• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ২১ মে, ২০২৪, ৭ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১,

টাঙ্গাইল শাড়ির জিআই স্বত্ব ভারতের, সমালোচনার ঝড়


সংবাদ প্রকাশ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ২, ২০২৪, ০৫:২২ পিএম
টাঙ্গাইল শাড়ির জিআই স্বত্ব ভারতের, সমালোচনার ঝড়
হাতে বোনা টাঙ্গাইল শাড়ি। ছবি : সংগৃহীত

বাংলাদেশের বিখ্যাত টাঙ্গাইল শাড়ির ভৌগোলিক নির্দেশক (জিআই স্বত্ব) পেয়েছে ভারতে পশ্চিমবঙ্গ সরকার। বৃহস্পতিবার (১ ফেব্রুয়ারি) ভারতের সরকারের মিনিস্ট্রি অব কালচারের অফিশিয়াল ফেসবুক পেইজ থেকে এ ঘোষণাটি আসে। এরপর থেকেই আলোচনার ঝড় ওঠে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। বাংলাদেশের নিজস্ব পণ্যের জিআই স্বত্ব ভারত পাওয়ায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন বাংলাদেশিরা।

ভারতীয় গণমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে, টাঙ্গাইল শাড়ির পাশাপাশি সুন্দরবনের মধুরও জিআই স্বত্ব পেয়েছে পশ্চিমবঙ্গ। 

জিআই হলো ভৌগোলিক নির্দেশক সনদ, যা উৎপাদককে উৎপাদিত পণ্যের ওপর স্বতন্ত্র অধিকার দেয়। এতে অন্য দেশের সমজাতীয় পণ্য থেকে তাদের পণ্য আলাদাভাবে চেনা যায়। এর ফলে ওই পণ্যের আলাদা পরিচিতি ও গ্রহণযোগ্যতা তৈরি হয়। বিশ্ববাজারে উৎপাদনকারীরা জিআই পণ্যের জন্য ভালো দামও পেয়ে থাকেন।

ভারত থেকে টাঙ্গাইল শাড়ির জিআই স্বত্ব পাওয়ার খবরে বাংলাদেশের সাংবাদিক জাহীদ রেজা নূর নিজের ফেসবুক একাউন্টে আজ শুক্রবার লিখেছেন, “টাঙ্গাইলে শাড়ি পশ্চিমবাংলার শাড়ি হয় কী করে!”

প্যারিস প্রবাসী চিত্রশিল্পী জান্নাতুন নাঈম প্রীতি লিখেছেন, “তেইশ ঘণ্টা আগে ভারতের কালচারাল মিনিস্ট্রি তাদের অফিশিয়াল পেজে ঘোষণা করেছে, টাঙ্গাইল শাড়ির জিআই স্বত্ব বা আঞ্চলিক নির্দেশক স্বত্ব এখন ভারতের। এর আগে জামদানিরও অর্ধেক দাবিও তারাই নিয়েছে। এখন এককভাবে টাঙ্গাইল নামের অঞ্চল থাকবে বাংলাদেশে এবং পরিচিত হবে ভারতীয় শাড়ি হিসেবে! …অস্ট্রেলিয়ার এক ন্যাচারাল হিস্ট্রি মিউজিয়ামে রয়েল বেঙ্গল টাইগারের নিবাস লেখা ছিলো ভারত, এই জিনিস দেখে আমার ভাই হতভম্ব হয়ে গেছিলো। লেখা বেঙ্গল টাইগার, কিন্তু লোকেশন লেখা ভারত। প্রশ্ন হচ্ছে, কেন? কারণ, অধিকার ছেড়ে দিলে, অন্যেরা এভাবে নিয়েই যায়। যেমন আগের কালে ময়ূর সিংহাসন নিয়ে গেছিলো সুলতান মাহমুদ। শুধু সময় বদলেছে, দখলদারিত্ব বহাল আছে। ...বাংলাদেশের ২১-২২টা পণ্যের কেবল জিআই স্বত্ব আছে, কিন্তু আমি নিশ্চিত আরও অনেককিছুই এখনো দাবি করা বাকি। অথচ সেসব দাবি করার কেউ কি আছে? আপনার দিক থেকে প্রতিবাদ নাই, দাবিদাওয়া নাই, আপনি সবসময় মাথা নিচু করে রাখবেন, আপনার এলাকার জিনিস নিয়ে গিয়ে আরেকজন নিজের এলাকার দাবি করবে না তো কী করবে?”

