• ঢাকা
  • সোমবার, ৩০ জুন, ২০২৫, ১৬ আষাঢ় ১৪৩২, ০৪ মুহররম ১৪৪৬

ব্যাটারির রিকশা নিয়ে যেসব সিদ্ধান্ত আসছে


সংবাদ প্রকাশ ডেস্ক
প্রকাশিত: জুন ৩০, ২০২৫, ০৮:৪৪ এএম
ব্যাটারির রিকশা নিয়ে যেসব সিদ্ধান্ত আসছে
ছবি : সংগৃহীত

শৃঙ্খলা ফেরাতে সড়কে ব্যাটারিচালিত রিকশার নতুন সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে সরকার। আদালতের নির্দেশনা মেনে সিটি করপোরেশন এলাকায় ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার চলাচল নিয়ন্ত্রণের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এই উদ্যোগের প্রথম ধাপে, ব্যাটারিচালিত রিকশা ও চালক উভয়কেই লাইসেন্সের আওতায় আনা হবে। এ ছাড়া স্থানীয় সরকার বিভাগের তত্ত্বাবধানে ব্র্যাকের মাধ্যমে ব্যাটারিচালিত রিকশাচালকদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। তাদের জন্য বিমা এবং রিকশার ফিটনেস সনদ নিয়েও আসছে বাধ্যবাধকতা।

জানা গেছে, ব্যাটারিচালিত রিকশা ও চালকদের ডাটাবেজ প্রস্তুত করার লক্ষ্যে ইউনিফাইড ফরম তৈরি করা হয়েছে। এরই মধ্যে ‘তিন চাকার স্বল্পগতির ব্যাটারিচালিত রিকশার স্ট্যান্ডার্ড মডেলের ডিজাইন ও স্পেসিফিকেশন’ অনুমোদন করা হয়েছে। সেটি পরবর্তী প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণের লক্ষ্যে ঢাকা দক্ষিণ ও উত্তর সিটি কর্পোরেশনসহ সব সিটি কর্পোরেশনে পাঠানো হয়েছে।

ব্যাটারিচালিত রিকশার (ই-রিকশা) টাইপ অনুমোদনের জন্য একটি কারিগরি কমিটি গঠন করা হয়েছে। এই কমিটির নেতৃত্বে রয়েছেন অতিরিক্ত সচিব (নগর উন্নয়ন অনুবিভাগ) এবং এতে বিআরটিএ, বুয়েট, বিএসটিআই, এমআইএসটি এবং ঢাকা দক্ষিণ ও ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের কারিগরি জ্ঞানসম্পন্ন কর্মকর্তারা সদস্য হিসেবে আছেন। এ ছাড়া স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিবের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এক সভায় ই-রিকশা চলাচল সংক্রান্ত প্রবিধান চূড়ান্ত করার বিষয়ে স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা সিদ্ধান্ত দিয়েছেন।

বাধ্যতামূলক হচ্ছে নিবন্ধন 

তিন চাকার স্বল্পগতির ব্যাটারিচালিত রিকশার নিবন্ধন বাধ্যতামূলক করা হচ্ছে। নিবন্ধনের এই দায়িত্ব দেওয়া হবে সিটি কর্পোরেশনকে। সিটি কর্পোরেশন এটির জন্য একটি ইউনিক রেজিস্ট্রেশন নম্বর ও নম্বর প্লেটও প্রদান করবে। একটি জাতীয় পরিচয়পত্রের অনুকূলে একটির বেশি ব্যাটারিচালিত রিকশার নিবন্ধন করা যাবে না। নিবন্ধন নবায়নের জন্য প্রতি দুই বছর অন্তর ফিটনেস পরীক্ষা বাধ্যতামূলক করা হচ্ছে। ব্যাটারিচালিত রিকশার মালিক হতে ইচ্ছুক হলে সেটির জন্য উপযুক্ত বৈধ বিমা নিতে পারবেন, তবে এটি নিবন্ধনের আবশ্যিক শর্ত নয়।

লাইসেন্স পেতে লাগবে যোগ্যতা

একটি তিন চাকার স্বল্পগতির ব্যাটারিচালিত রিকশার ক্ষেত্রে চালকের লাইসেন্স প্রয়োজন হবে। এক্ষেত্রে লাইসেন্স পেতে চালকের অবশ্যই ন্যূনতম বয়স ১৮ বছর হতে হবে এবং বাংলা লিখতে ও পড়তে জানতে হবে। তাদের সিটি করপোরেশন কর্তৃক নির্ধারিত সরকারি হাসপাতাল হতে দৃষ্টিশক্তিসহ স্বাস্থ্য পরীক্ষার সনদ সংগ্রহ করতে হবে। চালকদের লাইসেন্স নবায়নের জন্য ৫ বছর অন্তর চালকদের ড্রাইভিং পরীক্ষার ব্যবস্থা থাকবে। চালকগণ ট্রাফিক আইন, সড়ক নিরাপত্তা, রোড মার্কিং, ট্রাফিক সাইন ও ব্যাটারি রক্ষণাবেক্ষণ সংক্রান্তে সিটি কর্পোরেশনের নির্ধারিত প্রতিষ্ঠান হতে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করবেন। 

