আন্তর্জাতিক আর্থিক সাময়িকী গ্লোবাল ফাইন্যান্স–এর সর্বশেষ মূল্যায়নে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর পেয়েছেন ‘সি’ গ্রেড। অর্থাৎ, তার নেতৃত্বে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পারফরম্যান্সকে সংস্থাটি “মিশ্র” বা মাঝারি মানের হিসেবে চিহ্নিত করেছে।
সম্প্রতি প্রকাশিত ‘সেন্ট্রাল ব্যাংকার রিপোর্ট কার্ড ২০২৫’–এ বলা হয়েছে, মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, প্রবৃদ্ধি অর্জন, মুদ্রার স্থিতিশীলতা ও নীতিগত বিশ্বাসযোগ্যতা—এই চার সূচকে বাংলাদেশ ব্যাংক গড় মানের ফল করেছে।
তুলনায়, প্রতিবেশী শ্রীলঙ্কার গভর্নর নন্দলাল উইরাসিংহে পেয়েছেন ‘এ’ গ্রেড, আর ভিয়েতনামের নুয়েন থি হং পেয়েছেন সর্বোচ্চ ‘এ প্লাস’।
২০২৪ সালের ৫ আগস্ট সরকার পরিবর্তনের পর গভর্নর হিসেবে দায়িত্ব নেন আহসান এইচ মনসুর। দায়িত্ব নেওয়ার সময় দেশের অর্থনীতি নানা সংকটে জর্জরিত ছিল—রাজনৈতিক অস্থিরতা, ব্যাংক খাতের অনিয়ম, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ঘাটতি এবং লাগামহীন মুদ্রাস্ফীতি।
দায়িত্ব পাওয়ার পর মনসুর প্রথমেই রিপো রেট ৮.৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১০ শতাংশে উন্নীত করেন, যাতে মুদ্রাস্ফীতি কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আসে। তবে এর প্রভাবে প্রবৃদ্ধি কমে ২০২৫ অর্থবছরে জিডিপি ৩.৯ শতাংশে নেমে এসেছে, যা গত দশকের গড় ৬ শতাংশের তুলনায় অনেক নিচে।
মনসুরের নেতৃত্বে বাংলাদেশ ব্যাংক বর্তমানে আইএমএফের সহায়তায় তিন বছরের ব্যাংকখাত সংস্কার কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে। এই কর্মসূচিতে খেলাপি ঋণ হ্রাস, দেউলিয়া আইন হালনাগাদ ও ব্যাংক পরিচালনায় স্বচ্ছতা বাড়ানোর লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে গ্লোবাল ফাইন্যান্স জানিয়েছে, এই পরিকল্পনাগুলোর বাস্তবায়ন গতি সন্তোষজনক নয়।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, “আহসান এইচ মনসুরের নীতি নির্দেশনা যুক্তিসংগত ও বাস্তবভিত্তিক হলেও বাস্তবায়নে ধীরগতি রয়েছে; ফলে জনগণ ও বাজারের আস্থা পুরোপুরি ফিরে আসেনি।”
২০২৩ সালে সাবেক গভর্নর আবদুর রউফ তালুকদার পেয়েছিলেন ‘ডি’ গ্রেড। সেই তুলনায় মনসুরের সময়ে বাংলাদেশের অবস্থান কিছুটা উন্নত হয়েছে। তবে এখনো কেন্দ্রীয় ব্যাংক কাঙ্ক্ষিত মানে পৌঁছাতে পারেনি বলে মন্তব্য করেছে সাময়িকীটি।
অর্থনীতিবিদদের মতে, ‘সি’ গ্রেড মানে হলো নীতি সঠিক পথে থাকলেও বাস্তব ফলাফল এখনো দৃশ্যমান নয়। মুদ্রাস্ফীতি, ঋণ অনিয়ম ও ডলারবাজারের অস্থিরতা নিয়ন্ত্রণে না আসায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক এখনো কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে রয়েছে।
তাদের মতে, গ্লোবাল ফাইন্যান্সের এই মূল্যায়ন মনসুরের জন্য একধরনের “ওয়ার্নিং সিগন্যাল”—যদি সংস্কার কার্যক্রমে গতি না বাড়ানো হয়, তবে ভবিষ্যতে আরও নিম্ন গ্রেডের ঝুঁকি থেকে মুক্ত থাকা কঠিন হবে।





























