আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ‘অরাজনৈতিক’ বলেছেন। রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলা করার কোনো ইচ্ছা তাদের নেই। কিন্তু তারা কীভাবে মোকাবিলা করছেন? সরকার আসলে এ আন্দোলনকে কোনোভাবেই থামানোর চেষ্টা করছে না। কোনো কোনো ক্ষেত্রে এ আন্দোলনকে উসকে দিচ্ছে। অবশ্য মাঝে মাঝে পুলিশ প্রশাসনের হুমকিধামকি দেখা যাচ্ছে, তাও সেটা এতটুকুই। তা না হলে পুলিশের বিনা বাধায় কোটা আন্দোলনকারীরা বঙ্গভবনের কাছাকাছি গণপদযাত্রা নিয়ে যেতে পারত না। এটা যে একধরনের আইওয়াশ, সাধারণ মানুষ তা বুঝতে পেরেছে, যার ফলে তাদের মধ্যে কোনো ধরনের আগ্রহ এক্ষেত্রে নেই। এটা আসলে ‘ইস্যু দিয়ে ইস্যু শিকার মারা’র সরকারের একটা পুরনো খেলা। তা না হলে যুক্তি ও ভবিষ্যতের কথা ভাবলে খুব সহজেই, অনেক আগেই এই সংকটের সমাধান হয়ে যেত।
সমাধান প্রধানত সরকারের হাতে। ২০১৮ সালে সরকার কোটা আন্দোলনকারীদের আন্দোলনের মুখে কোটাব্যবস্থাই তুলে দিয়েছিল। এটি ভালো সমাধান ছিল না, কোটা আন্দোলনকারীরাও এ রকম কিছু চায়নি, চেয়েছিল কোটাব্যবস্থার সংস্কার। এই সংস্কার সংবিধানের আলোকে করতে হলে আমাদের নির্মোহভাবে সংবিধানের ২৮ ও ২৯ অনুচ্ছেদ বুঝতে হবে। ২৮ অনুচ্ছেদে সার্বিকভাবে সাম্য ও বৈষম্যহীনতার কথা বলা আছে। ২৯ অনুচ্ছেদে নির্দিষ্টভাবে সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে বৈষম্য করা যাবে না বলা আছে।
দুটো অনুচ্ছেদেই বৈষম্যহীনতা মূলনীতি, তবে পৃথিবীর অন্য বহু সংবিধানের মতো এখানেও কিছু ব্যতিক্রমকে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে সরকার মনে করলে অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর জন্য বিশেষ ব্যবস্থা (যেমন কোটা) করতে পারবে বলা আছে। ২৯ এবং ২৮ অনুচ্ছেদ অনুসারে কোটার ব্যবস্থা করা তাই বাঞ্ছনীয়, কিন্তু বাধ্যতামূলক নয়।
অতিকথন প্রধানমন্ত্রীর স্বভাবজাত। সঙ্গে অতি আত্মবিশ্বাস ও অহমিকা। তবে চীন সফর নিয়ে করা সংবাদ সম্মেলনে তিনি যা বলেছেন, তার জন্য প্রশ্নকারীদের উসকানি ছিল। আশার কথা, রাতের সেই বিভৎস স্লোগান সংশোধন হয়েছে। আরও সুনির্দিষ্ট হয়েছে। ছাত্ররাই ভুল শুধরে নিয়েছে। তবে শুরু হয়েছে স্লোগান নিয়ে বিতর্ক। পুরো বিতর্কটাই বিভ্রান্তির ওপর দাঁড়িয়ে করা হচ্ছে। পুরো স্লোগান হলো—‘আমি কে তুমি কে রাজাকার রাজাকার/বলছে কে বলছে কে, স্বৈরাচার স্বৈরাচার’। প্রথমটা আবেগের স্লোগান।
