• ঢাকা
  • সোমবার, ১৯ মে, ২০২৫, ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২, ১৯ জ্বিলকদ, ১৪৪৪

চাকরির পরীক্ষায় অন্তর্বাসে মিলল বিশেষ যন্ত্র


সংবাদ প্রকাশ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: মে ১২, ২০২৪, ০৫:৩০ পিএম
চাকরির পরীক্ষায় অন্তর্বাসে মিলল বিশেষ যন্ত্র
অন্তর্বাসে স্পাই ডিভাইস। ছবি : সংগৃহীত

অত্যাধুনিক ডিজিটাল ডিভাইসের (বিশেষ যন্ত্র) মাধ্যমে বিভিন্ন চাকরির নিয়োগ পরীক্ষায় প্রশ্ন ফাঁস ও উত্তর সাপ্লাই করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে একটি বড় চক্র। চক্রের সদস্যরা নারী পরীক্ষার্থীদের অন্তর্বাসের মধ্যে আর পুরুষ পরীক্ষার্থীদের গেঞ্জির মধ্যে ঢুকিয়ে দিত অত্যাধুনিক ডিভাইস। একইসঙ্গে ক্ষুদ্রাকৃতির বলের সঙ্গে সংযোগ দিয়ে পরীক্ষার্থীর কানের মধ্যে লুকিয়ে রাখা হতো। পকেটে রাখা হতো রাউটার।

পরীক্ষা শুরুর ১-২ মিনিট আগে কোনো না কোনো কেন্দ্র ম্যানেজ করে বিশাল সেই চক্র প্রশ্নের ফটোকপি হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে বাইরে পাঠানোর ব্যবস্থা করতো। প্রশ্নপত্রের উত্তর সমাধানের জন্য বাইরে থেকে কাজ করত চক্রের আরেকটি টিম। পাঁচ মিনিটের মধ্যে প্রশ্ন সলভ করে ফেলতো তারা। এরপর তারা উত্তরগুলো বলতে থাকে। পরীক্ষার্থীর কানের মধ্যে যে ক্ষুদ্রাকৃতির বল থাকে, তার মাধ্যমে তারা প্রশ্নগুলো উত্তর পেয়ে যেত। এতে ১০ মিনিটেই পরীক্ষা শেষ হয়ে যেত।

বিভিন্ন চাকরির নিয়োগ পরীক্ষায় এভাবে প্রশ্নপত্র ফাঁস ও অত্যাধুনিক ডিজিটাল ডিভাইসের মাধ্যমে উত্তর সরবরাহ করার সংঘবদ্ধ চক্রের সাত সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করার পর বেরিয়ে এসেছে এমন চাঞ্চল্যকর ঘটনা।

রোববার (১২ মে) রাজধানীর মিন্টো রোডের ডিবি কার্যালয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (গোয়েন্দা) মোহাম্মদ হারুন অর রশিদ সংঘবদ্ধ চক্রের কর্মকাণ্ড সম্পর্কে বিস্তারিত তুলে ধরেন।

গ্রেপ্তাররা হলেন, জুয়েল খান (৪০), রাসেল (৩০), মাহমুদুল হাসান শাকিল (৩৯), আব্দুর রহমান (৩৮), আরিফুল ইসলাম (৩৫), আজহারুল ইসলাম (২৯) এবং মাসুম হাওলাদার (২৫)। তাদের কাছ থেকে বিশেষভাবে প্রস্তুত করা জিএসএম সুবিধা সম্বলিত ১০টি অত্যাধুনিক ডিজিটাল ইলেকট্রনিক স্পাই ডিভাইস, সাতটি মোবাইল ফোন ও ১০টি সিম কার্ড এবং একটি পকেট রাউটার জব্দ করা হয়।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের তথ্য জানিয়ে ডিবি প্রধান বলেন, “গ্রেপ্তাররা পরস্পর যোগসাজশে দীর্ঘদিন ধরে অপরাধ করে আসছে। তারা চাকরির নিয়োগ পরীক্ষায় মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে চাকরি পাইয়ে দেওয়ার জন্য প্রার্থীদের সঙ্গে চুক্তি করে। চাকরি ভেদে এমসিকিউ লিখিত পরীক্ষায় টিকিয়ে দেওয়ার জন্য ৩-৫ লাখ টাকা এবং লিখিত ও ভাইভাসহ ৮-১০ লাখ টাকা পরীক্ষার্থীদের কাছ থেকে নিয়ে থাকে।”

হারুন অর রশিদ বলেন, “চক্রের সদস্যরা প্রাথমিকের সহকারী শিক্ষক নিয়োগ (তৃতীয় ধাপ), বাংলাদেশ রেলওয়ের টিকেট কালেক্টর (গ্রেড ২) ও বুকিং অ্যাসিস্ট্যান্ট (গ্রেড ২), পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকের অফিস সহায়ক, জেলা প্রশাসকের কার্যালয়, টাঙ্গাইলের অফিস সহায়ক, মৎস্য বিভাগের অফিস সহায়ক, গণপূর্তের হিসাব সহকারী ও অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার মুদ্রাক্ষরিক, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের অফিস সহায়ক, ভূমি মন্ত্রণালয়ের সাট মুদ্রাক্ষরিক কাম কম্পিউটার অপারেটর, বাখরাবাদ গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির সহকারী ব্যবস্থাপকসহ আরও বিভিন্ন চাকরির নিয়োগ পরীক্ষায় এসব পন্থায় অপরাধ কর্ম সংঘটিত করেছে।”

ডিবি প্রধান আরও বলেন, “এক সময় নকল প্রতিরোধের জন্য কাজ করেছি। সে সময় তারা পরীক্ষার হলে বই নিয়ে যেত। এখন সর্বশেষ আমরা যেটা পেলাম সেটা হচ্ছে তারা ক্ষুদ্রাকৃতির বল ব্যবহার করছে এবং ডিভাইসটা এমন জায়গায় রাখছে যেখানে ধরার বা চেক করার কোনো স্কোপ নেই। দিন দিন এভাবে ক্রাইমের প্যাটার্নটা চেঞ্জ হয়ে যাচ্ছে।”

Link copied!