• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ০২ মে, ২০২৪, ১৯ বৈশাখ ১৪৩১, ২২ শাওয়াল ১৪৪৫

বাংলা সাহিত্য ও চলচ্চিত্রে মুক্তিযুদ্ধ । সালাহ উদ্দিন মাহমুদ


সালাহ উদ্দিন মাহমুদ
প্রকাশিত: ডিসেম্বর ১৫, ২০২২, ০৬:০৭ পিএম
বাংলা সাহিত্য ও চলচ্চিত্রে মুক্তিযুদ্ধ । সালাহ উদ্দিন মাহমুদ

সাতচল্লিশ-পরবর্তী সময় থেকেই মানুষের মধ্যে মুক্তির চেতনা জাগ্রত হয়। সে চেতনা বেশি নাড়া দেয় কবি, লেখক ও সংস্কৃতিকর্মীদের অন্তরে। তারা বিভিন্ন মাধ্যমে মুক্তির মূলমন্ত্র উচ্চারণ করতে থাকেন। বিশেষ করে বাংলা সাহিত্যে স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষা প্রতিফলিত হতে থাকে। বাংলা গল্প, কবিতা, উপন্যাস, নাটক ও চলচ্চিত্রে উঠে আসে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা। এ ছাড়া মুক্তিযুদ্ধকালীন প্রেক্ষাপট, মুক্তিযুদ্ধ-পরবর্তী বিষয় নিয়েও লেখা হয়েছে বিভিন্ন সময়ে। একই সময় বা কাল নিয়ে এত বেশি সাহিত্যকর্ম আর কখনো হয়নি বা হবেও না। ফলে বাংলা সাহিত্যের বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ।

মুক্তিযুদ্ধের তাৎপর্য অনিবার্য হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে বাংলাদেশের লেখকদের কাছে। পাকিস্তানিদের শোষণ, নির্যাতন, অত্যাচার, নিপীড়নের ছবি ফুটে উঠেছে সাহিত্যে। বীর বাঙালির প্রতিবাদ-প্রতিরোধের চিত্রও অঙ্কিত হয়েছে। পাকিস্তান শাসনামলে (১৯৪৭-১৯৭১) বাংলাদেশে অনেক বাংলা বই প্রকাশিত হয়েছে। এ সময়ে প্রায় ৬০টি কাব্য, ১৩৩০টি উপন্যাস, ৫৮০টি নাটক, ৩৪০টি ছোটগল্প, ২৭০টি প্রবন্ধ এবং ৩৫০টি ধর্মালোচনা-সংক্রান্ত বই প্রকাশিত হয়েছিল। তবে ১৯৭১ সালের পরই কেবল বাংলাদেশের সাহিত্য স্পষ্টভাবে স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য পেতে শুরু করে।

১৯৭১ সালে ৯ মাস রণাঙ্গনে যুদ্ধ করেছেন মুক্তিযোদ্ধারা। তাদের উজ্জীবিত করেছেন লেখক ও সংস্কৃতিকর্মীরা। ফলে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক গল্পের সংখ্যা কম নয়। মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশের গল্পের ভূমিকাও উল্লেখযোগ্য। ‘বাংলাদেশ কথা কয়’ সংকলনে বাংলাদেশের কয়েকজন তরুণ ও প্রবীণ কথাশিল্পীর গল্প রয়েছে। এ সংকলনে মোট ষোলোটি গল্প স্থান পায়। বিপ্রদাশ বড়ুয়ার ‘সাদা কফিন’, নির্মলেন্দু গুণের ‘শেষ যাত্রা নয়’, আবদুল হাফিজের ‘লাল পল্টন’, সুব্রত বড়ুয়ার ‘বুলি তোমাকে লিখছি’, ফজলুল হকের ‘চরিত্র’, আসফ-উজ-জামানের ‘রক্ত প্রজন্ম’, বুলবন ওসমানের ‘সোলেমান ভাই’, কামাল মাহবুবের ‘নীল নকশা’, অনু ইসলামের ‘শব্দতাড়িত’, আসাদ চৌধুরীর ‘কমলা রঙের রোদ’, সত্যেন সেনের ‘পরীবানুর কাহিনী’, ইলিয়াস আহমদের ‘অন্যের ডায়েরি থেকে’, জহির রায়হানের ‘সময়ের প্রয়োজনে’, কায়েস আহমেদের ‘শেষ বাজি’, শওকত ওসমানের ‘আলোক-অন্বেষা’ এবং আবদুল গাফ্‌ফার চৌধুরীর ‘রোদের অন্ধকারে বৃষ্টি’। এসব গল্পে মুক্তিযুদ্ধের তাৎক্ষণিক অভিজ্ঞতা ও প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করা হয়েছে।

