• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২০ মার্চ, ২০২৫, ৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৯ রমজান ১৪৪৬

পিছিয়ে থাকা দেশগুলোর জন্য প্রধানমন্ত্রীর ৫ প্রস্তাব


সংবাদ প্রকাশ ডেস্ক
প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২১, ২০২১, ০৯:৫৩ পিএম
পিছিয়ে থাকা দেশগুলোর জন্য প্রধানমন্ত্রীর ৫ প্রস্তাব

মহামারি করোনাতে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনের ক্ষেত্রে অনেক দেশের পিছিয়ে পড়ার বিষয়টি উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, “এসডিজি অর্জনে একটি সাহসী ও উচ্চাভিলাসী রূপরেখা তৈরি করতে হবে।” 

সোমবার (২০ সেপ্টেম্বর) নিউইর্য়কে টেকসই উন্নয়ন বিষয়ে নবম বার্ষিক আন্তর্জাতিক কনফারেন্সে (ভার্চ্যুয়াল) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, “করোনার আগেই বহু দেশ এসডিজি অর্জনের পথ থেকে ছিটকে পড়ে। এ মহামারি তাদের আরও পেছনে ফেলে দিয়েছে। এসডিজি লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে পিছিয়ে পড়া দেশগুলোকে ফিরিয়ে আনতে আমাদের একটি সাহসী এবং উচ্চাভিলাসী বৈশ্বিক রোডম্যাপ তৈরি করতে হবে- যাতে কেউ পেছনে পড়ে না থাকে।”

শেখ হাসিনা বলেন, “কোনো দেশ একা এসডিজি অর্জন করতে পারে না। এই এজেন্ডাকে এগিয়ে নিতে আমাদের বৈশ্বিক সহযোগিতা এবং সংহতি প্রয়োজন।”

এ সময় এসডিজি অর্জনের পথে পিছিয়ে থাকা দেশগুলোকে সামনে আনতে শেখ হাসিনা পাঁচটি প্রস্তাব পেশ করেন।

প্রস্তাবগুলো হলো:

প্রথম প্রস্তাব: এসডিজি অর্জনের সফলতা নির্ভর করছে মহামারি থেকে টেকসই উত্তরণ। এ সময়ে সত্যিকারের জরুরি বিষয় হলো সবার জন্য টিকা নিশ্চিত করা।

দ্বিতীয় প্রস্তাব: ২০৩০ এজেন্ডা বাস্তবায়নে সম্পদের বিশাল ব্যবধান কমিয়ে আনার কথা বলেন শেখ হাসিনা।

তৃতীয় প্রস্তাব: চলমান বৈশ্বিক মহামারির আঘাতে ১৯৯৮ সালের পর এই প্রথম ক্রমবর্ধমান বৈশ্বিক দারিদ্র নিয়ে আমরা উদ্বিগ্ন। এ পরিস্থিতি থেকে  বেরিয়ে আসতে কর্মসংস্থান সৃষ্টি, সামাজিক সুরক্ষা ও নারীর ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করা, বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও উদ্ভাবনের ওপর গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন।

চতুর্থ প্রস্তাব: জলবায়ু পরিবর্তন পরিস্থিতি মোকাবিলায় পদক্ষেপগুলোর সঙ্গে সমন্বয় করে করোনা থেকে পুনরুদ্ধারে পদক্ষেপ নেওয়া উচিত। যাতে ভবিষ্যতে যেকোন দুর্যোগ-দুর্বিপাকে শক্তিশালী প্রতিরোধ গড়ে তোলা যায়।

পঞ্চম প্রস্তাব: প্রধানমন্ত্রী এসডিজি বাস্তবায়নে মনিটরিং এবং সহায়তা বাড়ানোর কথা বলেন।

এ সময় এসজিডি বাস্তবায়নে জাতিসংঘকে সমন্বয় বাড়ানোর আহ্বান জানান শেখ হাসিনা।

ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় প্রকাশিত সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট রিপোর্ট ২০২১ এর বরাত দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, “২০১৫ সাল থেকে এসডিজি সূচকে বাংলাদেশ সবচেয়ে বেশি অগ্রগতি লাভ করেছে। বাংলাদেশ বর্তমান বিশ্বে প্রথম পাঁচটি দ্রুততম অর্থনৈতিক অগ্রগতির দেশের মধ্যে অন্যতম এবং জিডিপিতে বাংলাদেশের অবস্থান ৪১তম।”

