• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ০২ মে, ২০২৪, ১৯ বৈশাখ ১৪৩১, ২২ শাওয়াল ১৪৪৫

আলোচনার কেন্দ্রে জঙ্গি ছিনতাই


নুর মামুন
প্রকাশিত: ডিসেম্বর ৩০, ২০২২, ০৩:৩৯ পিএম
আলোচনার কেন্দ্রে জঙ্গি ছিনতাই

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা, গোয়েন্দা নজরদারি ও সাড়াশি অভিযান অব্যাহত থাকায় দেশে দীর্ঘদিন ধরে জঙ্গি সংগঠনগুলোর কর্মকাণ্ড নেই বললেই চলে। বিভিন্ন সময় তারা জানান দেওয়ার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছে। তবে বছরের শেষে, নভেম্বরে দিনে-দুপুরে ঢাকার আদালত প্রাঙ্গণ থেকে পুলিশের চোখে স্প্রে মেরে দুই জঙ্গিকে ছিনিয়ে নেন তাদের সহযোগীরা। যা নিয়ে দেশ-বিদেশে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনার সৃষ্টি হয়। সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী এখন পর্যন্ত ওই জঙ্গিদের গ্রেপ্তার বা তাদের অবস্থান নিশ্চিত করতে পারেনি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

যা ঘটেছিল

গত ২০ নভেম্বর পুরান ঢাকার আদালত এলাকা থেকে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ২ জঙ্গি আবু সিদ্দিক সোহেল ওরফে সাকিব এবং মাঈনুল হাসান শামীমকে ছিনিয়ে নেয় তাদের সহযোগীরা। ঢাকার সন্ত্রাস দমন ট্রাইব্যুনালে শুনানি শেষে সিএমএম আদালতের হাজতখানায় নেওয়ার পথে জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের গেটের সামনে দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যদের চোখে স্প্রে করে আগে থেকে প্রস্তুত একটি মোটরসাইকেলে চড়ে দ্রুত পালিয়ে যান দুই জঙ্গি। মোটরসাইকেলের চালক ছিলেন আরেকজন।

ঘটনার পর আদালত প্রাঙ্গণ নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে ফেলা হয়। ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। রাজধানীসহ সারা দেশে রেড অ্যালার্ট জারি এবং বিমানবন্দর ও সীমান্তগুলোতে বিশেষ নিরাপত্তা দেওয়ার নির্দেশ দেয় সরকার।

ঘটনার দিন বেলা পৌনে ৩টার দিকে সিটিটিসির প্রধান মো. আসাদুজ্জামান আদালত এলাকায় যান। এর আগে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন ডিএমপির ডিবির প্রধান মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ।

আদালত এলাকা পরিদর্শন শেষে হারুন অর রশীদ সাংবাদিকদের বলেন, “আমরা ঢাকা শহরের বিভিন্ন জায়গায় চেকপোস্ট বসিয়েছি। আমাদের ডিবির প্রতিটি টিম কাজ করছে। আশা করছি তাদের (পালিয়ে যাওয়া জঙ্গি) দ্রুত গ্রেপ্তার করতে পারব।”

হারুন অর রশীদ আরও বলেন, “জঙ্গিরা বিভিন্ন কৌশল নিয়ে কাজ করে। এবার তারা নতুন একটি কৌশল নিয়েছে। আমরা শুনেছি, আদালতের গেটে দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যদের চোখে স্প্রে করে দুই জঙ্গিকে ছিনিয়ে নিয়েছেন অপর জঙ্গিরা। চোখে স্প্রে করার কারণে দায়িত্বরতরা কিছু দেখতে পারেননি।”

ঘটনার পর আদালত প্রাঙ্গণ এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার

ঘটনার পর আদালত প্রাঙ্গণ ও আশপাশের এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করা হয়। নিয়ন্ত্রণ করা হয় যান চলাচল। আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর বিপুলসংখ্যক সদস্য মোতায়েন করা হয়। সোয়াট টিম সদস্যরাও টহল দেন। ঘটনাস্থলে ছিল এপিসি ও সাঁজোয়া যানসহ বম্ব ডিসপোজাল ইউনিট।

রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীর প্রতিক্রিয়া

দুই জঙ্গি ছিনতাইয়ের ঘটনার পরবর্তী প্রতিক্রিয়ায় ওইদিনেই রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী মো. গোলাম ছারোয়ার খান জাকির গণমাধ্যমকে বলেন, “জঙ্গিদের আদালতে আনার দিন নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও জোরদার হওয়া উচিত ছিল। মোহাম্মদপুর থানার সন্ত্রাসবিরোধী আইনে করা একটি মামলার শুনানি ছিল। সেই মামলার আসামি ২০ জন, এর মধ্যে ৬ জন পলাতক। ১২ জন জেলহাজতে ছিলেন ও দুজন জামিনে ছিলেন।”

