বছর প্রায় শেষ। বার্ষিক আয়কর বিবরণী জমা দেওয়ার মৌসুম চলছে। ৩০ নভেম্বরের মধ্যেই রিটার্ন জমা দিতে হবে। অক্টোবরের শুরু থেকেই করদাতারা হিসাব কষতে বসেছেন। আর মাত্র কয়েকদিনের মধ্যেই সব হিসাব ই-টিআইএন-এর মাধ্যমে আপডেট করতে হবে এবং কর দিতে হবে।
প্রত্যেক করদাতার একটি ই-টিআইএন থাকে। আয়কর নিবন্ধনের আধুনিক সংস্করণ এটি। নতুন অনেকেই ই-টিআইএন করেছেন। তারা রিটার্ন জমার হিসেব কষতে উকিল বা অভিজ্ঞের কাছে ছুটছেন। আপনি কি জানেন, ই-টিআইএন নিতে কোনো টাকা লাগে না এবং বিনামূল্যে ই-টিআইএন ইস্যু করে এনবিআর। যা ঘরে বসেই করা সম্ভব।
ঘরে বসে অনলাইনেই ই-টিআইএন নেওয়া যায়। কর অফিসেও যেতে হয় না। অনলাইনে ই-টিআইএন কীভাবে নিতে পারবেন, সেই সম্পর্কে তেমন কোনো ধারণা নেই অনেকের। পুরো প্রক্রিয়াটা বুঝে নিলে অনলাইনে ই-টিআইএন জমা দেওয়া অত্যন্ত সহজ। কর আইনজীবীর কাছে যাওয়ার আগে ই-টিআইএন নিতে নিজেই চেষ্টা করুন।
প্রথমে জানতে হবে, ই-টিআইএন কীভাবে নেবেন। ই-টিআইএন জমা দিতে করদাতার নানা ধরনের কাগজপত্র জোগাড় করতে হয়। নতুনদের কাছে এসব ঝামেলা মনে হতে পারে। কিন্তু একবার সবকিছু বুঝে নিলেই ই-টিআইএন জমা দেওয়া সহজ হবে।
রিটার্ন দিতে হলে আপনাকে ইলেকট্রনিক কর শনাক্তকরণ নম্বর (ই-টিআইএন) নিতে হবে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) ওয়েবসাইটে গিয়ে ই-টিআইএন নিতে পারেন। এক্ষেত্রে www.nbr.gov.bd এই ঠিকানায় ই-টিআইএন অপশনে গিয়ে ক্লিক করলেই ই-টিআইএন নেওয়ার পেজ পাওয়া যাবে। অবশ্য সরাসরি incometax.gov.bd ঠিকানায় গিয়েও ই-টিআইএন নেওয়ার একই পেজ পাওয়া যাবে।
পেজে প্রবেশের পর আপনাকে প্রথমেই নির্ধারিত স্থানগুলো পূরণ করে রেজিস্ট্রেশন বা নিবন্ধন নিতে হবে। নিজের নামে ইস্যু করা ই-মেইল ও মোবাইল নম্বর দিতে হবে। এরপর রেজিস্ট্রার বাটনে ক্লিক করলেই ই-টিআইএনের ফরম পাওয়া যাবে।
এবার ফরম পূরণের পালা। ফরমের শূন্যস্থান পূরণের জন্য কিছু মৌলিক তথ্য দিতে হবে। নাম, ঠিকানা, জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর, বয়সের ঘর পূরণ করুন। জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্য স্বয়ংক্রিয়ভাবেই যাচাই-বাছাই করা হয়। অনলাইনে ই-টিআইএনের ওই ফরমটি পূরণ করে সাবমিট করলেই কয়েক মিনিটের মধ্যে ই-মেইলে ১৩ সংখ্যার ই-টিআইএন পাঠিয়ে দেওয়া হবে। পেয়ে যাবেন ই-টিআইএন। এটি প্রিন্ট করে নিজের কাছে সংরক্ষণ করে রাখুন।
জাতীয় পরিচয়পত্র ছাড়া বিদেশি নাগরিকেরাও ই-টিআইএন নিতে পারবেন। বিদেশিদের নিজ পাসপোর্ট ও এর কপি নিয়ে নির্দিষ্ট কর কার্যালয়ে গিয়ে আবেদন করতে হবে। কর কর্মকর্তারা সনাতন পদ্ধতিতে এর যাচাই-বাছাই করবে এবং ই-টিআইএন ইস্যু করবেন।
অপ্রাপ্তবয়স্কদের জন্য ই-টিআইএন নিতে তাদের ছবিসহ অভিভাবকের টিআইএন-এর তথ্য দিতে হয়।
