গৃহহীন ও ভূমিহীনমুক্ত হলো দেশের আরও ১২ জেলা। আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের আওতায় এসব জেলার ভূমিহীন ও গৃহহীন আরও ২২ হাজার ১০১টি পরিবারের মধ্যে জমিসহ সেমিপাকা ঘর হস্তান্তর করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ নিয়ে গৃহ ও ভূমিহীনমুক্ত জেলার সংখ্যা ২১টি।
বুধবার (৯ আগস্ট) সকালে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে যুক্ত হয়ে গৃহহীন ও ভূমিহীন পরিবারগুলোর মধ্যে ভূমিসহ সেমিপাকা ঘর হস্তান্তর করেন প্রধানমন্ত্রী।
খুলনা জেলার তেরখাদা উপজেলার বারাসত সোনার বাংলা পল্লি আশ্রয়ণ প্রকল্প, পাবনার বেড়া উপজেলার চাকলা আশ্রয়ণ-২ প্রকল্প এবং নোয়াখালীর বেগমগঞ্জের আমানউল্লাহপুর আশ্রয়ণ প্রকল্পে আরও ২২ হাজার ১০১ পরিবারের হাতে জমির দলিল তুলে দেওয়ার মধ্য দিয়ে ১২টি জেলাকে গৃহহীন ও ভূমিহীনমুক্ত ঘোষণা করেন প্রধানমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় সূত্র, প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ণ প্রকল্পের ধারাবাহিক কার্যক্রমে মুজিব বর্ষ থেকে এখন পর্যন্ত ২ লাখ ৩৮ হাজার ৮৫১ পরিবার পেয়েছে ঘর। বুধবার আরও ২২ হাজার ১০১ পরিবারের হাতে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জমির দলিল তুলে দেন।
এর আগে সোমবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের করবী হলে এক সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মোহাম্মদ তোফাজ্জেল হোসেন মিয়া এ তথ্য জানান। তিনি বলেন, আশ্রয়ণ প্রকল্প বিশ্বে একটি অনন্য প্রকল্প, কারণ পৃথিবীর আর কোনো দেশে এতো বিপুলসংখ্যক ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারের মধ্যে সম্পূর্ণ বিনা মূল্যে বাড়ি বিতরণ করা হয়নি।
এ সময় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন ও আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের পরিচালক আবু সালেহ মোহাম্মদ ফেরদৌস খান উপস্থিত ছিলেন।
আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের চতুর্থ ধাপের আওতায় এটি দ্বিতীয় পর্যায় এবং ২২ মার্চ, ২০২৩-এ দ্বিতীয় ধাপের অধীনে প্রথম দফায় ৩৯ হাজার ৩৬৫টি বাড়ি বিতরণ করা হয়।
২৩ জানুয়ারি, ২০২১-এ প্রথম পর্যায়ে ৬৩ হাজার ৯৯৯টি, ২০ জুন, ২০২১-এ দ্বিতীয় পর্যায়ে ৫৩ হাজার ৩৩০টি এবং মুজিব বর্ষের সময় তৃতীয় পর্যায়ে দুই ধাপে মোট ৫৯ হাজার ১৩৩টি বাড়ি বিতরণ করা হয়েছে। আরও ২২ হাজার ১০১টি ঘর বিতরণের মাধ্যমে, আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের অধীনে মোট সংখ্যা দাঁড়াবে ২ লাখ ৩৮ হাজার ৮৫১টি।
