• ঢাকা
  • শুক্রবার, ০৩ মে, ২০২৪, ২০ বৈশাখ ১৪৩১, ২৪ শাওয়াল ১৪৪৫
ডেঙ্গু সংক্রমণ

ডিএনসিসি হাসপাতালে চাপ বাড়ছে রোগীর, ৪৮ দিনে মৃত্যু ৩০


জাহিদ রাকিব
প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ৫, ২০২৩, ০৮:৩৮ পিএম
ডিএনসিসি হাসপাতালে চাপ বাড়ছে রোগীর, ৪৮ দিনে মৃত্যু ৩০
ডিএনসিসি হাসপাতালের শয্যায় ডেঙ্গু আক্রান্ত শিশুর পাশে মা। ছবি-সংবাদ প্রকাশ

ডেঙ্গুর ভয়াবহতা যেন সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে। সারাদেশে প্রতিদিন আড়াই হাজারেরও বেশি ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হচ্ছে। বাড়ছে মৃত্যুও।

রাজধানী ঢাকার মহাখালীতে ডিএনসিসি হাসপাতালকে ডেঙ্গু ডেডিকেটেড ঘোষণা করা হয় গত জুলাইয়ের ১৭ তারিখ। এই হাসপাতালে প্রতিদিন যেমন বাড়ছে রোগী, বাড়ছে তেমন মৃত্যুসংখ্যা। হাসপাতালটিতে ৪৮ দিনে মারা গেছে ৩০ ডেঙ্গু রোগী। চিকিৎসা নিয়েছেন ৩ হাজার ৯৩৬ জন।

ডেঙ্গুর ভয়াবহতা বেড়েছে দেশের অন্যান্য হাসপাতালেও। এখন পর্যন্ত চিকিৎসাধীন অবস্থায় বেশি রোগী মারা গেছে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। চলতি বছর সেখানে মারা যায় ১১১ জন। এর পরের ধাপে  রয়েছে ডেঙ্গু চিকিৎসায় আলোচিত মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। চলতি বছর ওই হাসপাতালে মারা যায় ১০৪ জন।

ঢাকার বাইরে বেশি মৃত্যু হয়েছে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। সেখানে মারা গেছে ৩৫ জন। দেশে অতীতের সব রেকর্ড পিছনে ফেলে চলতি বছর আক্রান্তের সংখ্যা ছাড়িয়েছে ১ লাখ ৩৩ হাজার ১৩৪ জন। আক্রান্ত হয়ে মারা যায় ৬৪৬ জন।

সরজমিনে রাজধানীর মহাখালী ডিএনসিসি হাসপাতালে দেখা যায়, এখানে ৫০০ শয্যা নির্ধারণ করা আছে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীদের জন্য। তার ৩৪৬টিতেই ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী ভর্তি রয়েছে। ঢাকার অন্যান্য হাসপাতালে ভর্তি হতে না পেরে রোগী নিয়ে স্বজনরা ছুটে আসছেন এই হাসপাতালে। এখানে ভর্তি রোগীদের মধ্যে ১৫ থেকে ৪০ বছর বয়সীর সংখ্যা বেশি।

হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রফিকুল ইসলাম সংবাদ প্রকাশকে বলেন, “আমি রাজবাড়ী থেকে এসেছি। প্রথমে প্রচণ্ড জ্বরে আক্রান্ত হলে বালিয়াকান্দি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হই। পরে সেখান থেকে ডিএনসিসি হাসপাতালে পাঠিয়ে দেয়। এখানে রোগীর চাপ অনেক বেশি। কিন্তু চিকিৎসা ভালো, একটু পর পর ডাক্তার এসে দেখে। সমস্যা হচ্ছে হাসপাতাল থেকে সব ওষুধ দেয় না আমাদের, অনেক ওষুধ বাইরে থেকে কিনতে হয়। এতে বেশি টাকা খরচ হচ্ছে।”

তেজগাঁও এলাকার বাসিন্দা মেহেদী হাসান ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে গতকাল ভর্তি হয়েছেন এই হাসপাতালে। তিনি সংবাদ প্রকাশকে বলেন, “এখানে চিকিৎসা ব্যবস্থা ভালো হলেও কিছু ক্ষেত্রে ভোগান্তি রয়েছে। প্রতিদিন দুই বেলা করে রক্তের প্লাটিলেট পরীক্ষা করতে হয় আমাদের। তখন রক্ত পরীক্ষা জমা দেওয়া, টেস্টের রিপোর্ট পাওয়া, এবং ওষুধ সংগ্রহ করতে লম্বা লাইনে ভোগান্তি পোহাতে হয় আমাদের। সবাই ডেঙ্গু রোগী হওয়ায় ভিড় লেগেই থাকে এখানে।” 

গত শনিবার মিরপুর থেকে জ্বর ও শরীর ব্যথা নিয়ে ডিএনসিসি হাসপাতালে ডেঙ্গু পরীক্ষা করেছেন আফজাল হোসেন। ডেঙ্গুর রিপোর্ট পজিটিভ আসায় ওই দিনই হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন তিনি।

সংবাদ প্রকাশকে আফজাল হোসেন বলেন, “৫ থেকে ৬ দিন ধরে আমার জ্বর ছিল, সারা শরীরে তীব্র ব্যথা। ফার্মেসি থেকে ওষুধ খেয়েও শরীর ভালো না হওয়ায় ডেঙ্গু পরীক্ষা করি, তারপরে হাসপাতালে ভর্তি হই। জ্বর কমলেও এখনো শরীর ব্যথা ও মুখে রুচি ঠিক হয় নাই।”

হাসপাতালটির ভারপ্রাপ্ত পরিচালক কর্নেল এ কে এম জহিরুল হোসাইন খান সংবাদ প্রকাশকে বলেন, “আমাদের হাসপাতালে মৃত্যুর প্রধান কারণ এখানে খুবই ক্রিটিক্যাল কন্ডিশন, প্লাটিলেট কমে যাওয়া, শক সিনড্রোম, রক্তচাপ কমে যাওয়াসহ খারাপ অবস্থায় রোগী আসেন। এছাড়া ঢাকা ও ঢাকার বাইরের অনেক রোগী বিভিন্ন হাসপাতাল থেকে স্থানান্তর হয়ে আসেন। স্থানান্তরিত রোগীদের কন্ডিশন ভালো থাকে না। বিভিন্ন হাসপাতাল থেকে খারাপ অবস্থায় রোগীদের এই হাসপাতালে ট্রান্সফার করা হয়। এসব রোগীর কারণে মৃত্যুহারও বেশি।”

Link copied!