• ঢাকা
  • শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫

মুক্ত বাংলায় ১১ ডিসেম্বর যশোরে প্রথম জনসভা


সংবাদ প্রকাশ ডেস্ক
প্রকাশিত: ডিসেম্বর ১১, ২০২৩, ০৪:৫৬ পিএম
মুক্ত বাংলায় ১১ ডিসেম্বর যশোরে প্রথম জনসভা
যশোরের টাউন হল ময়দানে ঐতিহাসিক সেই জনসভা। ছবি-বাসস

আজ ১১ ডিসেম্বর। বাঙালি জাতির জীবনের স্মরণীয় একটি দিন। ১৯৭১ সালের এই দিনে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর কবলমুক্ত বাংলার মাটিতে প্রথম যশোর টাউন হল ময়দানে বিজয় সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।

মুক্ত বাংলার প্রথম জনসভায় উপস্থিত ছিলেন প্রবাসী সরকারের অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম, প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ, মন্ত্রী ক্যাপ্টেন মনসুর আলী, ফণীভূষণ মজুমদার, সোহরাব হোসেন, ব্যারিস্টার আমিরুল ইসলাম, চরমপত্র পাঠক এমআর আকতার মুকুল, চলচ্চিত্রকার জহির রায়হান, অভিনেতা সৈয়দ হাসান ইমাম প্রমুখ।

সেদিনের সমাবেশে প্রবাসী সরকারের অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম তাঁর বক্তব্যে বাংলাদেশের ১ কোটি শরণার্থীকে আশ্রয় দেওয়া এবং স্বাধীন বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেওয়ার জন্যে ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান।

ওই সমাবেশ থেকে তিনি বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেওয়ার জন্যে বিশ্বনেতাদের প্রতি আহ্বান জানান।

প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ সমবেত জনতার উদ্দেশে বলেছিলেন, আর ধ্বংস নয়, যুদ্ধ নয়। এই মুহূর্তে কাজ হলো যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশকে গড়ে তোলা। তিনি সর্বস্তরের মানুষকে স্বাধীনতাযুদ্ধের চেতনায় দেশ পুনর্গঠনে আত্মনিয়োগ করার আহ্বান জানিয়েছিলেন।

সমাবেশ থেকে যশোরের তৎকালীন ডিসি ওয়ালি উল ইসলাম এবং কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কাঞ্চন ঘোষালকে নির্দেশ দিয়ে তিনি বলেন, “আইনশৃঙ্খলায় যেন অবনতি না ঘটে।”

একই সঙ্গে জনতাকে আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, “আপনারা আইন নিজের হাতে তুলে নেবেন না। অপরাধী যেই হোক, তাকে আইনের হাতে সোপর্দ করবেন।”

তাজউদ্দীন আহমদ বলেছিলেন, স্বাধীন এই দেশে ধর্ম নিয়ে আর রাজনীতি চলবে না। আর তাই জামায়াতে ইসলামী, মুসলিম লীগ ও নেজামে ইসলামকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হলো। 

সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি রওশন আলী, পরিচালনা করেন তাজউদ্দীন আহমদের রাজনৈতিক সচিব আলী তারেক।

মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন তবিবুর রহমান সরদার, শাহ্ হাদিউজ্জামান, যুদ্ধকালীন বৃহত্তর যশোর জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি, সাবেক সংসদ সদস্য প্রয়াত বীর মুক্তিযোদ্ধা খান টিপু সুলতান, বীর মুক্তিযোদ্ধা খুরশিদ আনোয়ার বাবলু (বর্তমানে আমেরিকাপ্রবাসী), প্রবাসী সরকারের ফটোগ্রাফার আব্দুল হামিদ রায়হান, ফটোগ্রাফার মুক্তিযোদ্ধা মো.শফি প্রমুখ।

আমেরিকাপ্রবাসী বীরমুক্তিযোদ্ধা খুরশিদ আনোয়ার বাবলু হোয়াটসঅ্যাপে সেদিনের স্মৃতিচারণা করে বলেন, এই জনসভা যখন হয় তখন যশোরের আশপাশে যুদ্ধ চলছিল। জনসভা শেষে নেতৃবৃন্দ সড়কপথে কলকাতা চলে যান।

সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন সেদিনের ছাত্রলীগ নেতা বীরমুক্তিযোদ্ধা অ্যাড. ভীম সেন। তিনি বলেন- “সেদিন ময়দানের পশ্চিমের প্রধান দ্বারের সোজাসুজি টাউন হলের সামনে দাঁড়িয়ে ছিলাম। চুরিপট্টি এলাকার খসরুসহ অনেকেই পাশে ছিলেন। তবে সব নাম এখন আর মনে নেই।”

তিনি বলেন, শীতের বিকেলের ৫টার আগেই সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমদসহ নেতারা সমাবেশস্থল ত্যাগ করেন।

দিবসটি স্মরণে আজ ১১ ডিসেম্বর জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে মুক্ত বাংলায় গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ অস্থায়ী সরকারের প্রথম জনসভা স্থলে (টাউন হল ময়দানের স্বাধীনতা মুক্ত মঞ্চে) আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। 

সূত্র-বাসস

Link copied!