এরপর বাংলাদেশের গল্পকারদের লেখা মুক্তিযুদ্ধের গল্পের আরও দুটি সংকলন বের হয়। একটি ১৯৮৩ সালে প্রকাশিত আবুল হাসনাত সম্পাদিত ‘মুক্তিযুদ্ধের গল্প’। অন্যটি ১৯৮৫ সালে প্রকাশিত হারুণ হাবীব সম্পাদিত ‘মুক্তিযুদ্ধ: নির্বাচিত গল্প’। মুক্তিযুদ্ধের গল্প বইয়ে সংকলিত গল্পগুলো হলো—শওকত ওসমানের ‘দুই ব্রিগেডিয়ার’, সত্যেন সেনের ‘পরীবানুর কাহিনী’, আবু জাফর শামসুদ্দীনের ‘কালিমদ্দি দফাদার’, আলাউদ্দিন আল আজাদের ‘রূপান্তর’, জহির রায়হানের ‘সময়ের প্রয়োজনে’, আবদুল গাফ্‌ফার চৌধুরীর ‘কেয়া, আমি এবং জার্মান মেজর’, সৈয়দ শামসুল হকের ‘কথোপকথন: তরুণ দম্পতির’, শওকত আলীর ‘কোথায় আমার ভালোবাসা’, বোরহানউদ্দিন খান জাহাঙ্গীরের ‘ঘরে ফেরা’, সুচরিত চৌধুরীর ‘নিঃসঙ্গ নিরাশ্রিত’, রাবেয়া খাতুনের ‘যে ভুলে যায়’, হাসান আজিজুল হকের ‘ঘর গেরস্থি’, রাহাত খানের ‘মধ্যিখানে চর’, মাহমুদুল হকের ‘কালো মাফলার’, জাহানারা ইমামের ‘উপলব্ধি’, আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের ‘অপঘাত’, হুমায়ূন আহমেদের ‘শ্যামল ছায়া’, রশীদ হায়দারের ‘এ কোন ঠিকানা’, সেলিনা হোসেনের ‘ভিটেমাটি’, কয়েস আহমদের ‘আসন্ন’, রবিউল হুসাইনের ‘মাটির মেডেল’, বিপ্রদাশ বড়ুয়ার ‘সাদা কফিন’, তাপস মজুমদারের ‘মাটি’, সিরাজুল ইসলামের ‘যাত্রার নায়ক’, আহমদ বশীরের ‘অন্য পটভূমি’, রিজিয়া রহমানের ‘ইজ্জত’, ইমদাদুল হক মিলনের ‘প্রস্তুতি পর্ব’, মইনুল আহসান সাবেরের ‘কবেজ লেঠেল’। সংকলন দুটিতে মুক্তিযুদ্ধের দিনগুলোর বহুমাত্রিক ছবি পাওয়া যায়। এসব ঘটনা নানা গল্পে নানাভাবে প্রতিফলিত ও চিত্রিত হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে লেখা গল্পের ভেতর দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের আনুষঙ্গিক নানা দিক পাঠকের চোখে মূর্ত হয়ে ওঠে। গল্পে বর্ণিত হানাদারদের অত্যাচার, লুণ্ঠন, ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগের বিবরণের মধ্য দিয়ে একদিকে চরম মানবিক বিপর্যয়ের ছবি, অন্যদিকে মুক্তিযোদ্ধাদের অঙ্গীকার ও আত্মত্যাগ, বাঙালির রুখে দাঁড়ানোর দৃঢ় মনোভাব রূপায়ণের মধ্য দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের সর্বজনীন চেতনার প্রকাশ ঘটে। এর বাইরেও বিভিন্ন সময়ে মুক্তিযুদ্ধকে কেন্দ্র করে ছোটগল্প লেখা হয়েছে। এখনো লেখা হচ্ছে, ভবিষ্যতেও অব্যাহত থাকবে।