এ ছাড়া চালকের জন্য ব্যক্তিগত দুর্ঘটনা বিমা নেওয়া বাধ্যতামূলক এবং এসম্পর্কিত প্রিমিয়াম চালক বা মালিক যে কেউ পরিশোধ করতে পারবেন। বিমার কভারেজ চলমান আছে কি না তা নিরীক্ষণের জন্য সিটি কর্পোরেশন সময়কালভিত্তিক পর্যালোচনা করতে পারবে। এই বিমা সনদ নবায়নের কপি প্রতি বছর নিবন্ধন কর্তৃপক্ষ বরাবর জমা দিতে হবে। প্রযোজ্য ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট বিমা প্রতিষ্ঠান ক্ষতিপূরণ প্রদান ও দাবি নিষ্পত্তির দায়িত্ব পালন করবে। বিমা গ্রহণ সংক্রান্ত যাবতীয় রেকর্ড চালকের লাইসেন্স ফাইলে সংযুক্ত রাখা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। মালিক ইচ্ছুক হলে নিজ বা যানবাহনের জন্য অতিরিক্ত বিমা গ্রহণ করতে পারবেন। এক্ষেত্রে সিটি কর্পোরেশন সচেতনতামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করবে।

আকার: প্রতিটি তিন চাকার ব্যাটারিচালিত রিকশার সর্বোচ্চ দৈর্ঘ্য হবে ২৫০ সে.মি. এবং সর্বোচ্চ প্রস্থ হবে ১১০ সে.মি.।

ডিজাইন ও অনুমোদন: সিটি কর্পোরেশনের অনুমোদিত স্ট্যান্ডার্ড ডিজাইন গাইডলাইন অনুযায়ী, প্রতিটি মডেলের ই-রিকশার ডিজাইন সংশ্লিষ্ট সিটি কর্পোরেশন থেকে টাইপ-অনুমোদন নিতে হবে।

উৎপাদন: শুধু সিটি কর্পোরেশন কর্তৃক অনুমোদিত কারখানা বা ওয়ার্কশপ নিজ ব্র্যান্ড নামে ই-রিকশা প্রস্তুত করতে পারবে।

যাত্রী ধারণক্ষমতা: চালক ব্যতীত একটি ই-রিকশা সর্বোচ্চ দুজন যাত্রী বহন করতে পারবে।

গতিসীমা: সর্বোচ্চ গতিসীমা ঘণ্টায় ৩০ কিলোমিটার। স্কুলজোনে সর্বোচ্চ গতিসীমা ঘণ্টায় ১৫ কিলোমিটার। রিকশাগুলো নির্ধারিত গতিসীমা অতিক্রম করতে পারবে না এবং এর জন্য গতি নিয়ন্ত্রক যন্ত্র সংযুক্ত থাকতে হবে।

দুর্ঘটনা ও শাস্তি : দুর্ঘটনার পর চালক পালিয়ে গেলে (হিট-অ্যান্ড-রান) তার লাইসেন্স স্থায়ীভাবে বাতিল করা হবে এবং ট্রাফিক পুলিশ বিভাগ আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।

প্রতিটি রিকশায় বৈধ এলইডি হেডলাইট, ব্রেকলাইট, রিভার্স লাইটিং, হর্ন ও লুকিং গ্লাস বাধ্যতামূলক করা হচ্ছে। তবে অতিরিক্ত লাইটের ব্যবহার করা যাবে না বলেও জানানো হয়েছে। রিকশায় উচ্চ দক্ষতার লিথিয়াম-আয়ন/লেড এসিড ব্যাটারি ব্যবহার করা যাবে। ব্যাটারিতে ফায়ার-প্রুফ কেসিং ও সঠিক ইলেকট্রিক নিরোধক (ইনসুলেশন) থাকবে। রিকশার উচ্চতা, ওজন, টার্নিং রেডিয়াস, গ্রাউন্ড ক্লিয়ারেন্স অনুমোদিত স্ট্যান্ডার্ড ডিজাইন গাইডলাইন অনুযায়ী হবে। রিকশায় ব্যবহার করা মোটর, চেসিস ও বডি তৈরির প্রক্রিয়া এবং সুরক্ষা ব্যবস্থাসহ সব যন্ত্রাংশ অনুমোদিত স্ট্যান্ডার্ড ডিজাইন গাইডলাইন অনুযায়ী মানসম্মত হবে। প্রতিটি তিন চাকার স্বল্পগতির ব্যাটারিচালিত রিকশার লাইফটাইম হবে ৫ বছর। এসব স্বল্পগতির রিকশায় পর্যায়ক্রমে জিপিএস ট্র্যাকিং সিস্টেম/ভেহিকেল ট্রাকিং সিস্টেম স্থাপন করার পরিকল্পনাও রয়েছে সরকারের।

Link copied!