• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

জেনে নিন বিটকয়েন কী?


আসিফ রহমান সৈকত
প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২৭, ২০২১, ০৮:১২ পিএম
জেনে নিন বিটকয়েন কী?

গুগলে 'বিটকয়েন' লিখে যদি বিষয়টি বুঝতে চান তাহলে আপনার চোখ ছানাবড়া হলেও হতে পারে। একটি বিটকয়েনের মূল্যমান নাকি ৩৭ লক্ষ টাকারও বেশি!

ভাবছেন, এ আবার কোন দেশের মুদ্রা? এতো তেজ! আরেকটু ঘাটলেই বুঝবেন একে  হাতে ধরা যায় না। এই মুদ্রা ডিজিটাল মুদ্রা।

আমরা জানি ক্রেডিট কার্ডে কেনাকাটা করা যায়। ক্রেডিট কার্ড তো টাকা না। সে টাকার প্রতিনিধি। ক্রেডিট কার্ড থাকলে টাকা সাথে করে নিয়ে ঘুরতে হয় না। সফটওয়ার সিস্টেমে অর্থ লেনদেন হয়ে যায়। ক্রেডিট কার্ড তাও হাতে ধরা যায়, বিটকয়েনকে কিন্তু স্পর্শও করা যায় না। তার নিজেরও কোনো অস্তিত্ব নেই “কঠিন” পদার্থ হিসাবে। এটা তরল না, বায়বীয়ও না। এটি শতভাগ ডিজিটাল। আপনি শুধু জানবেন অর্থ আছে। আর এটাকে সুরক্ষা দিচ্ছে শক্তিশালী সুপার কম্পিউটারের এক জগত।

হোন্ডা যেমন মোটরসাইকেলের একটি নামকরা ব্র্যান্ড। কাগজের নোটের যেমন বিভিন্ন দেশের মুদ্রা হয়:  টাকা, রুপী, ডলার, পাউন্ড ইত্যাদি। তেমনি বিটকয়েন আসলে ক্রিপ্টোকারেন্সির একটি প্রকার।

তবে, এ বছরের হিসাব অনুযায়ী, ক্রিপ্টোকারেন্সি মার্কেটের ৬৫ শতাংশের বেশি বিটকয়েনের দখলে। আর এ কারণেই সবাই বিটকয়েনকেই চেনে বেশি। 

 

লেনদেনে থাকে না তৃতীয় পক্ষ

বিটকয়েন এক ধরনের সম্পদ। লেনদেনের উপায়। যেটা মুদ্রা ব্যবস্থা, কাগজের নোট আসার পরের নতুন ধারণা । অনেকেই মনে করেন বিটকয়েন আসল মুদ্রাকে পুরোপুরি সরিয়ে দেবে না। একসাথেই থাকবে বা চলবে। আমাদের টাকা পয়সার লেনদেনের মাঝে কোনো না কোনোভাবে ব্যাংক থাকে, অনেক সিস্টেম জড়িত থাকে। কিন্তু বিটকয়েন সরাসরি মানুষ থেকে মানুষে লেনদেন হয়। এখানে ব্যাংক থাকে না মাঝখানে। থাকে না তৃতীয়পক্ষের নজরদারি। এর ভালো দিক হলো খুব অল্প সময়ে পৃথিবীর যেকোন প্রান্তে লেনদেন করা যায় অনায়াসে।

আর বিটকয়েনের খারাপ দিক হলো আপনি যদি ভুলে কাউকে বিটকয়েন ট্রান্সফার করে দেন, তাহলে সেটা আর ফেরত পাবেন না। কারণ ব্যংক আগে জানতো টাকাটা কাকে দিচ্ছেন, অর্থাৎ কার হিসাবে ঢুকছে। কিন্তু বিটকয়েন চেনে শুধু নাম্বার। কে পাচ্ছে সেটা তো সে জানে না। এখানে পাসওয়ার্ড ভুলে গেলে বড় ধরনের লোকসানের মুখে পড়তে পারেন আপনি। আর হ্যাকিংয়ের ঝুঁকি তো থাকছেই। 

আগেই বলেছি, বিটকয়েনের মতো  ডিজিটাল কারেন্সির উপর কোনো ব্যংক বা সরকারী প্রতিষ্ঠানের নিয়ন্ত্রণ নেই। পিয়ার-টু-পিয়ার সফটওয়ার সিস্টেম এবং ক্রিপ্টোগ্রাফির উপর ভর করে এটি চলে।

 

