• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ০১ মে, ২০২৫, ১৮ বৈশাখ ১৪৩২, ৩ জ্বিলকদ ১৪৪৬

‘দোয়া করো, হয়তো আর যোগাযোগ হবে না’


সংবাদ প্রকাশ ডেস্ক
প্রকাশিত: মার্চ ১৩, ২০২৪, ০১:৫৬ পিএম
‘দোয়া করো, হয়তো আর যোগাযোগ হবে না’
সোমালিয়ায় জলদস্যুদের কবলে জিম্মি বাংলাদেশি নাবিক তৌফিকুল ইসলাম। ছবি : সংগৃহীত

ভারত মহাসাগরে বাংলাদেশি জাহাজ এমভি আবদুল্লাহ মোজাম্বিকের মাপুতু বন্দর থেকে সংযুক্ত আরব আমিরাতে যাওয়ার পথে জাহাজটিতে উঠে নিয়ন্ত্রণ নেয় সোমালিয়ার জলদস্যুরা। জাহাজে থাকা ২৩ নাবিকের সবাই বাংলাদেশি। তাদের মধ্যে একজন খুলনা মহানগরীর ছোটবয়রা করীমনগর এলাকার বাসিন্দা তৌফিকুল ইসলাম। তিনি জিম্মি জাহাজ ‘এমভি আবদুল্লাহ’র সেকেন্ড ইঞ্জিনিয়ার।

জিম্মি হওয়ার আগে শেষবার তিনি মা ও স্ত্রীর সঙ্গে মোবাইল ফোনে কথা বলেন। এ সময় তিনি জানান, ‘দোয়া করো, হয়তো আর যোগাযোগ হবে না।’

মঙ্গলবার (১২ মার্চ) বিকেল ৫টার পরে তৌফিকুল ইসলামের সঙ্গে সর্বশেষ কথা হয় বলে জানান মা বিল আফরোজ ও স্ত্রী জোবায়দা নোমান।

জানা গেছে, ইঞ্জিনিয়ার তৌফিকুল ইসলামের পরিবারে রয়েছেন বাবা ইকবাল হোসেন, মা বিল আফরোজ, স্ত্রী জোবায়দা নোমান এবং দুই সন্তান তাসফিয়া তাহসিনা (৭) ও আহমেদ রুসাফি (৫।

ইঞ্জিনিয়ার তৌফিকুল ইসলামের স্ত্রী জোবায়দা নোমান বলেন, বিকাল ৫টার দিকে কথা হয়েছিল, তিনি ফোনে বলেছেন-দোয়া করো। আমাদেরতো সোমালিয়ায় নিয়ে যাচ্ছে, হয়তো আর যোগাযোগ হবে না। কি হবে কিছুই তো আসলে জানি না। এটাই শেষ কথা। এরপরে আর কথা হয়নি।

তিনি জানান, চট্টগ্রাম থেকে ইফতেখার ফোন করে পরিবার থেকে লোক পাঠাতে বলেছিলেন। আমার মেঝো ভাসুর এবং আমার ভাই দুজন চট্টগ্রাম গিয়েছেন।

আমাদের দাবি একটাই, সব কিছুর বিনিময়ে হলেও ও আমাদের মাঝে ফিরে আসুক। তার সহকর্মীরা আল্লাহর রহমতে সুস্থ স্বাভাবিকভাবে ফিরে আসুক।

ইঞ্জিনিয়ার তৌফিকুল ইসলামের মা দিল আফরোজ বলেন, ছেলের সঙ্গে কথা হয়েছে। বললো আম্মা আমি ভালো আছি, চিন্তা করো না। আমি বললাম, চিন্তাতো লাগেই, কি করবো তোমরা বন্দি অবস্থায় আছো। টেনশন তো হয়ই। তুমি দোয়াটা পইরো আল্লাহ দোয়াটা কবুল করবে। এই বলতে বলতেই আর কথা নেই। মনে হলো যে, তার মোবাইল ফোনটা কেড়ে নিল। শেষ কথা আমার সঙ্গে হয়েছে বলে কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি।

এর আগে মঙ্গলবার (১২ মার্চ) বাংলাদেশ সময় দুপুরে ভারত মহাসাগরে জলদস্যুর কবলে পড়ে বাংলাদেশের পতাকাবাহী জাহাজ এমভি আবদুল্লাহ। শিল্পগ্রুপ কেএসআরএমের মালিকানাধীন এসআর শিপিংয়ের জাহাজটি জিম্মি করে সোমালিয়ান দস্যুরা। পরে জাহাজটি সোমালিয়া উপকূলের দিকে নিয়ে যায় দস্যুরা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জাহাজে মোট ২৩ নাবিক রয়েছেন। তারা হলেন- জাহাজের মাস্টার মোহাম্মদ আবদুর রশিদ, চিফ অফিসার আতিক উল্লাহ খান, সেকেন্ড অফিসার মোজাহেরুল ইসলাম চৌধুরী, থার্ড অফিসার এন মোহাম্মদ তারেকুল ইসলাম, ডেক ক্যাডেট সাব্বির হোসাইন, চিফ ইঞ্জিনিয়ার এ এস এম সাইদুজ্জামান, সেকেন্ড ইঞ্জিনিয়ার মো. তৌফিকুল ইসলাম, থার্ড ইঞ্জিনিয়ার মো. রোকন উদ্দিন, ফোর্থ ইঞ্জিনিয়ার তানভীর আহমেদ, ইঞ্জিনিয়ার ক্যাডেট আইয়ুব খান, ইলেকট্রিশিয়ান ইব্রাহীম খলিল উল্লাহ, ক্রু মো. আনোয়ারুল হক, মো. আসিফুর রহমান, মো. সাজ্জাদ হোসেন, জয় মাহমুদ, মো. নাজমুল হক, আইনুল হক, মোহাম্মদ শামসুদ্দিন, মো. আলী হোসেন, মোশাররফ হোসেন শাকিল, মো. শরিফুল ইসলাম, মো. নুর উদ্দিন ও মো. সালেহ আহমদ।

মঙ্গলবার ঘটনার পর থেকে তাদের কারো সঙ্গে যোগাযোগ করা যাচ্ছে না। এর আগে নাবিকরা তাদের পরিবারের কাছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে একাধিক ক্ষুদে বার্তা পাঠান। যেখানে তারা দস্যুর কবলে পড়ার খবর দিয়ে দোয়া কামনা করেন।

জাহাজের অবস্থান শনাক্তকারী ওয়েবসাইট মেরিন ট্রাফিকের তথ্য অনুযায়ী, ১৮৯ দশমিক ৯৩ মিটার দৈর্ঘ্য ও ৩২ দশমিক ২৬ মিটার প্রস্থের জাহাজটি বাল্ক কেরিয়ার। এটি আফ্রিকার মোজাম্বিকের মাপুটো বন্দর থেকে ছেড়ে আসে। ১৯ মার্চ মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সংযুক্ত আরব আমিরাতের হামরিয়াহ বন্দরে পৌঁছানোর কথা ছিল।

জাতীয় বিভাগের আরো খবর

Link copied!