• ঢাকা
  • শুক্রবার, ০৩ মে, ২০২৪, ২০ বৈশাখ ১৪৩১, ২৪ শাওয়াল ১৪৪৫

ডিএনসিসি হাসপাতাল প্রতি ঘণ্টায় ভর্তি হচ্ছেন ১০ ডেঙ্গু রোগী


জাহিদ রাকিব
প্রকাশিত: জুলাই ২০, ২০২৩, ০৮:৫৩ পিএম
ডিএনসিসি হাসপাতাল প্রতি ঘণ্টায় ভর্তি হচ্ছেন ১০ ডেঙ্গু রোগী

ডেঙ্গুর ঊর্ধ্বগতি দেশজুড়ে। রাজধানী ঢাকায় এর মাত্রা বেশি। এতে রাজধানীতে প্রতিদিন কয়েক শতাধিক মানুষ আক্রান্ত হচ্ছেন। আক্রান্তদের মধ্য শিশুর সংখ্যা বেশি। কোনোভাবেই থামানো যাচ্ছে না আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। প্রতিদিন আক্রান্ত ও মৃত্যুর নতুন নতুন রেকর্ড হচ্ছে। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) হাসপাতালকে ডেঙ্গু ডেডিকেটেড হাসপাতালে গত ২৪ ঘণ্টায় ২১৯ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী ভর্তি হয়েছেন। যা প্রতি ঘণ্টায় ১০ জন।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সরকারি এক তথ্য বিবরণী থেকে জানা যায়, ঢাকায় ডেঙ্গু রোগী সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় সেবা নিশ্চিত করতে মহাখালীতে ৮০০ শয্যাবিশিষ্ট ডিএনসিসি হাসপাতালকে ডেঙ্গু ডেডিকেটেড হাসপাতাল হিসেবে ঘোষণা করা হয়। এই মুহূর্তে হাসপাতালটিতে ৫০০ শয্যা প্রস্তুত করা হয়েছে। রোগীর চাপ অনুযায়ী পরবর্তীতে এটা ৮০০ শয্যা পর্যন্ত উন্নীত করা হবে। বর্তমান দুইটি আইসিইউ ইউনিট চালু আছে।

ডিএনসিসি ডেঙ্গু ডেডিকেটেড হাসপাতাল ঘুরে দেখা যায়, রাজধানীর যাত্রাবাড়ি, বাড্ডা, রামপুরা, ধোলাইখাল, উত্তরা ও পুরান ঢাকায় বেশি ডেঙ্গু আক্রান্ত হচ্ছে। মোহাম্মদপুর এলাকার বাসিন্দা আবুল কাশেম (৪০) হঠাৎ জ্বর ও সর্দিতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন। পরীক্ষা করে জানতে পারেন তার ডেঙ্গু হয়েছে। সংবাদ প্রকাশকে তিনি বলেন, “হঠাৎ গত তিন দিন জ্বর। কোনোভাবেই কমছে না। পরীক্ষার পর জানতে পারি ডেঙ্গু।”

পুরান ঢাকার বেসরকারি স্কুলের শিক্ষার্থী নাজিফা নওরীন (১১)। চলতি সপ্তাহে জ্বরে আক্রান্ত হওয়ার পর ভর্তি হয় ডিএনসিসি ডেঙ্গু হাসপাতালে। পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর জানা যায়, নাজিফা ডেঙ্গুতে আক্রান্ত। বর্তমানে তার রক্তের প্লাটিলেট নেমে আসে ১৬ হাজারে। গত দুই দিনে ছোটাছুটি করে রক্ত সংগ্রহ করা হয়েছে ৬ ব্যাগ। রক্ত দিয়ে প্লাটিলেট ঠিক রাখার প্রাণপণ চেষ্টা চালাচ্ছেন চিকিৎসকরা।

হাসপাতালের চতুর্থ তলায় পুরুষ ওয়ার্ডে ভর্তি রয়েছেন ৩১ জন ডেঙ্গু রোগী। তাদের একজন হাসানুল ইসলাম। তার ভাই সংবাদ প্রকাশকে বলেন, “আমরা চাঁদপুর থেকে ছয় দিন আগে ভর্তি হয়েছি। এখানে খরচ কম। কিন্তু অধিকাংশই ডেঙ্গু পরীক্ষার টেস্ট ও ওষুধ বাইরে থেকে কিনতে হচ্ছে।”

ডিএনসিসি হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক কর্নেল একেএম জহিরুল হোসাইন খান সংবাদ প্রকাশকে বলেন, “আমাদের হাসপাতালটি মূলত কোভিড রোগীদের জন্য তৈরি করা। তবে আমরা এখন ডেঙ্গুর জন্য প্রস্তুত করেছি। তবে যারা ভর্তির জন্য যোগ্য তাদের ভর্তি করা হচ্ছে। এখানে আমাদের জনবল কিছুটা সংকট রয়েছে। ইতোমধ্যে চাহিদাপত্র দেওয়া হয়েছে। আশা করছি কয়েক দিনের মধ্য এই সংকট কেটে যাবে।”

কোন ধরনের উপসর্গ নিয়ে এখানে ডেঙ্গু রোগী আসছে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “এখানে তিন দিনে ডেঙ্গুর লক্ষণগুলোর ক্ষেত্রে প্রায় সময় জ্বর আসছে না। প্রাথমিক পর্যায়েই ডায়রিয়া ও শ্বাসকষ্ট, পেটব্যথা, বমি, পেটে-বুকে পানি আসা, শরীরে খিঁচুনি সমস্যা নিয়ে রোগী আসছে। পরবর্তীতে পরীক্ষা নিরীক্ষা শেষে অধিকাংশ ডেঙ্গু শনাক্ত হচ্ছে। এর লাগাম টানা জরুরি। আশঙ্কাজনক হারে ছড়িয়ে পড়ার আগে পরিকল্পিতভাবে এর প্রতিরোধ করা প্রয়োজন।”

দেশে ডেঙ্গু ভয়াবহ আকার ধারণ নিয়ে ডা. লেলিন চৌধুরী সংবাদ প্রকাশকে বলেন, “এডিস মশা বেড়ে যাওয়ার অন্যতম কারণ জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব। সাধারণত আমাদের দেশে জুন থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ডেঙ্গুর প্রকোপ থাকে। কিন্তু এবার এর আগে থেকে এর ভয়াবহতা শুরু হয়েছে। ডেঙ্গুর প্রকোপ যাতে বাড়তে না পারে সেজন্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও সিটি করপোরেশন যথাযথ পদক্ষেপ নিলে তা মোকাবিলা সম্ভব। পাশাপাশি জনসাধারণকে সচেতন হতে হবে।”

তিনি আরও বলেন, “এই মুহূর্তে সিটি করপোরেশনের করার কিছু নেই। একমাত্র জনসচেতনতাই পারবে মানুষকে ডেঙ্গু থেকে বাঁচাতে। ডেঙ্গু থেকে বাঁচতে বাসায় সকাল-বিকেল অ্যারোসেল স্প্রে করতে হবে। শিশু থেকে শুরু করে সব বয়সের মানুষকে ফুলশার্ট, ফুলপ্যান্ট এবং হাত-পায়ে মোজা পরে থাকতে হবে। দিনে ঘুমালে অবশ্যই মশারির ভেতর ঘুমাতে হবে।”

Link copied!