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে অনেক উপন্যাস লেখা হয়েছে। স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছরে অসংখ্য উপন্যাস সমৃদ্ধ করেছে বাংলা সাহিত্যকে। বর্তমান প্রজন্মের লেখকরাও মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক উপন্যাস লিখতে এগিয়ে এসেছেন। তবে প্রবীণ কয়েকজন লেখকের আলোচিত উপন্যাস এখনো পাঠককে মুগ্ধ করে। মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক উপন্যাস রচনায় শওকত ওসমানের (১৯১৭-৯৮) অবদান অবিস্মরণীয়। তাঁর মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক উপন্যাসের সংখ্যা চারটি। উপন্যাসগুলো হচ্ছে, ‘জাহান্নম হইতে বিদায়’ (১৯৭১), ‘নেকড়ে অরণ্য’ (১৯৭৩), ‘দুই সৈনিক’ (১৯৭২), ‘জলাঙ্গী’ (১৯৭৩)। এ ছাড়া সমসাময়িক আবু বকর সিদ্দিকের ‘একাত্তরের হৃদয় ভস্ম’ (১৯৭১), রশীদ করীমের ‘আমার যত গ্লানি’ (১৯৭৩), আনোয়ার পাশার ‘রাইফেল রোটি আওরাত’ (১৯৭৩), রশীদ হায়দারের ‘খাঁচায়’ (১৯৭৫), সরদার জয়েন উদ্দীনের ‘বিধ্বস্ত রোদের ঢেউ’ (১৯৭৫) ও ‘উত্তর খেপ’ (১৯৯১), শওকত আলীর ‘যাত্রা’ (১৯৭৬) উল্লেখযোগ্য। পাশাপাশি আবু জাফর শামসুদ্দীনের ‘দেয়াল’ (১৯৮৫), রশীদ হায়দারের ‘অন্ধ কথামালা’ (১৯৮২), রাবেয়া খাতুনের ‘ফেরারী মুখ’ (১৯৭৪) ও ‘মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রী’, আমজাদ হোসেনের ‘অবেলায় অসময়’ (১৯৭৫) ও ‘উত্তরকাল’ (২০০৮), মাহমুদুল হকের ‘জীবন আমার বোন’ (১৯৭৬), আহমদ ছফার ‘ওঙ্কার’(১৯৮৫) ও ‘অলাতচক্র’, সেলিনা হোসেনের ‘হাঙর নদী গ্রেনেড’ (১৯৭৬), ‘নিরন্তর ঘণ্টাধ্বনি’ (১৯৮৭) ও ‘কাঁটাতারে প্রজাপতি’ (১৯৮৯) পাঠক হৃদয়ে দাগ কেটেছে। তার কিছুকাল পরে সৈয়দ শামসুল হক উপন্যাসে মুক্তিযুদ্ধ ও তার পরবর্তী সময় পরম্পরাকে অবলোকন করেছেন। তাঁর ‘নীল দংশন’ (১৯৮১), ‘নিষিদ্ধ লোবান’ (১৯৮১), ‘দ্বিতীয় দিনের কাহিনী’ (১৯৮৪), ‘অন্তর্গত’ (১৯৮৪), ‘এক যুবকের ছায়াপথ’ (১৯৮৭) আলোচিত হয়েছে। একই সময়ে মিরজা আবদুল হাইয়ের ‘ফিরে চলো’ (১৯৮১), হারুন হাবীবের ‘প্রিয়যোদ্ধা প্রিয়তম’ (১৯৮২), শামসুর রাহমানের ‘অদ্ভুত আঁধার এক’ (১৯৮৫), ইউসুফ শরীফের ‘স্বপ্নের চারুলতা’ (১৯৮২), ‘প্রমোদে ঢালিয়া দিনু মন’ (১৯৮৩) ও ‘পরম মাটি’ (১৯৮৯), আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের ‘খোয়াবনামা’ (১৯৯৬), রিজিয়া রহমানের ‘রক্তের অক্ষরে’, আল মাহমুদের ‘উপমহাদেশ’ (১৯৯৪) বাংলা সাহিত্যকে আরও সমৃদ্ধ করেছে। তবে নন্দিত কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদ সবচেয়ে বেশি মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক উপন্যাস উপহার দিয়েছেন আমাদের। তার মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক উপন্যাস সাতটি। তাঁর ‘শ্যামল ছায়া’ (১৯৭৩), ‘সৌরভ’ (১৯৮৪), ‘১৯৭১’ (১৯৯৩), ‘জোছনা ও জননীর গল্প’ (২০০৪), ‘অনীল বাগচীর একদিন’, ‘দেয়াল’, ‘আগুনের পরশমণি’ (১৯৮৬) বিভিন্নভাবে পাঠককে আকৃষ্ট করেছে। এ ছাড়া মুহম্মদ জাফর ইকবালের ‘আমার বন্ধু রাশেদ’ (১৯৯৪), ‘আকাশ বাড়িয়ে দাও’, ‘কাচ সমুদ্র’ ও ‘ক্যাম্প’, আনিসুল হকের ‘মা’ (২০০৩), ‘চিয়ারি বা বুদু ওরাঁও কেন দেশত্যাগ করেছিল’ (২০০০), ‘বীর প্রতীকের খোঁজে’ (২০০১) ও ‘জননী সাহসিনী ১৯৭১’ (২০১০) দীর্ঘকাল পঠিত হবে বলে আমার বিশ্বাস।

