আচ্ছা, একবার ভাবুন তো; একটি শিশুর আচরণ পরিবর্তন করার জন্য তাকে আঘাত করা কি উচিৎ? এই বিতর্কটি গত কয়েক দশক ধরে চলছে। কিন্তু শিশু অধিকার রক্ষার দায়িত্বে থাকা মন্ত্রীরা এসব গুরুত্ব দিচ্ছেন না। এমনকি যুক্তরাজ্যের শিশু অধিকার রক্ষার দায়িত্বে থাকা মন্ত্রীও শিশুদের আঘাত করায় কোনো ক্ষতি দেখেন না। তাই খুব অল্প সময়ের মধ্যে এই সমস্যা সমাধান হচ্ছে না। কারণ, ব্রিটিশ শিক্ষামন্ত্রী নাদিম জাহাউহ যুক্তরাজ্যে শিশুদের আঘাত করা নিষিদ্ধ করতে চান না।
যুক্তরাজ্যে সন্তানদের আঘাত করা বাবা-মায়ের জন্য এখনও বৈধ। যা শৃঙ্খলার নামে ‘যুক্তিসঙ্গত শাস্তি’। গত মাসে ওয়েলসে শিশুদের আঘাত করা, থাপ্পড় মারা বা চড় মারা বেআইনি ঘোষণা করা হয়েছে। ২০২০ সালের নভেম্বরে স্কটল্যান্ডে এই কার্যকলাপকে বেআইনি ঘোষণা করা হয়েছিল। ইংল্যান্ডে একই নিষেধাজ্ঞা চালু করার জন্য শিশুদের কমিশনার ডেম রাচেল ডি সুজা আহ্বান জানান। কিন্তু শিক্ষামন্ত্রী এই আইন করা যাবে না বলে জানান।
সাম্প্রতিক সময়ে ১ লাখ ৬০ হাজার শিশুর ওপর গবেষণায় দেখা গেছে, তাদের সুশৃঙ্খল করার জন্য মারধোর করা হয়েছে। পরে তা স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদে তাদের আচরণে প্রভাব ফেলে। বিশ্লেষণে দেখা গেছে, যারা শাসনের নামে মা-বাবার আঘাতের শিকার হয়েছেন তারা বড় হয়ে আক্রমনাত্মক হয়ে যান। সামাজিক আচরণে বেশ পরিবর্তন ঘটে। ছোট বেলায় আঘাতপ্রাপ্ত শিশুরা বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মানসিক স্বাস্থ্যের সমস্যায় ভোগেন।
সমস্যাযুক্ত আচরণের কারণে বাচ্চাদের আঘাত করা হয়। যাতে তারা সমস্যাটি বুঝতে পারে। কিন্তু এটি আসলে কোনো সমাধান দেয় না। শিশুরা উপযুক্ত আচরণের সম্পর্কে কথোপকথন বুঝতে খুব ছোট, তাহলে তারা অবশ্যই বুঝতে পারবে না কেন তাদের পিতামাতা আঘাত করছে। বিপরীতভাবে, যদি তারা কথোপকথন বুঝতে যথেষ্ট বয়সী হয় তাহলে তাদের আঘাত করার প্রয়োজন নেই।
অবশ্যই নৈতিক সমস্যা আছে। সহপাঠী, বন্ধু, সহকর্মী, অপরিচিত কেউ ও এমনকি আমাদের কুকুরকে আঘাত করা বেআইনি। তাহলে কেন সমাজের ক্ষুদ্রতম ও সবচেয়ে দুর্বল সদস্য আমাদের শিশুদের আঘাত করা হয়? যারা আমাদের সুরক্ষার সবচেয়ে যোগ্য তাদের আঘাত করা উপযুক্ত বলে মনে হয়? এটা অর্থহীন।
যারা শিশুদের আঘাত করার পক্ষে তারা প্রায়ই ত্রুটিপূর্ণ যুক্তি দেন। তাদের দাবি, শারীরিক শৃঙ্খলা শিশুদের সম্মান শেখাবে। এটা আসলে যা শেখায় তা হলো ভয়। সত্যিকারের সম্মান অর্জন করা যায়। সম্মান করতে শেখানোর বাচ্চাদের সর্বোত্তম উপায় হলো, তাদের সঙ্গে প্রথমে সম্মানের সঙ্গে আচরণ করতে হবে।
ইউগোভের সমীক্ষায় দেখা গেছে, ৮৩ শতাংশ প্রাপ্তবয়স্করা ছোটবেলায় পিতামাতার হাতে অন্তত একবার হলেও আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছিলেন। যদিও বয়স্কদের তুলনায় অল্প বয়স্কদের মার খাওয়ার হার কম। শিশুদের শারীরিক শাস্তি আজও উদ্বেগজনকভাবে সাধারণ বিষয়।
কিন্তু যারা ছোটবেলায় আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছিলেন তারা কী ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারেন? যারা আঘাত পেয়েছেন তারা জানেন না শারীরিক শাস্তি ছাড়া কীভাবে পরিণত হতে হয়। তারপর রয়েছে অবধারণত অসঙ্গতি। বাবা-মা আমাদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেছেন এমন চিন্তাভাবনা বিবেচনা করা খুব বেদনাদায়ক।
কোনো শিশুকেই প্রাপ্তবয়স্করা আঘাত করার যোগ্য নয়। এমন কোনো আচরণ নেই যা মারধর করার যোগ্য। যারা লালন-পালনের ভিত্তিতে এর নৈতিকতাকে ন্যায্যতা দেয়, তারা নিশ্চিতভাবেই ইঙ্গিত দিচ্ছে শিশুদের আচরণ তাদের ক্ষতি করছে। নিঃসন্দেহে শিশুরা রক্ষা পাওয়ার যোগ্য। এখনো অনেক কাজ করা বাকি আছে। কিন্তু ২০২২ সালে এই বিতর্কের অবসান ঘটানো ও অবশেষে সমাধান এবং বিকল্পের দিকে ফোকাস করার সময় এসেছে।
লেখক:  সারাহ অকওয়েল স্মিথ, চার সন্তানের মা, `হাউ টু বি কাম প্যারন্ট`সহ ১৩টি প্যারেন্টিং বইয়ের লেখক। 
(কলাম স্বত্ব : দ্য গার্ডিয়ান। অনুবাদ : গোলাম আনোয়ার সম্রাট)
                
              
																                  
                                                    
                                                    
                                                    
                                                    
                                                    
                                                    
                                                    
                                                    
                                                    






