প্রত্যেকটি আন্দোলনে একটি আবেগ থাকে। আমরা যখন আন্দোলনে ছিলাম, তখনো আমাদের ভেতরে চরম আবেগ ছিল। কিন্তু যিনি স্লোগানটা দিয়েছেন তিনি বোঝেননি, এর খণ্ডাংশ তাদের বিরুদ্ধেই অস্ত্র হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে। নিজেদেরকে ‘রাজাকার’ বলে শিক্ষার্থীরা নিজেদেরকে সাফাই দিয়েছেন,এটা আমাদের জন্য চরম লজ্জার। আমি মনে করি এটা আত্মপরিচয়ের আত্মঘাতি। প্রধানমন্ত্রী এ আলোচনাটা উসকে দিয়েছেন, আবার তিনিই বলেছেন, “রোকেয়া হলের মেয়েদের মুখে ‘রাজাকার’ স্লোগান, দুঃখ লাগে। তারা কী শিক্ষা পেল। তারা কি জানে, ২৫ মার্চ কী হয়েছিল। এসব তারা দেখেনি। তাই তারা রাজাকার পরিচয় দিতে গর্ববোধ করে।” (সংবাদ প্রকাশ)
অপর দিকে ‘তুমি কে আমি কে বাঙালি বাঙালি’ স্লোগানটাও সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। কেননা বাংলাদেশের আর জাতিগোষ্ঠীর তবে কী হবে? চাকমা, মারমা, খাসিয়া, নকমান্দি এরা সব বাঙালি? একদিকে অভিমান, অপরদিকে জাত্যাভিমান। অথচ সমাধান যুক্তি উপস্থাপন ও তাকে মেনে নেওয়ার ভেতর রয়েছে। অযথা এই আন্দোলন দীর্ঘ করা হচ্ছে। এখন এটি ‘অযথা’ না ‘যথাযথ’ তা অবশ্য সময় গড়ালে স্পষ্ট হবে আরও।
প্রতিটি বৃহত্তর আন্দোলনে নানা ধরনের অনুপ্রবেশ ঘটে। চলমান এ আন্দোলনও ব্যতিক্রম নয়। মূলধারার ছাত্র সংগঠনগুলোর সক্রিয় নেতৃত্বের ঘাটতি যেমন চোখে পড়ছে, তেমনি সাম্প্রদায়িক সংগঠনের উপস্থিতিও বোঝা যাচ্ছে। আবার আন্দোলনকে বিতর্কিত করতে সরকারি-বেসরকারি নানা মহলের উসকানিও অসম্ভব নয়। কোটার হার যৌক্তিক সংস্কারে সবাই প্রায় একমত। উচ্চ আদালতের সিদ্ধান্তের দোহাই না দিয়ে সরকারের উচিত দ্রুত কার্যকর সিদ্ধান্ত নেওয়া। যত বেশি সময়ক্ষেপণ হবে, ততই আন্দোলন ভিন্নখাতে নেওয়ার প্রচেষ্টাও জোরাল হবে। তবে গণজাগরণ মঞ্চের অভিজ্ঞতায় বলা যায়, মুক্তিযুদ্ধ ও দেশপ্রেমে তরুণ প্রজন্মের অবস্থান সুস্পষ্ট। মুক্তিযুদ্ধ বা মুক্তিযোদ্ধাদের অসম্মান করে দেওয়া কোনো স্লোগান বা বক্তব্য দিয়ে কেউ হালে পানি পাবে না।
কোটা সংস্কার দেশের বেশির ভাগ মানুষ যৌক্তিক মনে করেন। অথচ সংস্কার চাইতে আন্দোলনকারীরা প্রথমে মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধাদের বিষোধগার করল। তবে মনে রাখা দরকার প্রতিটি আন্দোলনের গতিপথ নির্ধারিত হয় তার বক্তব্যের ওপর। রোকেয়া ছাত্রী হলে লাইট বন্ধ করে কেন ও কারা বিতর্কিত স্লোগান দিল আর রাজু ভাস্কর্যে এসে স্লোগান পাল্টে গেল! আন্দোলনের সকলের মতলব জানি না,অনেকেরই হয়তো স্পষ্ট ধারণা না থাকার কারণে আন্দোলনে যোগ দিয়েছেন। কেউ কেউ গণতন্ত্রের সংগ্রামের অংশ বিবেচনা করে সরকারবিরোধী আন্দোলনে যোগ দিয়েছে। কিন্তু এই আন্দোলনের নেতৃত্বে কিছু চরিত্রকে দেখেছি,ওরা কি মুক্তিযুদ্ধের গৌরবকে ম্লান করার উদ্দেশ্যে আন্দোলনটা টেনে নিচ্ছে?