জাতিসংঘ এ বছর বাংলাদেশকে এলডিসি ক্যাটাগরি থেকে উত্তরণের স্বীকৃতি দিয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, “২০৩১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে উচ্চ-মধ্য-আয়ের দেশে এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উচ্চ-আয়ের দেশে রূপান্তরিত করার পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ করছে সরকার। ডেল্টা-প্ল্যান ২১০০ গ্রহণ করা হয়েছে। আমরা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি সমৃদ্ধ এবং জলবায়ু স্থিতিস্থাপক বদ্বীপ তৈরি করে যেতে চাই।”

বাংলাদেশের অগ্রগতির কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, “পদ্মা সেতু, ঢাকা মেট্রোরেল, কর্ণফুলী টানেল এবং রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের মতো মেগা অবকাঠামো প্রকল্প চালু করছি।”

এদিকে বিগত বছরগুলোতে টেকসই উন্নয়নসহ বিভিন্ন সেক্টরে বাংলাদেশের অগ্রগতির কথা তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।

এর আগে অনুষ্ঠানে ২০১৫ সাল থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত টেকসই উন্নয়নে বাংলাদেশের অর্জনের জন্য ‘এসডিজি প্রোগ্রেস অ্যাওয়ার্ড’ পেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

জাতিসংঘের সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট সল্যুশন নেটওয়ার্ক (এসডিএসএন), গ্লোবাল মাস্টার্স অব ডেভেলপমেন্ট প্র্যাকটিস এবং যুক্তরাষ্ট্রের কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্থ ইনস্টিটিউট ও সেন্টার ফর সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট যৌথভাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে এ পুরস্কার দেয়।

অনুষ্ঠানে করোনা পরিস্থিতির মধ্যেও টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বের প্রশংসা করেন সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট সল্যুশন নেটওয়ার্কের (এসডিএসএন) প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক জেফরি ডি. স্যাক্স।

অনুষ্ঠানের সঞ্চালক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ‘জুয়েল ইন দ্য ক্রাউন অব দ্য ডে’ হিসেবে পরিচয় করিয়ে দেন।

জাতিসংঘের মহাসচিবের অধীনে ২০১২ সালে এসডিএসএন প্রতিষ্ঠা করা হয়। টেকসই উন্নয়নের জন্য বাস্তবভিত্তিক সমাধানে বৈজ্ঞানিক ও প্রযুক্তিগত দক্ষতা বাড়াতে সহায়তা করে থাকে এসডিএসএন।

৭৬তম অধিবেশনের প্রথমদিনেই যোগ দিলেন প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মঙ্গলবার (২১ সেপ্টেম্বর) সকালে জাতিসংঘের ৭৬ তম সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের (ইউএনজিএ) প্রথম দিনে উচ্চ পর্যায়ের আলোচনায় যোগ দিয়েছেন। 

সাধারণ পরিষদের অধিবেশন ২১ সেপ্টেম্বর থেকে ২৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হবে।

জানা যায়, শেখ হাসিনা ২৪ সেপ্টেম্বর বক্তব্য রাখবেন। 

এদিকে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৪ সালে জাতিসংঘে বাংলায় তার ঐতিহাসিক ভাষণ দিয়েছিলেন এবং তার পদাঙ্ক অনুসরণ করে প্রধানমন্ত্রী বিগত বছরের মতো এবারও বাংলায় ভাষণ দিবেন।

জাতিসংঘের ৭৬ তম অধিবেশন ১৪ সেপ্টেম্বর শুরু হয়েছে। সেদিন মালদ্বীপের আবদুল্লা শহীদ সাধারণ পরিষদের ৭৬ তম অধিবেশনের সভাপতি হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন এবং অধিবেশন উদ্বোধন করেন।

এর আগে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৬তম অধিবেশনে যোগ দিতে রোববার (১৯ সেপ্টেম্বর) স্থানীয় সময় বিকেলে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সে নিউইর্য়ক যান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। 

শুক্রবার (১৭ সেপ্টেম্বর) সকালে ঢাকা থেকে রওয়ানা দিয়ে ফিনল্যান্ড হয়ে নিউইর্য়ক আসেন প্রধানমন্ত্রী।


 

Link copied!