শুধু গল্প-উপন্যাসেই নয়, কবিতায় মুক্তিযুদ্ধ এসেছে নানাভাবে। আমাদের মুক্তিযুদ্ধে রবীন্দ্রনাথ, নজরুল, জীবনানন্দ ও সুকান্তের কবিতা সীমাহীন প্রাণের সঞ্চার ঘটিয়েছে। পাশাপাশি মুক্তিযুদ্ধকালীন ও মুক্তিযুদ্ধোত্তর সময় থেকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনানির্ভর কবিতা রচিত হয়েছে এবং বর্তমানেও হচ্ছে। এসব কবিতায় যুদ্ধের ভয়াবহতার কথা উঠে আসছে এবং উঠে আসছে বাঙালির বীরত্ব ও আত্মোৎসর্গের গৌরবগাথা। প্রথমেই জসীমউদ্‌দীনের ‘মুক্তিযোদ্ধা’ কবিতাটির উদাহরণ দেওয়া যায়। এ ছাড়া মুক্তিযুদ্ধের কিছু কবিতা সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের আগে লেখা হয়েছিল, এসব কবিতা প্রণোদনা দিয়েছে স্বাধিকার ও গণ-আন্দোলনে আমাদের মুক্তিযুদ্ধকে শানিত করেছে। কবি সিকান্‌দার আবু জাফরের ‘বাংলা ছাড়ো’ও একটি বিখ্যাত কবিতা। শামসুর রাহমানেরও মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক বহু কবিতা আছে—‘গেরিলা’, ‘এখানে দরজা ছিল’, ‘সম্পত্তি’, ‘পথের কুকুর’, ‘তোমাকে পাওয়ার জন্য, হে স্বাধীনতা’, ‘স্বাধীনতা তুমি’, ‘তুমি বলেছিলে’ ও ‘কাক’। কবিতাগুলো এখনো পাঠকের কাছে প্রিয়। কবি হাসান হাফিজুর রহমান ‘তোমার আপন পতাকা’ কবিতায় স্বদেশকে টেনে এনেছেন। সৈয়দ শামসুল হক তার লেখা অনেক কবিতায় সচেতনভাবে গণ-আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধ, বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশকে নির্মাণ করেছেন। সাইয়িদ আতীকুল্লাহ সমকালীন কবিতার ধারায় ভিন্নমাত্রা, ভিন্নবোধ ও ভিন্ন সৌকর্যে তার কবিতাকে নির্মাণ করেছেন। শহীদ কাদরী দেশের ভাষা, সংগ্রাম, মুক্তিযুদ্ধ ও অন্যান্য দিক কবিতায় মূল বিষয় হিসেবে তুলে ধরেছেন। সেই সঙ্গে যুদ্ধবিরোধী, সাম্রাজ্যবাদ-উপনিবেশবাদবিরোধী এবং সামরিক-স্বৈরাচারবিরোধী এক ধরনের আন্তর্জাতিক চেতনাও তার কবিতায় আমরা খুঁজে পাই। বেলাল চৌধুরীর কবিতায়ও স্বদেশ চেতনা খুঁজে পাওয়া যায়। রফিক আজাদ ও সিকদার আমিনুল হকের কবিতায় মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযুদ্ধ-পরবর্তী সময়ের চিত্র পাওয়া যায়। কবি রবিউল হুসাইনের কাব্যচর্চাও সত্তর দশক হয়ে তার মৃত্যুর আগ পর্যন্ত প্রবহমান ছিল।

এমনকি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের বিভিন্ন দিক নিয়ে লেখা হয়েছে প্রবন্ধ ও স্মৃতিকথা। সেগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য: এম আর আখতার মুকুলের ‘আমি বিজয় দেখেছি’, শামসুল হুদা চৌধুরীর ‘একাত্তরের রণাঙ্গন’, এম এস এ ভূঁইয়ার ‘মুক্তিযুদ্ধের নয় মাস’, মেজর রফিকুল ইসলামের ‘একটি ফুলকে বাঁচাবো বলে’, কাজী জাকির হাসানের ‘মুক্তিযুদ্ধের দিনগুলি’, রফিকুল ইসলাম বীর উত্তমের ‘লক্ষ প্রাণের বিনিময়ে’, আসাদ চৌধুরীর ‘বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ’, ছদরুদ্দীনের ‘মুক্তিযুদ্ধ: বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে’, আতিয়ার রহমানের ‘মুক্তিযুদ্ধের অপ্রকাশিত কথা’, মনজুর আহমদের ‘একাত্তর কথা বলে’, হেদায়েত হোসাইন মোরশেদের ‘স্বাধীনতা সংগ্রাম, ঢাকায় গেরিলা অপারেশন’। মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে মননশীল ও গবেষণামূলক প্রবন্ধ লিখেছেন অনেকে। বদরুদ্দীন উমর রচনা করেছেন ‘যুদ্ধপূর্ব বাংলাদেশ, যুদ্ধোত্তর বাংলাদেশ’। ড. রফিকুল ইসলাম লিখেছেন ‘বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম’, ‘আমাদের মুক্তিযুদ্ধ’, ‘ভাষা আন্দেলন ও মুক্তিযুদ্ধের সাহিত্য’, ‘বাংলাদেশের সাহিত্যে ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধ’। ব্যক্তিগত স্মৃতিকথার মধ্যে উল্লেখযোগ্য জাহানারা ইমামের ‘একাত্তরের দিনগুলি’ ও সুফিয়া কামালের ‘একাত্তরের ডায়েরী’। এ ছাড়া একটি উল্লেখযোগ্য সংযোজন হচ্ছে রশিদ হায়দার সম্পাদিত তেরো খণ্ডের ‘স্মৃতি ১৯৭১’। খণ্ডগুলোয় ১৯৭১ সালের সংঘাতে অংশগ্রহণকারী বা প্রত্যক্ষদর্শীদের দেওয়া বর্ণনা সংক্ষিপ্ত আকারে সাজানো আছে।

সাহিত্যের পাশাপাশি প্রেক্ষাগৃহ, মঞ্চ ও টেলিভিশনে উপস্থাপিত হয়েছে মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক চলচ্চিত্র-নাটক। জাতির ক্রান্তিলগ্নেও নাটককে বিশেষ ভূমিকা পালন করতে দেখা গেছে। প্রতিবাদ-প্রতিরোধ-সচেতনতা-সংগ্রামে নাটক হয়ে উঠেছে সমাজ বা রাষ্ট্র বদলের হাতিয়ার। তারই ধারাবাহিকতায় একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে শ্রুতি নাটক, মঞ্চনাটক এবং টিভি নাটক বিশাল ভূমিকা রেখেছে। এমনকি মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস এবং চেতনা নতুন প্রজন্মের ভেতরে ছড়িয়ে দিতে নাটকের সবিশেষ প্রচেষ্টা উজ্জ্বল আভা হিসেবে পরিগণিত হয়েছে।

১৯৭১ থেকে ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত মুক্তিযুদ্ধকে অবলম্বন করে প্রায় অর্ধশতাধিক নাটক রচিত হয়েছে। যেগুলোতে স্থান পেয়েছে রণাঙ্গনের মুক্তিযুদ্ধ, পাকিস্তানি সেনাদের হাতে নারী নির্যাতন, ধর্ষণ, ধর্ষিত ও নির্যাতিতের আর্তনাদ, বাঙালির অকুতোভয় সংগ্রাম, মুক্তির নেশায় অবিরাম পথচলা আর বীরত্বগাথাসহ বাঙালির চিরশত্রু ঘৃণিত রাজাকার, আলবদর, আলশামস তথা পাকিস্তানি নরপশুদের অমানবিক নিষ্ঠুরতার লোমহর্ষ নানা চিত্র। তখন দেশি নাট্যকারদের পাশাপাশি বিদেশি বহু নাট্যকারের বিপ্লবী নাটক অনুবাদ ও রূপান্তরের মাধ্যমে উপস্থাপন করে মুক্তিকামী বাঙালিকে উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে।

স্বাধীনতা-পরবর্তী বাংলাদেশের সবচেয়ে বিকশিত শিল্পমাধ্যম মঞ্চনাটক। যুদ্ধফেরত একদল তেজী তরুণের পদভারে মুখরিত হয়েছিল নাট্যাঙ্গন। তাঁদের অকৃত্রিম শ্রম, সৎসাহস এবং নিবিড় পরিচর্যায় একের পর এক অসাধারণ নাটক সৃষ্টি হয়েছে। তখন থেকে নব্বই দশক পর্যন্ত মঞ্চনাটকে উঠে এসেছে মুক্তিযুদ্ধ। এ সময়ের উল্লেখযোগ্য নাটক হচ্ছে— পায়ের আওয়াজ পাওয়া যায়, সময়ের প্রয়োজনে, কথা ৭১, লাল জমিন, বিদেহ, আমি বীরাঙ্গনা বলছি, টার্গেট প্লাটুন, ক্ষ্যাপা পাগলার প্যাঁচাল, জিয়ন্তকাল, যুদ্ধ এবং যুদ্ধ, জয় জয়ন্তী, একাত্তরের পালা, মুখোশ, কিংশুক, যে মরুতে, বিবিসাব, সময়ের প্রয়োজনে, খারন্নি, বলদ প্রভৃতি। তবে নূরলদীনের সারাজীবন, কোর্ট মার্শাল, সাতঘাটের কানাকড়ি ইত্যাদি নাটককেও মুক্তিযুদ্ধের নাটক হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এতে সরাসরি মুক্তিযুদ্ধের কথা না থাকলেও চেতনা প্রবহমান রয়েছে।

পাশাপাশি পরবর্তী সময়ে মামুনুর রশীদ রচিত ‘সমতট’, মমতাজ উদ্দিন আহমদের ‘কি চাহ শঙ্খচিল’, ‘রাজা অনুস্বারের পালা’, সৈয়দ শামসুল হকের ‘তোরা জয়ধ্বনি কর’, আবদুল্লাহ আল মামুনের ‘তোমরাই’ ও ‘দ্যাশের মানুষ’, মান্নান হীরার ‘একাত্তরের ক্ষুদিরাম’ ও ‘ফেরারি নিশান’, নাসির উদ্দিন ইউসুফ বাচ্চুর ‘ঘুম নেই’, নীলিমা ইব্রাহিমের ডায়েরি অবলম্বনে ‘শামুক বাস’, শহীদ জননী জাহানারা ইমামের ‘একাত্তরের দিনগুলি’ থেকে নির্বাচিত অংশ অবলম্বনে শ্রুতি নাটক ‘স্মৃতিসত্তা ভবিষ্যত’, হুমায়ূন আহমেদের ‘১৯৭১’, শান্তনু বিশ্বাসের ‘ইনফরমার’, সেলিম আল দীনের ‘নিমঞ্জন’ বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। পাশাপাশি মমতাজ উদ্দীন আহমেদের ‘স্বাধীনতা আমার স্বাধীনতা’, ‘এবারের সংগ্রাম’, ‘স্বাধীনতার সংগ্রাম’ এবং ‘বর্ণচোর’ নাটকেও পাকিস্তানি শোষকদের অত্যাচার-নির্যাতনের কথা তুলে ধরা হয়েছে। তাঁর ‘কি চাহ শঙ্খচিল’ নাটকটিও পাকিস্তানি হায়েনাদের নারী নির্যাতন ও ধর্ষণের নিষ্ঠুর বর্বরতা নিয়ে রচিত। আবদুল্লাহ আল মামুনের ‘তোমরাই’, ‘দ্যাশের মানুষ’ ও ‘বিবিসাব’ মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক নাটক। অপর দিকে নাসিরউদ্দীন ইউসুফ বাচ্চু রচিত ‘একাত্তরের পালা’ একটি পূর্ণ মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক নাটক। তাঁর আরেকটি নাটকের কথা বলা যায়, তা হলো ‘ঘুম নেই’। তবে মুক্তিযুদ্ধ ও প্রতিবাদী নাটকের ক্ষেত্রে সম্প্রতি মান্নান হীরা রচিত ‘লাল জমিন’, মামুনুর রশিদের ‘টার্গেট প্লাটুন’ ও ‘ভঙ্গবঙ্গ’, বাবুল বিশ্বাসের ‘পোড়ামাটি’ নাট্যাঙ্গনে ব্যাপক আলোড়ন তুলতে সক্ষম হয়েছে।

মঞ্চনাটকের পাশাপাশি আমাদের দেশে টেলিভিশনের সম্প্রচার শুরু হয় ১৯৬৪ সালের ২৫ ডিসেম্বর। সম্প্রচারের কিছুদিনের মধ্যেই অন্যান্য বিষয়ের মধ্যে টিভি নাটক বেশি জনপ্রিয় হতে থাকে। ১৯৭১ সালে যখন মানুষ শোষণ ও বঞ্চনার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে, তখন টেলিভিশনে সম্প্রচারিত অনুষ্ঠানেও বিদ্রোহের আগুন ছড়িয়ে পড়ে। ১৯৭১ সালের ২১ মার্চ ঢাকা টেলিভিশন কেন্দ্র থেকে প্রচারিত হয় ‘আবার আসিব ফিরে’ নাটকটি। সৈয়দ মাহমুদ আহমেদের কাহিনিতে প্রয়াত আবদুল্লাহ আল মামুনের নাট্যরূপে প্রচারিত হয় এ নাটক।

১৬ ডিসেম্বর দেশ স্বাধীন হওয়ার পর বাংলাদেশ টেলিভিশনে প্রচার হওয়া প্রথম নাটকটি মুক্তিযুদ্ধের। ‘বাংলা আমার বাংলা’ নাটকটি লিখেছিলেন ড. ইনামুল হক, প্রযোজনা করেছিলেন আবদুল্লাহ আল মামুন। ১৯৭২ সালের মধ্যবর্তী সময়ের আলোচিত মুক্তিযুদ্ধের নাটক ‘জনতার কাছে আমি’। আমজাদ হোসেনের লেখা নাটকটি মুস্তাফিজুর রহমানের পরিচালনায় প্রচারিত হয়। এ সময়ের আরেকটি উল্লেখযোগ্য নাটক ‘এরা ছিল এধারে’। মোর্শেদ চৌধুরীর লেখা নাটকটি প্রযোজন করেছিলেন মোহাম্মদ বরকতউল্ল্যাহ। ১৯৭৩ সালে জেসমিন চৌধুরীর লেখা ‘প্রতিদ্বন্দ্বী’ নাটকটি প্রযোজনা করেন আবদুল্লাহ ইউসুফ ইসাম। আশির দশকের কাছাকাছি সময়ে আরও কিছু চেতনাসমৃদ্ধ মুক্তিযুদ্ধের নাটক বিটিভিতে প্রচারিত হয়। এর মধ্যে জিয়া আনসারীর ‘কোনো এক কুলসুম’, আতিকুল হক চৌধুরীর ‘কম্পাস’, রাবেয়া খাতুনের ‘বাগানের নাম মালানীছড়া, জোবেদ খানের ‘একটি ফুলের স্বপ্ন’ এবং রাজিয়া মজিদের ‘জ্যোৎস্নার শূন্য মাঠ’ বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।

আশির দশকেই হাবিবুল হাসানের রচনায় ও আবদুল্লাহ আল মামুনের প্রযোজনায় ‘আমার দ্যাশের লাগি’ নাটকটি দর্শককে মুগ্ধ করেছে। এ ছাড়া মমতাজ উদ্দীন আহমেদের লেখা মোস্তফা কামাল সৈয়দের প্রযোজনার ‘এই সেই কণ্ঠস্বর’ নাটকটি দর্শকপ্রিয়তা লাভ করে। সে সময়ের আলোচিত মুক্তিযুদ্ধের টিভি নাটকের মধ্যে আবদুল্লাহ আল মামুনের ‘আয়নায় বন্ধুর মুখ’ ও ‘একটি যুদ্ধ অন্যটি মেয়ে’, আসাদুজ্জামান নূরের ‘এ মোর অহংকার’, রাহাত খানের ‘সংঘর্ষ’, আল মনসুরের ‘শেকল বাঁধা নাও’ ও ‘নয়ন সমুখে তুমি নাই’, আতিকুল হক চৌধুরীর ‘যদিও দূরের পথ’ ও ‘স্বর্ণতোড়ন’, মামুনুর রশীদের ‘খোলা দুয়ার’ ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।

খণ্ড নাটকের পর আশির দশকের শেষের দিকে মুক্তিযুদ্ধের কাহিনী ও চেতনা নিয়ে ধারাবাহিক নাটক নির্মাণ শুরু হয়। সাইফুল বারীর লেখায় জিয়া আনসারীর প্রযোজনায় ‘জোনাকী জ্বলে’ এবং আমজাদ হোসেনের লেখায় ফখরুল আবেদীনের প্রযোজনায় ‘জন্মভূমি’ নামে মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক ধারাবাহিক নাটক বিটিভিতে প্রচারিত হয়।

বিটিভির পর দেশে বেসরকারি টিভি চ্যানেলের যাত্রা শুরু হয়। নব্বইয়ের দশকে বিটিভিতে প্রচারিত মুক্তিযুদ্ধের নাটকই সবিশেষ উল্লেখযোগ্য। এর মধ্যে হাবিবুল হাসানের ‘মেঘের ছায়ার নিচে’, আখতার ফেরদৌস রানার ‘সেই এক গায়েন’, মোস্তফা কামালের ‘পোড়া মাটির গন্ধ’, বুলবন ওসমানের ‘পুষ্পের পবিত্রতা’, নাসির আহমেদের ‘কোনো এক বুলা গল্প’, মুহম্মদ রওশন আলীর ‘নীল নকশা’ জনপ্রিয়তা লাভ করেছিল। এ ছাড়া বিটিভিতে প্যাকেজের আওতায় ফেরদৌস হাসানের ‘ঠিকানা’ এবং রেজানুর রহমানের ‘পতাকা’র নাম বিশেষভাবে উল্লেখ করতে হয়।

তারিক আনাম খানের ‘জেরা’, আবুল হায়াতের মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক টেলিফিল্ম ‘পিতা’ দর্শকের কাছে প্রশংসিত হয়। সাইদুর রহমান জুয়েলের পরিচালনায় ‘কোন সীমানায় মুক্তি’ নামের একটি মুক্তিযুদ্ধের ধারাবাহিক নাটক প্রচার করে। মামুনুর রহমানের নাটক ‘অচেনা বন্দর’ আলোচিত হয়। আলোচিত নাটকের মধ্যে ‘একটি আত্মহত্যা’ ও ‘তুফান আলীর ভূত’ অন্যতম।