দুই। 
আগেই বলেছি,কোটা সংস্কার আন্দোলনকে আমি যৌক্তিক মনে করি। কিন্তু এ আন্দোলনটা কী আন্দোলন,না অন্য কিছু। যার সঙ্গে কোনো রাজনৈতিক দলের সংশ্লিষ্টতা নেই। একটি আন্দোলনে যখন রাজনৈতিক লক্ষ্য না থাকে রাজনৈতিকশূন্যতা থাকে, সেখানে তখন আন্দোলনের ভবিষ্যৎ নিয়ে যথেষ্ট দ্বিধা থাকে আছে। সরকার প্রথম দিকে বিএনপিকে দোষারোপ দিয়েছে। বিএনপি সেই জায়গায় খুব কৌশলগতভাবে নীরব অবস্থানে থাকার চেষ্টা করলেও শেষ অবধি পারেনি। তবে যে যাই বলুক, ‘তুই রাজাকার’ থেকে ‘আমি রাজাকার’, সরকারবিরোধী রাজনীতির বাঁকবদলের দিকে যাচ্ছে যেখানে রাজনীতি প্রকৃত অর্থে ভয়ঙ্করভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। ২০১৮ সালে যখন এ আন্দোলনটি শুরু হয়, তখন একটা স্লোগান দেওয়া হলো, ‘রাষ্ট্রের মেরামত চলছে’। খুব জনপ্রিয় হয়েছিল সে স্লোগান। কিন্তু এ স্লোগানটির আড়ালে মূলত বিরাজনীতিকরণের প্রক্রিয়া আরও জোরালো হয়েছে,আমাদের মূলধারার রাজনৈতিক শক্তিকে রীতিমতো প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। তখন থেকে রাজনীতির প্রতি মানুষের ন্যুনতম আশা নিভে গেছে।
তিন।
দেশজুড়ে যে অস্থিরতা তৈরি হয়েছে, নানা কারণেই তা ঘটনাবহুল। সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের একে একে দুর্নীতির ঘটনা ফাঁস হওয়া,বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের পেনশন স্কিম নিয়ে ধর্মঘট, সরকারি চাকরিতে কোটা নিয়ে ছাত্রদের আন্দোলন, বিসিএসসহ বিভিন্ন সরকারি চাকরিতে প্রশ্নপত্র ফাঁসের কেলেংকারি; সবকিছু মিলিয়ে যেন তালগোল পাকিয়ে গেছে। 
যতই দিন যাচ্ছে,ততই দুর্নীতিতে নিমজ্জিত একটি দেশের সামগ্রিক চিত্র নির্লজ্জভাবে প্রকাশিত হচ্ছে। প্রজাতন্ত্রের সেবক হিসেবে নিয়োগ পাওয়া সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অর্থ কেলেংকারী,অর্থ পাচারসহ নানা ধরনের অপকর্মের খবর নিয়মিত প্রকাশিত হচ্ছে। এসব দেখেশুনে সাধারণ মানুষদের সরকারি চাকরির প্রতি বিমুখ হওয়ার কথা ছিল; কিন্তু হচ্ছে উল্টোটা। বাস্তবতা হলো, দিন দিনই সরকারি চাকরির প্রতি মোহ বাড়ছে, বাড়ছে প্রতিযোগিতা। লুটপাট আর দুর্নীতির এই চিত্র বিন্দুমাত্রও প্রভাব ফেলছে না তরুণ প্রজন্মের ওপর। ফলে তা তরুণ প্রজন্মকে আকৃষ্ট করছে না। না হলে ফি বছর প্রশ্নফাঁসের ঝুঁকি আর এবং চাকরিজীবনে দুর্নীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত হওয়ার সমূহ সম্ভাবনা জেনেও কেন তারা সরকারি চাকরির পেছনে ছুটছেন? অর্থাৎ আজকের তরুণ প্রজন্ম মূল্যবোধের অবক্ষয়ের সঙ্গে সমঝোতার প্রস্তুতি নিয়েই নিজেদের প্রস্তুত করছেন সরকারি চাকরির জন্য। তাই তো বিচ্ছিন্ন কিছু ইস্যুতে প্রতিবাদ করা ছাড়া অন্য কোনো যৌক্তিক আন্দোলনে দীর্ঘদিন ধরে তরুণদের শামিল হতে দেখিনি। উল্টো দিগ্বিদিক জ্ঞানশূন্যের মতো তারা সরকারি চাকরির যুদ্ধে শামিল হচ্ছেন।
একদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় আটকা পড়েছিলাম। সে সময় কিছু ছাত্রের সঙ্গে কথা বলা ও তাদের আচরণ পর্যবেক্ষণের সুযোগ হয়েছিল। লক্ষ্য করেছি, সেখানে তাদের মধ্যে যতটা না কোটা সংস্কার আর বৈষম্যের প্রতি প্রতিবাদের আকুতি, তার চেয়েও বেশি মনে হয়েছে সরকারি চাকরির প্রতি তীব্র মোহ। প্রশ্ন হলো, কেন তারা সরকারি চাকরির জন্য এতটা মরিয়া হয়ে উঠেছেন? দুর্নীতিতে ধারাবাহিকভাবে শীর্ষস্থান ধরে রাখা একটি দেশের প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী হওয়া কি এতটাই সুখকর? কে তাদের এই স্বপ্ন দেখাচ্ছে?