নাম কেন ক্রিপ্টোকারেন্সি

সারা পৃথিবীতে অনেকগুলো সার্ভারে একটি পাবলিক লেজারের মাধ্যমে বিটকয়েনের লেনদেনগুলো লিপিবদ্ধ করা হয় এবং সেগুলোর কপি করে রাখা হয়। ক্রিপ্টোগ্রাফি কথাটা হয়তো শুনেছেন , এটি এসেছে এনক্রিপ্ট (encrypt) থেকে। এটার মানে হলো আমি আপনাকে একটা কথা বললাম এবং আপনাকেই শুধু জানালাম কিভাবে আপনি কথাটা বুঝতে পারবেন। তাই শুধু আপনিই সেই কথার মূল অর্থ বুঝতে পারবেন। আর কেউ পারবে না। যে চাবিকাঠি দিয়ে কথাটি  গোপন করা হয় তাকে বলে 'এনক্রিপশন কি'। এই 'কি' বা চাবিটা সবাই জানবে না। এই চাবিটা পাঠাবে প্রেরক, আর পাঠক ওই চাবি দিয়ে তালা খুলে বুঝে নেবে বার্তা। বিটকয়েন খুব গোপনীয়তা ও নিরাপত্তা বলয়ের ভেতর দিয়ে একজনের কাছ থেকে আরেকজনের কাছে যায়, সেখানে উঁচুস্তরের ক্রিপ্টোগ্রাফি ব্যবহার হয়, আর এজন্যই বিটকয়েনের জেনেরিক নাম হচ্ছে ক্রিপ্টোকারেন্সি। এনক্রিপশন করা কারেন্সি বা মুদ্রা।

 

বিটকয়েন থেকে টাকায় রূপান্তর

আপনি চাইলে কিন্তু আপনার বিটকয়েন কারন্সিকে কাগজের মুদ্রায় রূপান্তর করতে পারবেন। সেটারও একটা প্রক্রিয়া আছে। 

বিটকয়েন পৃথিবীর প্রথম বা একমাত্র ক্রিপ্টোকারেন্সি নয়। এখন তো পাঁচ হাজারেরও বেশি ক্রিপ্টোকারেন্সি আছে। কিন্তু বড়ো বাজারটা বিটকয়েনের। বিটকয়েনের আবিষ্কারক সাতোসি নাকামোতো এর প্রয়োজনীয়তা বোঝাতে বলেন, "এটা একটি ইলেকট্রনিক পেমেন্ট সিস্টেম যা বিশ্বাসের উপর নির্ভর করে না (জানেন তো, ডলারে লেখা থাকে, ইন গড উই ট্রাস্ট, যে খোদাকে আমরা বিশ্বাস করি), নির্ভর করে ক্রিপ্টোগ্রাফিক অনুমোদনের উপর।”

পুরো লেনদেনের তথ্য একটা পাবলিক লেজারে থাকে যেটা সবাই দেখতে পারে। আর এখানে লেনদন “হ্যাঁ” করে পরে “না” করা যায় না। ভূয়া লেনদেনেরও সুযোগ নেই। কোনো সরকার বিটকয়েনের সুরক্ষা দেয় না। সার্ভারের ডিজিটাল  সিস্টেমের প্রমাণের উপর ভিত্তি করে এটি চলে। 

 

বিটকয়েন ইচ্ছানুযায়ী ছাপানো যায় না

বিটকয়েনের আরেকটা মজার ব্যপার হলো এটার সংখ্যা কিন্তু নির্দিষ্ট: ২১মিলিয়ন। ২ কোটি ১০ লক্ষ। বেশিও না, কমও না। কিন্তু আপনি যদি পৃথিবীর বিভিন্ন কেন্দ্রীয় ব্যাংকে খোঁজ করেন, দেখবেন, অর্থের পরিমাণ কিন্তু স্থির না, বাড়ছেই। যে কোন দেশ চাইলে যে কোন পরিমাণ মুদ্রা ছাপাতে পারে। তাতে কি সমস্যা বা সুবিধা হবে সেটা আলাদা আলোচনা, কিন্তু সেটা তারা পারে। বিটকয়েনে সেটা হয় না। ২১ মিলিয়নেই সে স্থির। তাই এটার মান শুধু বাড়তেই থাকবে বলে অনেকে মনে করেন। একটি বিটকয়েনের মূল্য একসময় ছিল ১৫০ ডলার। সেটা বেড়ে ৫০ হাজার ডলারও ছুঁয়েছে। 

 

আগামীর বিশ্ব

এখন বিশ্ব ডিজিটাল।  মুদ্রার লেনদেনও পুরোপুরি ডিজিটাল হয়ে যাবে একসময়। ক্রিপ্টোকারেন্সির দিকে তাই লক্ষ্য রাখছে অনেকেই। পৃথিবী ভয়াবহ দ্রুত গতিতে পরিবর্তন হচ্ছে। এক জীবনে এতো কিছুর পরিবর্তন, আগে কখনো মানুষ দেখেনি। গত বিশ বছরে সেটা আরো ভয়াবহ, অভাবনীয় গতিতে হয়েছে। যত দিন যাবে ক্রিপ্টোকারেন্সি বিটকয়েন নিয়ে আলোচনাও জোরদার হবে বলে ধারণা করা যায়।

Link copied!