মুখ্য সচিব জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে তিন উপজেলায় ভার্চুয়ালি অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে সুবিধাগ্রহীতাদের মাঝে বাড়িসহ জমি হস্তান্তর করবেন। প্রধানমন্ত্রী খুলনা জেলার তেরখাদা উপজেলার বারাসত সোনার বাংলা পল্লী আশ্রয়ণ প্রকল্প, পাবনার বেড়া উপজেলার চাকলা আশ্রয়ণ-২ প্রকল্প এবং নোয়াখালীর বেগমগঞ্জের আমানউল্লাহপুর আশ্রয়ণ প্রকল্পের সুবিধাগ্রহীতাদের সঙ্গে সরাসরি মতবিনিময় করবেন। প্রকল্পের আওতায় ভূমিহীন ও গৃহহীনরা ২ দশমিক ২ শতাংশ জমিতে ভালো মানের টিনশেড আধাপাকা বাড়ি পাবেন।
তোফাজ্জেল হোসেন মিয়া বলেন, প্রধানমন্ত্রী মানিকগঞ্জ, রাজবাড়ী, ময়মনসিংহ, শেরপুর, দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও, নওগাঁ, নাটোর, পাবনা, কুষ্টিয়া, পিরোজপুর ও ঝালকাঠিকে গৃহহীন-ভূমিহীন মুক্ত জেলা হিসেবে ঘোষণা করবেন এবং এর আগে তিনি পঞ্চগড় ও মাগুরাসহ আরও নয়টি জেলাকে ভূমিহীন ও গৃহহীন মুক্ত জেলা ঘোষণা করবেন।
মুখ্য সচিব বলেন, নদীভাঙন, প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা অন্য কোনো কারণে এসব এলাকায় কেউ গৃহহীন ও ভূমিহীন হলে তাদের জমিসহ বাড়ি দেওয়া হবে। জমির মালিকানা স্বামী-স্ত্রী উভয়কে দেওয়া হয় এবং জমির রেজিস্ট্রেশন ও মিউটেশনও স্বামী-স্ত্রীর নামে দেওয়া হয়।
তোফাজ্জেল হোসেন মিয়া বলেন, সরকার শুধু খাসজমিতে প্রকল্পের জন্য বাড়ি নির্মাণ করছে না, বাড়ি নির্মাণের জন্য জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেমোরিয়াল ট্রাস্টের কাছ থেকে জমি কেনা হচ্ছে। এ লক্ষ্যে ব্যক্তিদের কাছ থেকেও অনুদান পাওয়া যায় বলে তিনি উল্লেখ করেন।
যাদের বাড়ি নেই, জমি আছে, তাদের জন্য সরকার কবে থেকে বাড়ি নির্মাণ শুরু করবে, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এখন সরকার এই প্রকল্পের আওতায় শুধু ভূমিহীন ও গৃহহীনদের বাড়ি দিচ্ছে এবং এই প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার পর যাদের বাড়ি নেই বা যাদের বাড়ি জরাজীর্ণ অবস্থায় রয়েছে তাদের জন্য বাড়ি নির্মাণ শুরু করবে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭২ সালে গৃহহীনদের পুনর্বাসন কর্মসূচি চালু করেন।
বঙ্গবন্ধুর পদাঙ্ক অনুসরণ করে তার কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৯৯৭ সালে আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে গৃহহীন ও ভূমিহীনদের বাড়ি ও জমির মালিকানা দেওয়ার উদ্যোগ নেন। আশ্রয়ণ প্রকল্পের আওতায় ১৯৯৭ সাল থেকে এ পর্যন্ত মোট ৮ লাখ ২৯ হাজার ৬০৭টি পরিবারকে পুনর্বাসন করা হয়েছে। পুনর্বাসিত মানুষের সংখ্যা ৪১ লাখ ৪৮ হাজার ৩৫ জন (আনুমানিক একটি পরিবারে পাঁচজন ব্যক্তি হিসাবে)।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের আশ্রয়ণ প্রকল্প ইতোমধ্যে ৫ লাখ ৫৫ হাজার ৬১৭ পরিবারকে সরাসরি পুনর্বাসন করেছে এবং ভূমি মন্ত্রণালয়, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় এবং মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট সরকারি দপ্তরের বিভিন্ন কর্মসূচির অধীনে ২ লাখ ৭৩ হাজার ৯৯০ পরিবারকে পুনর্বাসন করা হয়েছে।