সন্ত্রাসবিরোধী রাজু ভাস্কর্য কালো কাপড়ে ঢেকে দেওয়ার পরদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আবারও ছাত্র ইউনিয়নের ওপর হামলার ঘটনা ঘটেছে। হামলায় ছাত্র ইউনিয়ন (একাংশ) ঢাবি সংসদের সভাপতিসহ আহত হয়েছেন চারজন।
বৃহস্পতিবার (১৪ ডিসেম্বর) দুপুর দেড়টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।
ছাত্র ইউনিয়নের অভিযোগ, ছাত্রলীগ এ হামলা চালিয়েছে। শহীদ বুদ্ধিজীবীদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করার পর টিএসসি থেকে আড্ডা দিয়ে ফেরার পথে শাহবাগ, টিএসসি ও ভিসি চত্বরে তাদের ওপর এ হামলার ঘটনা ঘটে।
এর আগে, মঙ্গলবার সন্ধ্যায় গণতান্ত্রিক ছাত্র জোটের মশাল মিছিলেও ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা হামলা চালায়। সেদিনের ঘটনায় বেশ কয়েকজন আহত হন। হামলা করে উল্টো অভিযোগ দিয়ে রাজু ভাস্কর্যে কালো কাপড় বেঁধে দেওয়া হয়।
আহতরা হলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি মেঘমল্লার বসু (২৭), সাধারণ সম্পাদক মঈন আহমেদ (২৫), ঢাকা মহানগর শাখার সহ-সাধারণ সম্পাদক তাজমির তাজওয়ার শুভ্র (২৬) ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের নেতা শাহরিয়ার শিহাব (২৩)।
আহতদের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) ও ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়।
ছাত্র ইউনিয়নের ঢাবি সংসদের সাবেক সভাপতি শিমুল কুম্ভকার জানান, টিএসসিতে বসে তারা (আহতরা) আড্ডা দিচ্ছিল। পরে মেঘমল্লার ও শুভ্র রিকশাযোগে শাহবাগের দিকে গেলে মোটরসাইকেল আরোহী ৮-১০ জন ছাত্রলীগের নেতা-কর্মী গতিরোধ করে মারধর করে। মাঈন আহমেদ তার হল মুহসীন হলের দিকে চলে যাওয়ার সময় তাকে মারধর করা হয়। আর শিহাবকে ভিসি চত্বর এলাকাতে একই কায়দায় মারধর করা হয়।
ঢাবি ছাত্র ইউনিয়নের দপ্তর সম্পাদক নিনাদ খান বলেন, “আমরা শহীদ বুদ্ধিজীবীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে টিএসসিতে একত্রিত হয়েছিলাম। সেখান থেকে ফেরার পথে আমাদেরকে খুঁজে খুঁজে বিভিন্ন জায়গায় হামলা চালিয়েছে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসের মতো মহান দিনে ছাত্রলীগের সন্ত্রাসী ও নৃশংস হামলা প্রমাণ করে যে কারা আসলেই মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে শক্তি।”
ঢাবি ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মঈন আহমেদও বলেন, “তানবীর হাসান সৈকতের অনুসারী আগেও আমাদেরকে হুমকি দিয়ে হামলা চালিয়েছে। শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে আমাদের ওপর হামলা চালিয়ে তারা প্রমাণ করেছে তারা সন্ত্রাসী সংগঠন।”
ছাত্র ইউনিয়নের নেতাকর্মীদের ওপর হামলার অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে ঢাবি ছাত্রলীগের সভাপতি তানভীর হাসান সৈকত বলেন, “এটা একটা বানোয়াট ও ভিত্তিহীন অভিযোগ। ছাত্র ইউনিয়নের নেতাকর্মীরা প্রধানমন্ত্রীর ছবি ভাঙচুর করায় সাধারণ শিক্ষার্থীরা তাদের ওপর ক্ষুব্ধ। তারা যে-ই কাজ করেছে সেজন্য সাংগঠনিকভাবে ক্ষমা না চাইলে আমরা তাদের নিরাপত্তা দিতে পারব না।”
তিনি আরও বলেন, “ইতোমধ্যেই সাধারণ শিক্ষার্থীরা দফায় দফায় প্রক্টর স্যারের কাছে অভিযোগ দিচ্ছে, তাদেরকে নিঃশর্ত ক্ষমা চাওয়ার জন্য। তারা ক্ষমা চেয়ে প্রেস বিজ্ঞপ্তি না দিলে সাধারণ শিক্ষার্থীরা তাদের অবাঞ্ছিত ঘোষণা করবে এবং বয়কট করবে।”
এ ঘটনার দুদিন আগেও ছাত্র ইউনিয়নের নেতাকর্মীদের ওপর হামলা করেছিল ছাত্রলীগ।
মেট্রোরেলের স্টেশন উদ্বোধন উপলক্ষে সরকারকে ধন্যবাদ জানিয়ে রাজু ভাস্কর্যের সামনে ছাত্রলীগের টানানো ব্যানার ছিঁড়ে ফেলেন একদল শিক্ষার্থী। ওই সময়ে রাজু ভাস্কর্যের কাছে বামপন্থী এক শিক্ষার্থী অবস্থান করছিল।
ছাত্রলীগ দাবি করে, বামপন্থী নেতারাই শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানিয়ে টানানো ব্যানার ছিঁড়ে ফেলেন।
এদিকে বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন কেন্দ্রীয় সংসদের (একাংশ) সভাপতি রাগীব নাঈম ও সাধারণ সম্পাদক রাকিবুল রনি এক বিবৃতিতে এ ঘটনায় নিন্দা জানান।































