“গাড়ি যদি ঠিকমতো চলে তবে প্রতিদিন গড়ে ১ হাজার টাকা আয় হয়। কিন্তু অবরোধের কারণে ঠিকমতো গাড়ি চলছে না। দুই দিন বন্ধ রেখে একদিন চালাতে হচ্ছে। এতে গড়ে ২০০ টাকাও আয় হয় না। মেয়ের পরীক্ষার জন্য একজনের কাছে ১০ হাজার টাকা ঋণ করবো। যদি গাড়ি চলাচল স্বাভাবিক হয়, তবে ঋণ করতে হবে না। পরিবার নিয়ে বিপাকে পড়ে গেছি। এভাবে অবরোধ, হরতাল চলতে থাকলে ঋণের মধ্যে পড়ে যাব।”
মনে ক্ষোভ আর আক্ষেপে ভরা এসব কথা হারুন-উর রশিদ নামের এক ব্যক্তির। তিনি দূরপাল্লার যাত্রীবাহী একটি বাসের হেলপার হিসেবে কর্মরত আছেন। শুধু এই হারুন নয়, তার মতো অনেক পরিবহনচালক ও হেলপারের কথাগুলো একই রকম।
দেশের বিরোধী দলগুলোর ডাকা প্রথম ও দ্বিতীয় ধাপের অবরোধ কর্মসূচি শেষ হয়েছে। বৃহস্পতিবার (৯ নভেম্বর) তাদের ডাকা তৃতীয় ধাপের অবরোধ কর্মসূচির শেষ দিন ছিল। এদিন মহাখালী আন্তঃজেলা বাসটার্মিনাল ঘুরে দেখা যায়, দূরপাল্লার বাস চালকরা বসে আছেন বিভিন্ন কাউন্টারে। বাস রাখার নির্ধারিত স্থানে স্থবির রয়েছে বাসগুলো। যাত্রীর পদচারণায় মুখরিত মহাখালি বাসটার্মিনালের এ দিনের চিত্র ছিল একেবারে বিপরীত। এসময় কথা হয় বেশ কয়েকজন পরিবহন চালকের সঙ্গে। তাদের কথায় উঠে আসে শুধুই আক্ষেপের সুর।
এমন পরিস্থিতিতে রাজনৈতিক নেতাদের কাছে পরিবহন সংশ্লিষ্টদের প্রশ্ন, “অবরোধে সব কিছু চলমান থাকলেও, পরিবহন খাতের উপরেই আক্রমণ কেন? তাদের প্রত্যাশা, রাজনৈতিক দলগুলো সমঝোতায় বসলে বাড়তি ঋণের বোঝায় পড়বেন না তারা।
আবুল বাশার নামের এক বাসচালক বলেন, “কাজ না থাকলে ভালো লাগে না। বাড়িতে ঠিকমতো খরচ না দেওয়ায় আরেক অশান্তি। এগুলো শুধু হচ্ছে বাস ঠিকমতো না চলায়। বাড়ি থেকে ফোন দিচ্ছে টাকার জন্য। টাকা না থাকলে কীভাবে পাঠাবো। পরিবহন চালকদের কষ্ট কেউ বোঝে না। এভাবে চলতে থাকলে ঋণ করা ছাড়া উপায় থাকবে না।”
অনন্যা পরিবহনের বাস সার্ভিসের ম্যানেজার মনোয়ার হোসেন বলেন, “বাস আছে প্রায় ৫৪টি। এখন সারাদিনে ২ থেকে ৩টা ট্রিপ যাচ্ছে। কারণ যাত্রী নাই। মানুষ আতঙ্কে বের হচ্ছে না। আগে একটি বাসে যাত্রী যেত সর্বনিম্ন ২৫ জন। এখন সারাদিনে ১০ জন যাত্রীও হয় না। গাড়ি চলাচল না করায় মালিক পক্ষের লোকসান, সঙ্গে আমরাও আর্থিক সংকটে পড়ছি।”
মহাখালী বাস টার্মিনাল পরিবহন মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মালেক বলেন, “আমরা যদি এনা পরিবহনের কথা ধরি, আগে যেখানে ১৯ মিনিট পরপর তাদের গাড়িগুলো ছাড়তো। এখন সেখানে কমপক্ষে এক ঘণ্টা পরপর ছাড়ছে। কোনো রকমে তাদের খরচ উঠলেই তারা ছেড়ে দিচ্ছেন। এভাবে মালিক পক্ষের যেমন লোকসান। তেমনভাবে ঋণের বোঝায় পড়তে পারেন পরিবহন সংশ্লিষ্টরা। শুধু আমাদের উপরেই আক্রমণ চলছে। আমরা প্রত্যাশা করি দলগুলো সমঝোতায় বসবে।”