গোলাম ছারোয়ার খান জাকির আরও বলেন, “এই মামলার চারটি শুনানি হয়েছে। আজ ওই মামলার শুনানি শেষে বের হওয়ার পর মূল ফটকের সামনে দুই জঙ্গিকে ছিনিয়ে নেওয়া হয়। ছিনিয়ে নেওয়া দুই জঙ্গিই দীপন হত্যা মামলার মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি। সাকিবুর অভিজিৎ হত্যা মামলারও মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি। মোহাম্মদপুর থানায় করা আরেকটি মামলায় শুনানির জন্য তাদের আদালতে আনা হয়েছিল।”

আদালতের নিরাপত্তার ঘাটতি আছে কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “এটা আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী বলতে পারবে। তবে অবশ্যই নিরাপত্তাব্যবস্থা আরও জোরদার হওয়া উচিত ছিল। তাদের কীভাবে নামিয়ে আনা হয়েছিল তা জানি না।”

জঙ্গি ছিনতাই ঘটনায় আটক জঙ্গিদের রিমান্ড শেষে কারাগারে প্রেরণ

জঙ্গি ছিনতাইয়ের ঘটনায় রাজধানীর যাত্রাবাড়ী থানার সন্ত্রাসবিরোধী আইনের মামলায় আট জঙ্গিকে আটক করা হয়। সর্বশেষ গত ২০ ডিসেম্বর রিমান্ড শেষে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট শান্ত ইসলাম মল্লিক।

আটক জঙ্গিরা হলেন খাইরুল ইসলাম ওরফে জামিল, মোজাম্মেল হোসেন ওরফে সাইমন, আরাফাত রহমান ওরফে শামস, শেখ আব্দুল্লাহ ওরফে জুবায়ের, সবুর ওরফে সাদ, ওমর ফারুক, মীর ফরিদুল হক ও মোহাম্মদ হানিফ।

মামলার তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত তাদের কারাগারে আটক রাখার আবেদন করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সিটিটিসির উপপরিদর্শক মুহাম্মদ মুসাদ্দিমুল হক। আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত এ আদেশ দেন।

এর আগে ১৫ ডিসেম্বর যাত্রাবাড়ী থানার মামলায় আদালত তাদের চারদিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

মামলার অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, এ মামলায় গ্রেপ্তার করা এজাহারভূক্ত আসামি জাকির হোসেন ওরফে ইব্রাহিমকে গত ১৭ নভেম্বর দুই দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়। রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদে সে জানায়, আনসার আল ইসলামের মাস্টারমাইন্ড খাইরুল ইসলাম ওরফে জামিল, মোজাম্মেল হোসেন সাইমন, আরাফাত রহমান, শেখ আব্দুল্লাহ, আব্দুস সবুরসহ আরও ২০ থেকে ২৫ জন সদস্য পুরো সাংগঠনিক কার্যক্রম চালিয়ে আসছে। তারা গোপন অ্যাপস ব্যবহারের মাধ্যমে জেলখানা থেকে সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালনা করে।

জঙ্গি ছিনতাইয়ে সাবেক রেলমন্ত্রীর এপিএস ফারুকের সংশ্লিষ্টতা

এদিকে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ২ জঙ্গিকে ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনায় প্রয়াত সাবেক রেলমন্ত্রী সুরঞ্জিত সেন গুপ্তের এপিএস ওমর ফারুক তালুকদার জড়িত বলে জানায় পুলিশ।

ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম) মো. আসাদুজ্জামান বলেন, “ঢাকার আদালত থেকে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত জঙ্গি আবু সিদ্দিক সোহেল ও মোজাম্মেল হোসেনকে ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনায় ওমর ফারুকের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেছে। ওমর ফারুক পালিয়ে যাওয়া জঙ্গি আবু সিদ্দিক সোহেলের বোনকে বিয়ে করেছেন। ঘটনার আগে-পরের প্রযুক্তিগত তথ্য পর্যালোচনায় দেখা গেছে, আবু সিদ্দিক সোহেল ও মোজাম্মেল হোসেনের স্ত্রীদের সঙ্গে কথা বলেছেন ওমর ফারুক। এই ২ জঙ্গিকে ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনায় তার সংশ্লিষ্টতা রয়েছে।”

Link copied!