স্বত্ব পাওয়ার ঘটনায় পোশাক সংশ্লিষ্ট অনেকেই উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন সংবাদ প্রকাশের কাছে। বাংলাদেশের পোশাক ও ঐতিহ্য নিয়ে কাজ করেন শেখ সাইফুর রহমান। তিনি সংবাদ প্রকাশকে বলেন, “টাঙ্গাইল শাড়ি ফ্রম ওয়েস্ট বেঙ্গল এই নামে ভারত শাড়িগুলো মূলত তৈরি হয়, পশ্চিম বাংলার নদীয়া জেলার ফুলিয়া দুটো জায়গা পূর্ব বর্ধমান এবং নদীয়া থেকে।”

শেখ সাইফুর রহমান জানালেন টাঙ্গাইল শাড়ির জিআই স্বত্বের পাওয়ার ব্যাপারে কোনো ধারণাই ছিল না বাংলাদেশের তাঁত বোর্ডের। তিনি বলেন, “এটা নিয়ে আমি তাঁত বোর্ডের সাথে কথা বলতে গেলে আমার কাছ থেকে বিষয়টা তারা প্রথম জানতে পারে। কেন আবেদন করেনি টাঙ্গাইল শাড়ির জন্য, এই প্রশ্নের জবাবে তারা বলেছিলেন যে তাদের লোকবল কম, তাদের হাতে সময় ছিল না, সেজন্য তারা আবেদন করেননি। তাদের ফাইল পড়ে আছে।”

হাল ফ্যাশনের সম্পাদক শেখ সাইফুর রহমান আক্ষেপ প্রকাশ করে বলেন, “এটা আসলে আমাদের চরম ব্যর্থতা। আমাদের চরম ঔদাসীন্যের একটা উদাহরণ। ঠিক একইভাবে জামদানি জিআইটাও আমাদের হাতছাড়া হতে বসেছিল। তখন রুবি গজনবী বেঁচে ছিলেন, তিনি লড়াইটা না করলে হয়তো সত্যি সত্যিই জামদানির জিআই আমরা পেতাম না।”

শেখ সাইফুর রহমান যোগ করেন, “এখন টাঙ্গাইল শাড়ি নামেই আমরা জিআই পেতে পারি এবং এজন্য সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের উদ্যোগ নিয়ে আবেদন করতে হবে। ইতিমধ্যে তাঁত বোর্ড অবশ্যই আমার সাথে যোগাযোগ করেছিল। আমি চেষ্টা করেছি আমার কাছে যত তথ্য-উপাত্ত আছে তাদের দিয়ে সাহায্য করতে। এখন দেখা যাক তারা কী করে। তবে শুধু টাঙ্গাইল শাড়ি নয় বরং সিরাজগঞ্জ এবং মিরপুর বেনারসির জিআই নেওয়া উচিত এবং যত দ্রুত সম্ভব এই আবেদন গুলো করা উচিত।”

ভারতের গণমাধ্যমগুলোতেও স্বীকার করছে শুধু টাঙ্গাইল শাড়ি নয়, কড়িয়াল সিল্ক শাড়িও তৈরি হয় বাংলাদেশে। যেমন কলকাতা ভিত্তিক সংবাদ প্রতিদিনে বলা হয়, “…কড়িয়াল সিল্ক শাড়ি মুর্শিদাবাদের মির্জাপুরেই শুধু রয়েছে। যা বিশ্ববিখ্যাত। তবে এই শাড়ি তৈরি করার শিল্পী ক্রমশই কমে আসছে। বাংলাদেশও এই শাড়ি তৈরি করে। টাঙ্গাইল ও গরদ শাড়িরও সুনাম রয়েছে বাংলা ছাড়িয়ে ভিন রাজ্যেও। এখন বিশ্ববাংলার বিভিন্ন স্টলেও রাখা হচ্ছে এইসব দামি শাড়ি। বিদেশেও যা সমাদৃত।”

সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে নেটিজেনরা তো বটেই অনেক গবেষকও টাঙ্গাইল শাড়ির জিআই স্বত্ব পাওয়ার ব্যাপারে বাংলাদেশের কর্তৃপক্ষ যেন দ্রুত ও যথাযথ পদক্ষেপ নেয়, সে দাবি জানিয়েছেন।

Link copied!