• ঢাকা
  • শুক্রবার, ০৩ মে, ২০২৪, ২০ বৈশাখ ১৪৩১, ২৪ শাওয়াল ১৪৪৫

পরিত্যক্ত মার্কেটে ব্যবসা, রাজস্ব থেকে বঞ্চিত ডিএনসিসি


জাহিদ রাকিব
প্রকাশিত: অক্টোবর ২৬, ২০২২, ০৯:৫৯ পিএম
পরিত্যক্ত মার্কেটে ব্যবসা, রাজস্ব থেকে বঞ্চিত ডিএনসিসি

ঝুঁকিপূর্ণ ভবন বিবেচনায় ২০০৬ সালে অবিভক্ত ঢাকা সিটি করপোরেশনের (ডিসিসি) তৎকালীন মেয়র সাদেক হোসেন খোকা রায়েরবাজার মার্কেটটি পরিত্যক্ত ঘোষণা করেন। ১৬ বছর আগে পরিত্যক্ত ঘোষণার পরে মার্কেটটি সংস্কার বা নতুন করে নির্মাণ করেনি ডিএনসিসি। মার্কেটের ৯৭৫টি দোকানের ট্রেড লাইন্সেস বাতিলের পরে এখনো ব্যবসা করছে তারা। ফলে ডিএনসিসি যেমন কোটি টাকা রাজস্ববঞ্চিত হচ্ছে, তেমনি আছে দুর্ঘটনার ঝুঁকি।

ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মার্কেটটি ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণার পর নতুন করে কাউকে ট্রেড লাইসেন্স দেয়নি সিটি করপোরেশন। পাশাপাশি নতুন করে নবায়ন হয়নি কোনো লাইসেন্স। ফলে এখানে ব্যবসা করা ৯৭৫টি দোকানমালিক রাজস্ব দিচ্ছেন না ডিএনসিসিকে। ঝুঁকিপূর্ণ ভবন হওয়া মার্কেটটিতে ক্রেতার সংখ্যাও কমছে দিন দিন।

সরেজমিন মার্কেটটি দেখা যায়, ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে চলছে ব্যবসা কার্যক্রম। প্রতিটি দোকানের ছাদের অংশ থেকে পড়ছে ভাঙা ইট-সিমেন্টের টুকরা। একই সঙ্গে ঝুঁকি নিয়েই চলছে কেনাকাটা।

২৫ বছর ধরে রায়েরবাজার মার্কেটটিতে কাপড়ের ব্যবসা করছেন আব্দুর রহীম। তিনি সংবাদ প্রকাশকে বলেন, “ঝুঁকিপূর্ণ ভবন হওয়ায় দিন দিন কমছে বিক্রি। প্রতিনিয়ত ছাদের আস্তরণ খসে পড়ছে। অনেক ক্রেতা ভয়ে আসছেন না মার্কেটটিতে।”

আব্দুর রহীম আরও বলেন, “সিটি করপোরেশন আমাদের বিকল্প এক জায়গায় ব্যবসার সুযোগ দিয়ে দ্রুত মার্কেট ভেঙে নতুন করে কাজ শুরু করুক। নতুন মার্কেট হলে আমাদের ব্যবসা আরও ভালো হবে।”

রায়েরবাজার মার্কেটে প্লাস্টিক সামগ্রী বিক্রি করা রাসেল এন্টারপ্রাইজের মালিক মোহাম্মদ সোহেল সংবাদ প্রকাশকে বলেন, “প্রায় সময় ছাদের আস্তরণ খসে পড়ে দোকানের মালামাল নষ্ট হয়। নতুন ভবন করে আমাদের জায়গা দেওয়া হোক।”

ডিএনসিসি সূত্রে জানা যায়, ৭২ হাজার বর্গফুটের বেশি আয়তনের মার্কেটটিতে দোকান রয়েছে ৯৭৫টি। মার্কেটটি বর্তমানে অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। ২০০৬ সালের ২৪ এপ্রিল তৎকালীন মেয়র সাদেক হোসেন খোকা মার্কেটটি পরিত্যক্ত ঘোষণা করেন। পরে মার্কেটটি ২০০৭ সালে ১২ জুলাই উন্মুক্ত দরপত্রের মাধ্যমে নিলামে বিক্রি করা হয়। তখন নিলাম ক্রেতা মার্কেটের কিছু অংশ অপসারণ করে। বাকি মার্কেট আগের মতোই রয়ে যায়। ২০১৯ সালের ১৪ জানুয়ারি ডিএনসিসির এক সভায় মার্কেটটি পরিত্যক্ত ঘোষণা করে আবার ভাঙার সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু এবারও অদৃশ্য কারণে আর ভাঙা হয়নি।

মার্কেটটি ডিএনসিসির অঞ্চল-৫ এলাকার আওতাধীন। ওই অঞ্চলের নির্বাহী কর্মকর্তা (উপসচিব) মোতাকাব্বীর আহমেদ সংবাদ প্রকাশকে বলেন, “অনেক আগে থেকেই রায়েরবাজার মার্কেটটি ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে তালিকাভুক্ত আছে। মার্কেট পরিদর্শন করে একাধিকবার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি অবহিত করেছি। কিন্তু উচ্ছেদের বিষয়ে এখন কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত না আসায় আমরা কোনো ব্যবস্থা নিতে পারছি না।”

রায়েরবাজার সিটি করপোরেশন মার্কেট বণিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল জলিল সংবাদ প্রকাশকে বলেন, “রাজস্ব জমা দেওয়ার বিষয়ে আমরা একাধিকবার সিটি করপোরেশনে চিঠি দিয়েছি। কিন্তু তাদের কোনো সাড়া পাইনি। আমরা চাই নতুন ভবন হোক, যাতে আমরাও নিরাপদে ব্যবসা করতে পারি।”

ঝুঁকিপূর্ণ মার্কেটে ব্যবসা ও ডিএনসিসির রাজস্ব বঞ্চিত হওয়া নিয়ে কথা হয় ডিএনসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) সেলিম রেজার সঙ্গে। তিনি সংবাদ প্রকাশকে বলেন, “মার্কেটটি ঝুঁকিপূর্ণ হয়েছে ১৬ বছর আগে। কিন্তু কিছু আইনি জটিলতায় আমরা ব্যবস্থা নিতে পারিনি। মার্কেট ভেঙে নতুন করে করার সব পরিকল্পনা চূড়ান্ত হয়েছে। স্বল্প সময়ের মধ্য আমরা এটা বাস্তবায়ন করব।”

Link copied!