দুবাই থেকে আসা দুই বাংলাদেশির পরনের জামাকাপড় পুড়িয়ে চার কেজির বেশি সোনা উদ্ধার করেছে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। তারা হলেন সিলেটের শাজাহান ও আলিম। বিশেষ ক্ষমতা আইনের মামলায় তারা বর্তমানে কারাগারে।
গত ২৫ এপ্রিল হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে শাজাহানকে আটক করা হয়। ওই দিন সিলেটের ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ধরা পড়েন আলিম। পরে তাদের দুজনের পরনে থাকা জামাকাপড়গুলো পুড়িয়ে স্বর্ণ বের করা হয়। এই প্রক্রিয়ায় প্রায় আট ঘণ্টা লেগে যায়।
কাস্টমসের সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা বাকি বীল্লাহ বলেন, শাজাহান ও আলিম প্রথমে স্বীকার করতে চাননি তাদের কাছে সোনা রয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে তাদের জামাকাপড় খুলে ফেলা হয়। পরে সেগুলো কেটে কেটে টুকরা করা হয়। তখন জামায় স্বর্ণের প্রলেপ দেখা যায়। সেটি পুড়িয়েই স্বর্ণগুলো উদ্ধার করা হয়।

মোহাম্মদ শাজাহানের গ্রামের বাড়ি সিলেটের গোয়াইনঘাটের দেওয়ার গ্রামে। চার বছর আগে তিনি দুবাই যান। একই এলাকার আলিমও ভাগ্য পরিবর্তনের আশায় দুবাই যান। মাস শেষে যে আয় হতো, তা দেশে পাঠিয়ে দিতেন শাজাহান।
জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্যের বরাত দিয়ে তদন্তসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, সম্প্রতি শাজাহানের পিত্তথলিতে পাথর ধরা পড়ে। তখন তিনি দুবাইয়ের হাসপাতালে যান। খোঁজখবর নিয়ে জানতে পারেন, অস্ত্রোপচার করে পিত্তথলির পাথর অপসারণ করাতে বাংলাদেশি মুদ্রায় দুই লাখ টাকার বেশি খরচ হবে। তখন সিদ্ধান্ত নেন, বাংলাদেশে গিয়ে তিনি অস্ত্রোপচার করাবেন।
বিষয়টি নিয়ে শাজাহান সিলেটের গোয়াইনঘাট এলাকার জনৈক জিয়াউর রহমানের সঙ্গে পরামর্শ করেন। জিয়াউর তখন শাজাহানকে প্রস্তাব দেন, তিনি যদি তার মূল্যবান সামগ্রী বাংলাদেশে নিয়ে যেতে পারেন, তাহলে তার দেশে আসা-যাওয়ার খরচ তিনি দেবেন। তখন শাজাহান তার কাছে জানতে চান, কী জিনিস নিয়ে যেতে হবে? জিয়াউর তাঁকে বলেন, যখন তিনি (শাজাহান) দেশে ফিরবেন, তখন সেটা দিয়ে দেওয়া হবে।

পরে জিয়াউর রহমানের হোয়াটসঅ্যাপ নম্বরে শাজাহান ও আলিম তাদের পাসপোর্টের ছবি ও নিজেদের ছবি দেন। পরে শাজাহান ও আলিমের উড়োজাহাজের টিকিট কিনে দেন জিয়াউর। গত ২৫ এপ্রিল তাঁদের নিয়ে যাওয়া হয় দুবাইয়ের ডেরা নামের একটি এলাকায়। সেখানকার একটি বহুতল ভবনের পাঁচতলার একটি কক্ষে নেওয়া হয় তাঁদের। ওই কক্ষে আগে থেকেই চার থেকে পাঁচজন লোক ছিলেন। তাদের সবার বাড়ি সিলেটে। জিয়াউর রহমান তখন শাজাহান ও আলিমকে তিনটি আন্ডারওয়ার (অন্তর্বাস) ও তিনটি গেঞ্জি পরতে দেন।
আগে থেকেই সোনা চোরাচালানের খবর থাকায় আলিমকে সিলেট বিমানবন্দরে গ্রেপ্তার করে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। পরে তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। তাঁর কাছ থেকে শাজাহানের নাম জানতে পারে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। উড়োজাহাজটি সিলেট থেকে ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে বেলা সোয়া ১১টার দিকে।

এ সময় গোয়েন্দা সংস্থার সহযোগিতায় কাস্টমস কর্তৃপক্ষ শাজাহানকে গ্রেপ্তার করে। তখন স্বর্ণ থাকার তথ্য তিনি অস্বীকার করেন। পরে তাঁর শরীরে থাকা জামাকাপড় খুলে ফেলা হয়। টানা ৮ ঘণ্টা সেগুলো পুড়িয়ে ২ কেজি ৪১৭ গ্রাম স্বর্ণ উদ্ধার করে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ।