কক্সবাজারের রিসোর্টে চাঞ্চল্যকর নারী হত্যার প্রধান আসামি সাগর মিজিকে (২৪) রাজধানীর সায়েদাবাদ বাসস্ট্যান্ড টোলপ্লাজা এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব।
এ সময় তার কাছ থেকে তিনটি মোবাইল ফোন ও ১৫ হাজার টাকা জব্দ করা হয়। ধর্ষণ ও হত্যায় অভিযুক্ত ওই যুবককে নিয়ে ভয়াবহ তথ্য দিয়েছে র্যাব।
অভিযুক্ত সাগর নারী ও বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাত্রীদের টার্গেট করে প্রেমের ফাঁদে ফেলতেন। পরে কৌশলে তাদেরকে বিভিন্ন জায়গায় নিয়ে ধর্ষণ করতেন। প্রেম করে ধর্ষণ করাই ছিল তার নেশা।
শনিবার (২৫ সেপ্টেম্বর) বিকেলে রাজধানীর কাওরানবাজারে অবস্থিত র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান র্যাব-১০ এর অধিনায়ক (সিও) অতিরিক্ত ডিআইজি মো. মাহফুজুর রহমান।
মাহফুজুর রহমান বলেন, “প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সাগর হত্যাকাণ্ডের কথা স্বীকার করেছেন। সে বিভিন্ন এলাকায় একাধিক নারীকে মিথ্যা প্রেমের ফাঁদে ফেলে অনৈতিক কর্মকাণ্ডে বাধ্য করেছে। এছাড়া সে বিভিন্ন স্কুল, কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া ছাত্রীদের প্রেমের ফাঁদে ফেলে ঘুরতে নিয়ে কৌশলে ধর্ষণ করে আসছিলেন।”
র্যাবের কাছে সাগর স্বীকার করে জানিয়েছেন, পূর্ব পরিচয়ের সূত্র ধরে নিহত নারীকে স্ত্রী পরিচয়ে কক্সবাজার ‘আমারী রিসোর্ট’ এ নিয়ে যায় সে। রিসোর্টের ৪০৮ নম্বর রুমে নিয়ে ভিকটিমকে ধর্ষণ করে সে। একপর্যায়ে তার সঙ্গে ভিকটিমের ধস্তাধস্তি শুরু হয়। ধস্তাধস্তির সময় তিনি ভিকটিমের গলা চেপে ধরে দেওয়ালের সঙ্গে ধাক্কা দিলে ওই নারী মেঝেতে পড়ে যায়। তখন আবার ভিকটিমের গলা চেপে ধরে সে এবং পাশে থাকা গ্লাস দিয়ে দুই-তিনবার মাথায় আঘাত করে হত্যা করে। পরে ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায় সাগর।
এর আগে গত ২১ সেপ্টেম্বর বিকেল সাড়ে ৪টায় কক্সবাজারের কলাতলী এলাকার ‘আমারি রিসোর্ট’ থেকে ওই নারীর মৃতদেহটি উদ্ধার করা হয় বলে জানান টুরিস্ট পুলিশের কক্সবাজার জোনের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মহিউদ্দিন আহমেদ।
হোটেলের নথিতে নিবন্ধন মতে, নিহত ফারজানা আক্তার (২৩) কুমিল্লা জেলার সদর উপজেলার বাগদিয়া ইউনিয়নের কল্যানদী এলাকার মোহাম্মদ সাগরের স্ত্রী। তার স্বামী সাগর ওই এলাকার মো. জয়নাল মিজির ছেলে।
হোটেল কর্তৃপক্ষের বরাতে মোহাম্মদ মহিউদ্দিন বলেন, “গত রোববার স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে মোহাম্মদ সাগর ও ফারজানা কক্সবাজার শহরের হোটেল-মোটেল জোন এলাকার ‘আমারী রিসোর্ট’এ ওঠেন। মঙ্গলবার তারা হোটেল ছাড়ার কথা ছিল। দুপুরের পরও তারা হোটেল কক্ষ থেকে বের হয়নি। পরে হোটেলের লোকজন ডাকাডাকি করলেও ভেতর থেকে তাদের কোনো ধরনের সাড়া শব্দ পায়নি।”
মহিউদ্দিন আরও জানান, হোটেল কক্ষ তালা বন্ধ পাওয়া যায়। এতে সন্দেহ সৃষ্টি হলে দরজা ভেঙে দেখা যায় ফারজানা আক্তার খাটে শোয়া অবস্থায় পড়ে আছেন। এ সময় স্বামী পরিচয়ে হোটেলে ওঠা সাগর কক্ষের ভেতরে ছিলেন না। পরে হোটেল কর্তৃপক্ষ বিষয়টি পুলিশকে অবহিত করে।
খবর পেয়ে পুলিশের একটি দল ঘটনাস্থলে পৌঁছে হোটেল কক্ষের ভেতরে খাটে শোয়া অবস্থায় ওই তরুণীর মৃতদেহ উদ্ধার করে।