স্বাধীনতার ৫০ বছরে বেশ কিছু মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক চলচ্চিত্র আমরা পাই। ১৯৭৬ সালে মুক্তি পায় মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক চলচ্চিত্র ‘মেঘের অনেক রং’। চলচ্চিত্রটি পরিচালনা করেছেন হারুনর রশীদ। রত্না কথাচিত্রের ব্যানারে এটি প্রযোজনা করেন আনোয়ার আশরাফ ও শাজীদা শামীম। ১৯৭৭ সালে ‘বসুন্ধরা’ চলচ্চিত্রটি শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র হিসেবে নির্বাচিত হয়। ঔপন্যাসিক আলাউদ্দিন আল আজাদের উপন্যাস ‘তেইশ নম্বর তৈলচিত্র’ অবলম্বনে চলচ্চিত্রটি পরিচালনা করেন প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার সুভাষ দত্ত। বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ কল্যাণ ট্রাস্ট প্রযোজনা করে ছবিটি। পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রের পাশাপাশি ‘স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র’ হিসেবে ‘আমরা তোমাদের ভুলব না’ আলোচনায় আসে। ‘শঙ্খনীল কারাগার’ নির্মাণ করেন নন্দিত কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদ। তার এক বছর পর হুমায়ূন আহমেদ নির্মাণ করেন ‘আগুনের পরশমণি’। তারেক মাসুদ ও ক্যাথরিন মাসুদ পরিচালনা করেন মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক বাংলা প্রামাণ্যচিত্র ‘মুক্তির গান’। সেলিনা হোসেনের উপন্যাস ‘হাঙর নদী গ্রেনেড’ অবলম্বনে নির্মিত হয় ‘হাঙর নদী গ্রেনেড’ চলচ্চিত্রটি। ছবিটি পরিচালনা করেন চাষী নজরুল ইসলাম। ‘বীর সৈনিক’ ছবিটি রচনা ও পরিচালনা করেছেন দেলোয়ার জাহান ঝন্টু। ‘জয়যাত্রা’ ছবিটি আমজাদ হোসেনের কাহিনি নিয়ে সংলাপ, চিত্রনাট্য ও পরিচালনা করেন তৌকীর আহমেদ। ছবিটি প্রযোজনা ও পরিবেশনা করে ইমপ্রেস টেলিফিল্ম। ‘গেরিলা’ ছবিটি নাসির উদ্দীন ইউসুফ পরিচালিত। সব্যসাচী লেখক সৈয়দ শামসুল হকের ‘নিষিদ্ধ লোবান’ উপন্যাস অবলম্বনে নির্মাণ করা হয়েছে চলচ্চিত্রটি। এর চিত্রনাট্য করেছেন যৌথভাবে নাসির উদ্দীন ইউসুফ ও এবাদুর রহমান। মাসুদ পথিক পরিচালিত ‘নেকাব্বরের মহাপ্রয়াণ’ কবি নির্মলেন্দু গুণের ‘নেকাব্বরের মহাপ্রয়াণ’ কবিতা অবলম্বনে নির্মিত। সিনেমাটির চিত্রনাট্যও লিখেছেন মাসুদ পথিক। সংলাপ লিখেছেন রাজিব আহসান ও মাসুদ পথিক। সরকারি অনুদানপ্রাপ্ত চলচ্চিত্রটি প্রযোজনা ও পরিবেশনা করেছে ব্রাত্য চলচ্চিত্র। ‘অনিল বাগচীর একদিন’ পরিচালনা করেছেন মোরশেদুল ইসলাম। প্রযোজনা করেছে বেঙ্গল ক্রিয়েশন্স। মোরশেদুল ইসলাম এর আগে খেলাঘর (২০০৬) এবং আমার বন্ধু রাশেদ (২০১১) নামে দুটি মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন। রিয়াজুল রিজু পরিচালিত ও প্রযোজিত ‘বাপজানের বায়স্কোপ’ সিনেমাটি কারুকাজ ফিল্মসের ব্যানারে নির্মিত। কাহিনি লিখেছেন মাসুম রেজা। চিত্রনাট্য লিখেছেন মাসুম রেজা ও রিয়াজুল রিজু। ‘মায়া: দ্য লস্ট মাদার’ চলচ্চিত্রটির কাহিনি, চিত্রনাট্য ও পরিচালনা করেছেন মাসুদ পথিক। চলচ্চিত্রটি বাংলাদেশের প্রখ্যাত চিত্রশিল্পী শাহাবুদ্দিন আহমেদের চিত্রকর্ম ‘নারী’ এবং বাংলাদেশের কবি কামাল চৌধুরীর ‘যুদ্ধশিশু’ কবিতা অবলম্বনে নির্মিত হয়েছে। এ চলচ্চিত্রে বাংলাদেশের প্রত্যন্ত গ্রামের একজন সংগ্রামী বীরাঙ্গনার গল্প চিত্রিত হয়েছে। এটা বীরাঙ্গনা ও যুদ্ধশিশুদের নিয়ে নির্মিত প্রথম পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র।

সবশেষে বলা যায়, এখানে উল্লেখিত সৃষ্টিকর্মা ছাড়াও মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক সাহিত্য ও সংস্কৃতির তালিকা অনেক দীর্ঘ। দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে কবি, সাহিত্যিক ও সংস্কৃতিকর্মীরা তাদের ভালোবাসার স্বাক্ষর রাখছেন। পৃথিবীর বুকে বাংলাদেশ যত দিন থাকবে; মুক্তিযুদ্ধের চেতনা তত দিন শিল্প-সাহিত্য-সংস্কতিতে জাগ্রত থাকবে। প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে এ চেতনা প্রবহমান থাকবে।

Link copied!