অসাধু ব্যবসায়ীদের কারণে বাজারে দাম বাড়ছে বলে মন্তব্য করেছেন প্রবীণ অর্থনীতিবিদ ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ।
তিনি আরও বলেন, “বাংলাদেশ সরকার ও বিশ্বব্যাংক যদিও বলেছে করোনাকালে দারিদ্রতা বাড়েনি। তবে, বাস্তবতা হচ্ছে দেশে দারিদ্রতা গভীর হয়েছে। কেননা আমি নিজে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল সফর করছি। গ্রামে দেখেছি আয় কমে যাওয়ায় মানুষ কতটা অসহায় হয়ে পড়েছে।”
শনিবার (১০ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর ইস্কাটনে বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার অর্থনৈতিকবিষয়ক রির্পোটারদের প্রশিক্ষণ কর্মশালার সমাপনী অনুষ্ঠানে সম্মানীয় অতিথির বক্তব্যে কাজী খলীকুজ্জমান এসব কথা বলেন। সমিতির অডিটোরিয়ামে কর্মশালায় ৩৭ জন সাংবাদিক অংশগ্রহণ করেন।
আমরা গত ১০ বছরে অনেক বেশি প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছি জানিয়ে কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ বলেন, “করোনার সময়েও আমরা প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছি। তবে, করোনাকালে অনানুষ্ঠানিকখাতের মানুষ সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আমাদের অনানুষ্ঠানিক কর্মসংস্থানে মানুষের সংখ্যা ৮৫ ভাগ ও আনুষ্ঠানিকখাতে ১৫ শতাংশ সরকারি ও বেসরকারিতে। দেশে কর্মসংস্থানের বড় সংকট। বিশেষ করে শিক্ষিত লোকদের। গ্রামে প্রয়োজন অনুযায়ী প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা হচ্ছে না। এজন্য মানবকেন্দ্রীক বহুমাত্রিক ও সমন্বিত উন্নয়ন প্রয়োজন।”
কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ বলেন, “২০২০-২১ প্রবৃদ্ধি ৭.৫ শতাংশ ও তার আগে ৮ শতাংশের ওপরে হয়েছে। আমাদের পিছিয়ে পড়া বা পিছিয়ে থাকা মানুষের জন্য বিনিয়োগ করতে হবে। কেননা দেশে ৩৬-৩৭ শতাংশ শ্রমিক কৃষিতে ও অতিক্ষুদ্র পেশায় জড়িত। করোনায় মাঝারি ও ক্ষুদ্র শিল্পে ২০ হাজার কোটি প্রণোদনা দেওয়া হয়েছে। সেখানে পিকেএসএফ প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকা বিতরণ করেছে। এসব অর্থ প্রকৃত লোকজন পেয়েছে।”
এই অর্থনীতিবিদ বলেন, “কর্মসংস্থানের মাধ্যমে এগিয়ে যেতে হবে। এতে প্রশিক্ষণ ও প্রযুক্তির ব্যবহার করতে হবে। বঙ্গবন্ধু কৃষিকে যান্ত্রিকীকরণ করেছিলেন, বর্তমানে তা বৃদ্ধি করা হচ্ছে।”
খলীকুজ্জমান আরও বলেন, “আমাদের মূল্যবোধের সমস্যা রয়েছে। কেননা এখন মূল্যবোধ, নৈতিকতা, পরোপকারিতা ও মানবিকতা এসব জিনিসের অভাব দেখা দিয়েছে।”
সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. আবুল বারকাতের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. মো. আইনুল ইসলামের সঞ্চালনায় দিনব্যাপী কর্মশালায় উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সম্মানীয় অতিথি ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক। কর্মশালার সমন্বয়কের দায়িত্বে ছিলেন অধ্যাপক ড. জহিরুল ইসলাম সিকদার।
কর্মশালার শুরুতে ‘সাংবাদিকতায় আচরণ, শৃংখলা ও নৈতিকতা’ বিষয়ে অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক, ‘বৈশ্বিক অর্থনীতি এবং বাংলাদেশ: সাম্প্রতিক বিষয়বলী’ নিয়ে অধ্যাপক ড. আবুল বারকাত এবং ‘বিশ্বায়ন, শ্রম অভিবাসন বাণিজ্য সাংবাদিকতা’ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন প্রথম আলোর অনলাইন বিভাগের প্রধান শওকত হোসেন মাসুম। এ ছাড়াও কর্মশালায় অংশগ্রহণ করা সাংবাদিকদের নিয়েও একটি আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
সমাপনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ডেইলি অবজারভারের সম্পাদক ইকবাল সোবহান চৌধুরী। শেষে কর্মশালায় নেওয়া সাংবাদিকদের সনদ প্রদান করা হয়।