রাজধানীর বঙ্গবাজারে মঙ্গলবার সকাল ৬টা ১০ মিনিটে আগুন লাগার খবর পায় ফায়ার সার্ভিস। এরপর পার্শ্ববর্তী সদর দপ্তর থেকে ৬টা ১২ মিনিটেই ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয় প্রথম ইউনিট। ভয়াবহ এ আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে ফায়ার সার্ভিসের ৫০টি ইউনিট। তাদের আপ্রাণ চেষ্টার পরেও বাতাসের কারণে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হচ্ছে না। এর মধ্যেই বিক্ষুব্ধ জনতা ফায়ার সার্ভিসের সদর দপ্তরে হামলা করেছে।
ফায়ার সার্ভিসের নিয়ন্ত্রণ কক্ষের ডিউটি অফিসার রিমা খানম বলেন, “আমাদের লোকজন আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করতে গিয়ে আহত হচ্ছেন। আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে। কিন্তু কিছু মানুষ আমাদের সদর দপ্তরে এসে অফিসে হামলা করেছে। গাড়িও ভাঙচুর করেছে।”
উত্তেজিত জনতা মঙ্গলবার (৪ এপ্রিল) সকাল সাড়ে ৯টার দিকে বঙ্গবাজারের উল্টোপাশে ফায়ার সার্ভিসের সদর দপ্তরে ইটপাটকেল ছুড়ে হামলা চালিয়েছে। এতে বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন। বিক্ষুব্ধ জনতার হাত থেকে বাঁচতে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ভবনের ভেতরে নিরাপদে অবস্থান নেন।
হামলায় ফায়ার (মিডিয়া) রবিউল ইসলাম অন্তর (২৩) ও ফায়ার ফাইটার আতিকুর রহমান (২৪) এবং বঙ্গবাজারের দোকান মালিক শাহিন ও নিলয় নামে দুজন আহত হয়েছেন। তাদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সূত্রে জানা গেছে, পরিস্থিতি এখন নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। উত্তেজিত জনতা প্রধান কার্যালয়ের সামনে থেকে সরে গেছে।
বেশ কয়েকজন ব্যবসায়ীর অভিযোগ, বঙ্গবাজারের উল্টোপাশে হাঁটা দূরত্বে ফায়ার সার্ভিসের অফিস হলেও আগুন নিয়ন্ত্রণের কাজে শুরুতে গড়িমসি করেছে তারা। সঠিকভাবে কাজ শুরু করলে এত ভয়াবহ অবস্থা হতো না বলে দাবি তাদের।
এদিকে আগুনের তীব্রতা বেড়েই চলেছে। আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনীর সাহায্যকারী দল। যোগ দিয়েছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) একটি দলও।
পুলিশ উৎসুক জনতার ভিড় নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে। এর মধ্যে বাড়তি বাধা হিসেবে যুক্ত হয়েছে উৎসুক জনতার ভিড়। জনতার ভিড়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে কিছুটা বেগ পেতে হচ্ছে ফায়ার সার্ভিসকে। ঘটনাস্থলে উপস্থিত শত শত মানুষ আগুন নিয়ন্ত্রণে কোনো ধরনের সহায়তা না করে মোবাইল ফোনে ভিডিও ধারণে ব্যস্ত।
ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তা জানিয়েছেন, উৎসুক জনতার জন্য কাজ করা আরও কঠিন হয়ে পড়েছে। তাদের কারণে দোকানিরা তাদের মালামালও সরাতে পারছেন না।
এই আগুন আশপাশের আরও চারটি মার্কেটে ছড়িয়ে পড়েছে। বঙ্গবাজার মার্কেট, ইসলামিয়া মার্কেট, বঙ্গ ১০ কোটি মার্কেট, আদর্শ মার্কেট—এই চারটি মার্কেট এক জায়গায় হওয়ায় মূলত সব কটিতেই লোকজন বঙ্গবাজার মার্কেট হিসেবে ডেকে থাকেন। এই চারটি মার্কেটে প্রায় তিন হাজার দোকান রয়েছে বলে ব্যবসায়ীরা জানান। নানা রকম কাপড় থাকায় আগুনের তীব্রতা বাড়ছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, বঙ্গবাজার মার্কেট ছাড়াও রাস্তার উল্টো পাশে একটি মার্কেটে আগুন ছড়িয়ে পড়েছে। বঙ্গবাজারে আগুনের তীব্রতার কারণে সড়কে রাখা ফায়ার সার্ভিসের গাড়িগুলো দূরে সরিয়ে ফেলতে হয়েছে। দূরে থাকা গাড়িগুলো থেকে পাইপ সংযোগ দিয়ে পানি নিক্ষেপ করতে দেখা যায় ফায়ার সার্ভিস কর্মীদের। আগুনের কারণে ধোঁয়ার কুণ্ডলীতে ছেয়ে গেছে বঙ্গবাজারের আকাশ। ভয়াবহ এ আগুনের কারণে প্রচণ্ড তাপ অনুভূত হচ্ছে।