাণ করা হয়েছে। সঠিক পরিকল্পনার মধ্যদিয়ে সেতুগুলো নির্মাণ করা হলে মানুষের কাজে লাগতো এবং সরকারি টাকা অপচয় হতো না।

জেলা প্রশাসক বিশ্বাস রাসেল হোসেন বলেন, সেতু নির্মাণ হলেও প্রয়োজনীয় সংযোগ সড়ক নেই এ ধরনের কোনো তথ্য আমার জানা নেই। তবে এ ধরনের কোনো সেতু থাকলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
 

Link copied!