এসব প্রশ্নের উত্তর পাওয়া অবশ্য কঠিন নয়। সরকারি কর্মকর্তা–কর্মচারীদের ক্ষমতার প্রদর্শন আর তাদের গড়ে তোলা সম্পদের নিরাপদ পাহাড় তরুণ প্রজন্মকে হাতছানি দিয়ে ডাকছে। তারা সরকারি চাকরি লাভের স্বপ্নে বিভোর হয়ে আছেন। সরকারি চাকরির প্রতি লিপ্সা তাদের অনেক সৃজনশীল কর্মস্পৃহা থেকে দূরে সরিয়ে দিচ্ছে। সরকারি চাকরিই যেন তাদের জীবনের একমাত্র গন্তব্য। ব্যক্তিগত পর্যবেক্ষণ বলে,কোটাবিরোধী আন্দোলনটি এ পর্যায়ে আসার পেছনে শুধু কোটাব্যবস্থাকে যৌক্তিক রূপ দেওয়ার দাবিটিই নেই; সঙ্গে বারুদের মতো কাজ করছে সরকারি চাকরি লাভ করার মরিয়া আকুতি। কারণ কোটায় সংরক্ষিত আসনসংখ্যা কমে যাওয়ার অর্থ হলো, সাধারণ শিক্ষার্থীদের সরকারি চাকরি লাভের সম্ভাবনার পথটি প্রশস্ত হওয়া।
সরকারি চাকরির নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নফাঁস, দুর্নীতির মাধ্যমে সরকারি চাকরি লাভ, অতি প্রভাবশালী সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী হয়ে ওঠা, সবই যেন লাভ-ক্ষতির বাণিজ্যের জটিল হিসাব–নিকাশ। একদিকে কতিপয় সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীর ক্ষমতার আতশবাজি, আর অন্যদিকে বৈধ-অবৈধ নানা উপায়ে ধনসম্পদের নিরাপদ পাহাড় গড়ে তোলার আকর্ষণীয় প্যাকেজটি সম্ভবত আর কোনো চাকরিতে নেই। ফলে অন্য চাকরিতে বেতন বা পদবি যত আকর্ষণীয়ই হোক না কেন; সরকারি চাকরির তুলনায় তা জৌলুশহীন।
ফলে তা তরুণ প্রজন্মকে আকৃষ্ট করছে না। না হলে ফি বছর প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঝুঁকি আর এবং চাকরিজীবনে দুর্নীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত হওয়ার সমূহ সম্ভাবনা জেনেও কেন তাঁরা সরকারি চাকরির পেছনে ছুটছেন? অর্থাৎ আজকের তরুণ প্রজন্ম মূল্যবোধের অবক্ষয়ের সঙ্গে সমঝোতার প্রস্তুতি নিয়েই নিজেদের প্রস্তুত করছেন সরকারি চাকরির জন্য। তাই তো বিচ্ছিন্ন কিছু ইস্যুতে প্রতিবাদ করা ছাড়া অন্য কোনো যৌক্তিক আন্দোলনে দীর্ঘদিন ধরে তরুণদের শামিল হতে দেখিনি।
চার। 
এই পর্যন্ত মুক্তিযোদ্ধা কোটায় এবং পোষ্য কোটায় বাংলাদেশে কয়জন বিসিএস ক্যাডারে বা অন্য কোনো গুরুত্বপূর্ণ সরকারি পদে নিয়োগ পেয়েছেন? বাংলাদেশ পাবলিক সার্ভিস কমিশন প্রকাশিত এক পরিসংখ্যান বলছে, সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধার উত্তরাধিকারীদের জন্য বরাদ্দ রাখা ১০ ভাগ কোটাও পূরণ হয় না। মুক্তিযোদ্ধা ও পোষ্য কোটায় লোক পাওয়া যায় না, এই কারণে কোটা খালি থাকে। অর্থাৎ মুক্তিযোদ্ধা ও পোষ্য কোটার কারণে যে কেউ যে খুব একটা বঞ্চিত হচ্ছে তা সত্যি নয়। এই কোটাটা কার্যত কারো স্বার্থই বিঘ্নিত করে না। তাহলে কেন এতো ক্ষোভ? বিশেষভাবে মুক্তিযোদ্ধা ও পোষ্য কোটার ওপর এতো ক্ষোভ কেন আপনাদের? ব্যঙ্গ করে বলেন ‘নাতিপুতি কোটা`! বক্তৃতা বিবৃতি সাক্ষাৎকার এইসব দিয়ে নানা কথার প্যাঁচ কষে যে কথাটা বলতে চান সেটা হচ্ছে যে মুক্তিযোদ্ধারা আমাদের