ই-টিআইএন রিটার্ন দিতে হলে ১২ সংখ্যার ই-টিআইএন দিতে হয়। টিআইএন নম্বর থাকার অর্থ কর দেওয়ার উপযুক্ত হোন অথবা না হোন, অর্থবছর শেষে তার বার্ষিক আয়-ব্যয়ের একটি খতিয়ান, অর্থাৎ আয়কর রিটার্ন জমা দিতে হবে রাজস্ব বোর্ডে।
বর্তমানে প্রায় ৪২ লাখ ই-টিআইএনধারী আছেন। করদাতাকে আয়কর নিবন্ধন নম্বরের মাধ্যমে করদাতা হিসেবে শনাক্ত করা হয়। নিবন্ধিত করদাতা বছর শেষে রিটার্ন জমা দেওয়ার মাধ্যমে বার্ষিক আয়-ব্যয় ও সঞ্চয় বর্ণনা করেন।
এ বছর থেকে কিছু শর্তে ছাড় দিয়ে প্রায় সব টিআইএনধারীর রিটার্ন জমা দেওয়া বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।
টিআইএন কেন লাগে? জমি কিনতে, বিদ্যুৎ-সংযোগ নিতে, গাড়ি কিনতে, ব্যাংকে এফডিআর করতে টিআইএনের কপি লাগবে। ব্যাংকে ই-টিআইএন জমা দিলে এফডিআরের সুদের ওপর ১৫ শতাংশের পরিবর্তে ১০ শতাংশ উৎসে কর করা হবে।
অনেকে আছেন টিআইএন নম্বর থাকা সত্বেও আয়কর রিটার্ন জমা দেন না। কয়েক বছর ধরে দেননি কিংবা নানা কারণে দিতে পারেননি। এর কারণে আপনি বিভিন্ন ধরনের সমস্যায় পড়তে পারেন।
রিটার্ন জমা না দিলে যা হবে_
আয়কর রিটার্ন জমা না দিলে ঝামেলা হতে পারে তা অনেকেই অজানা। এমনকি আগে করযোগ্য ছিলেন কিন্তু পরে সেরকম আয় আর নেই এমন ব্যক্তিকেও বিপাকে পড়তে পারেন।
নতুন কিছু শুরু করার আগে টিন (টিআইএন) নম্বর হালনাগাদ হতে হবে। তা না হলে লাইসেন্স পাওয়া যাবে না। ব্যবসা চালুর ক্ষেত্রে এটা লাগবেই। এছাড়াও বিদেশ যাওয়ার পরিকল্পনা করলেও ভিসার জন্য সর্বশেষ তিন বছরের ট্যাক্স ফাইল দিতে হবে।
একজন আইনজীবী নিয়োগ দিয়ে, শুনানি করে, একটি নির্দিষ্ট অঙ্কের অর্থ জমা দিয়ে রিটার্ন নিতে হবে। সনদ নিতে গিয়ে দফায় দফায় রাজস্ব বোর্ডের আয়কর অফিসে যেতে হবে।
এছাড়াও নির্দিষ্ট সময়ের পর রিটার্ন দাখিল করলে কেন সময়মত কাজটি করেননি তার জবাব দিতে শুনানি অনুষ্ঠিত হবে। শুনানি নোটিশের মাধ্যমে জানানো হবে। কিন্তু এরপর নতুন বছরের রিটার্ন জমা দেয়ার সময় চলে এলে পূর্বের নোটিশের জন্য় ঝামেলায় পড়তে হবে।
যদি কোনও ব্যক্তি সময়মত আয়কর রিটার্ন দিতে ব্যর্থ হন এক্ষেত্রে অধ্যাদেশ অনুযায়ী এক হাজার টাকা অথবা আগের বছরের ট্যাক্সের দশ শতাংশ জরিমানা করা হয়। এ দুটির ভেতরে যেটি পরিমাণে বেশি সেই অংকটি পেনাল্টি হতে পারে বলে জানান আয়কর আইনজীবীরা।
কয়েক বছর ধরে যদি কেউ রিটার্ন দাখিল না করেন তাহলে ওই জরিমানা ছাড়াও যতদিন ধরে তিনি রিটার্ন দেননি ওই পুরো সময়ের দিনপ্রতি ৫০ টাকা করে জরিমানা হতে পারে।
তবে তা যতদিনই হোক না কেন নতুন করদাতা হলে সবমিলিয়ে জরিমানার পরিমাণ পাঁচ হাজার টাকার উপরে নেওয়া হবে না।
আর পুরনো করদাতা হলে আগের বছর যে পরিমাণ অর্থ আয়কর হয়েছে, সেটিসহ ওই অর্থের ৫০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়তি দিতে হতে পারে।