রাষ্ট্রে কোনো বিশেষ মর্যাদা বা বিশেষ সুবিধা পাওয়ার অধিকার রাখেন না। এইসব কথার কী অর্থ? যদি এমন হতো যে মুক্তিযোদ্ধা কোটার কারণে শত শত চাকরি ওদের ছেলেমেয়েরা বা নাতিপুতিরা নিয়ে যাচ্ছে, তাহলে বুঝতাম যে স্বার্থ রক্ষার জন্যে বলছেন। সেটা তো নয়। তাহলে কি উপসংহারে পৌঁছব? অনেক ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা আছে। তার জন্যে মুক্তিযোদ্ধা কথাটা আমরা ভুলে যাবো? কিছু প্রতারক ধরনের লোক জাল জালিয়াতি করে ব্যক্তিগত সুবিধা নিতে চেষ্টা করে, ওদের ধরে জেলে পাঠানো দরকার, শক্ত পদক্ষেপ নেওয়া দরকার ওদের বিরুদ্ধে। কিন্তু তার জন্য মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি আমার সম্মান শেষ হয়ে যাবে? চোরের জন্যে মুক্তিযোদ্ধা কথাটা ভুলে যাবো? কিছু লোক প্রশ্নফাঁস করে, সেই প্রশ্নে পরীক্ষা দিয়ে বিসিএস পাশ করে, তার জন্যে বিসিএস তুলে দিবেন? পুলিশের কিছু লোক চুরি করে, পুলিশ বাহিনী তুলে দেবেন? 
কেউ কেউ বলছেন, ‘মুক্তিযোদ্ধারা কি কোটা চেয়েছিলেন?’ তারা চাননি। মুক্তিযোদ্ধারা ব্যক্তিগত সুবিধা চাইবেন কেন? ১৯৭১ সালে যখন যুদ্ধ শুরু হয়, ব্যক্তিগত সুবিধার জন্যে যারা রাজাকারে যোগ দেয়, তারা বেতন পেত, ভাতা পেত, লুটের মাল পেত। লোভ করেছে রাজাকাররা। মুক্তিযোদ্ধারা তো জীবন দিতে গেছে দেশের জন্যে। প্রাণ দিতে গেছে, মরতে গেছে। শহীদ জননী জাহানার ইমামের সেই কথাটা জানেন? তার ছেলে রুমী যখন বলছে যুদ্ধে যাবে, তিনি কী বলেছেন? কোনো মুক্তিযোদ্ধাই ব্যক্তিগত লাভের জন্যে যুদ্ধে যাননি। লোভীরা পাকিস্তানিদের পক্ষে ছিল আর যুদ্ধে গেছেন দেশপ্রেমিকরা। আর দেশপ্রেম কী জিনিস? দেশপ্রেম হচ্ছে এমন একটা পরীক্ষা যেটাতে পাস মার্ক হচ্ছে ১০০ তে ১০০-৯৯ পেলেও ফেল। এই পরীক্ষায় পাস করেছেন কেবল আমাদের মুক্তিযোদ্ধারা। এদেশের আর কেউ না। আমার সারা জীবনের আফসোস, কেন আমি আরও কয়েক বছর আগে জন্মালাম না, এই পরীক্ষাটায় অংশ নিতে পারলাম না। 
একবার পতাকার দিকে তাকান, বুকে হাত দিয়ে জাতীয় সংগীতের দুইটা লাইন গেয়ে এক ফোঁটা চোখের পানি ফেলুন। বলুন, আপনি আমাদের জাতির হাজার বছরের ইতিহাসে শ্রেষ্ঠ অর্জন মুক্তিযুদ্ধের গৌরব ম্লান করতে চান? আপনি নিজেই বুঝতে পারবেন আপনি কোন দলে।
                
              
																                  
                                                    
                                                    
                                                    
                                                    
                                                    
                                                    
                                                    
                                                    
                                                    






































