বাঙালি হিন্দু সম্প্রদায়ের অন্যতম উত্সব জামাইষষ্ঠী। ৫ জুন রোববার পালিত হচ্ছে এই উৎসবটি। জামাইষষ্ঠী সাধারণত মেয়ের জামাইকে আদর-আপ্যায়নের মধ্যেই কেটে যায়। অন্যদিকে মেয়ের জামাইও শ্বশুর পক্ষের সদস্যদের জন্য উপহারের আয়োজন করেন। এভাবেই দেওয়া-নেওয়ার মধ্যেই কেটে যায় জামাইষষ্ঠীর বিশেষ আয়োজন।
জামাই আপ্যায়নে পঞ্চব্যাঞ্জন রান্না হয়। শাশুড়ি নিজ হাতে মেয়ের জামাই আদরে এই খাবারের আয়োজন করেন। যেখানে মধুমাসের ফলের সঙ্গে থাকে বাহারি রান্না। এবারের জামাইষষ্ঠীর আয়োজনে কী খাবার রাখছেন? অবশ্যই জামাইয়ের পছন্দের খাবার থাকছে এই তালিকায়। চলুন মেয়ের জামাইয়ের মত জয়ে জামাইষষ্ঠীর আয়োজনে যে খাবারগুলো রাখা যায় সেই দিকে নজর দিয়ে আসি।

বাসন্তি পোলাও
পোলাও চাল ভালো করে ধুয়ে নিন। ২০ মিনিট পানি ঝরিয়ে নিন। চালের সঙ্গে ঘি, হলুদ, আধ চা-চামচ লবণ, গরম মশলার গুঁড়ো ভালো করে মিশিয়ে ম্যারিনেট করুন। ঘণ্টাখানেক অপেক্ষা করুন। এবার একটা কড়াইয়ে ঘি দিন। এতে কাজু বাদাম ও কিশমিশ দিয়ে ভেজে নিন। সোনালি রং হলে নামিয়ে নিন। এবার সেই ঘিয়ে তেজপাতা আর শুকনো গরম মশলা ফোড়ন দিন। এরপর চাল দিয়ে ভাজুন। বাদাম, কিশমিশ, চিনি আর পানি দিয়ে আঁচ কমিয়ে দিন। ১৫ মিনিট দমে রাখুন। পানি শুকিয়ে এলেই তৈরি হয়ে যাবে বাসন্তি পোলাও।

কাতলা মাছের কালিয়া
প্রথমে কাতলা মাছ, লবণ, হলুদ মাখিয়ে শর্ষের তেলে ভেজে তুলে রাখুন। আলু লালচে করে ভেজে নিন। তেলে ঘি মিশিয়ে এতে জিরে, দারুচিনি, লবঙ্গ, এলাচি, তেজপাতা ফোড়ন দিন। হালকা সুগন্ধি বের হলে আদাবাটা, রসুনবাটা ও টমেটো পেস্ট দিয়ে ভাজুন। এবার হলুদ, মরিচ, ধনিয়া গুড়ো সামান্য পানিতে মিশিয়ে এতে দিয়ে দিন। পেঁয়াজ, আদা, রসুনের কাঁচা গন্ধ চলে যাবে। এবার গুঁড়ামসলা ও স্বাদমতো লবণ দিয়ে কষিয়ে নিন। মসলা থেকে তেল ছাড়লেই ভাজা আলু দিয়ে আরও পাঁচ মিনিট রান্না করুন। আলু সেদ্ধ হয়ে ঝোল ঘন হয়ে এলে অল্প চিনি ও ভেজে রাখা মাছ দিয়ে দিন। মাঝারি আঁচে ফুটিয়ে নিন। এবার গরম মসলাগুঁড়া, ধনেপাতাকুচি এবং অল্প ঘি ছড়িয়ে দিয়ে নামিয়ে নিন।

মুরগির মাংস ঝোল
মাংস ধুয়ে পানি ঝরিয়ে নিন। চুলায় হাঁড়ি বসিয়ে গোটা গরম মসলার ফোড়ন দিন। এবার আদাবাটা, রসুনবাটা জিরাবাটা ও হলুদগুঁড়া আধা চা–চামচ, মরিচগুঁড়া আধা চা–চামচ গুঁড়ামসলা পানি দিয়ে গুলে কড়াইয়ে দিয়ে দিন। মসলা কষিয়ে মাংস দিন। এরপর মাংস ভালো করে কষান। কষানো হলে তা মাংস ডুবিয়ে পানি দিন। ঝোল মাংসের সমান হয়ে এলে নামিয়ে নিন।

কষা খাসির মাংস
খাসির মাংস ভালো করে ধুয়ে নিন। আলু মাঝখানে কেটে নিন। এবার তেল গরম করে এতে জিরা ও এক চিমটি হলুদগুঁড়া দিয়ে আলু ভেজে নিন। আরেকটি পাত্রে তেল হালকা গরম করুন। এতে আদা ও রসুন বাটা দিন। কয়েক মিনিট পর গুঁড়ামসলা, মাংসের মসলা, মরিচগুঁড়া, হলুদগুঁড়া দিয়ে নাড়ুন। মসলা তেল ছেড়ে দিলে মাংস দিয়ে ভালো করে নাড়াচাড়া করে নিন। টমেটো কুচি ও আলু দিয়ে দিন। এবার দুই কাপ গরম পানি দিয়ে মাংস সেদ্ধ করুন। সেদ্ধ হলে মাংসে গরম মসলা গুঁড়া ও ধনেপাতাকুচি দিয়ে নামিয়ে নিন।

রুই মাছের মুড়িঘন্ট
মুগডাল অল্প আঁচে সোনালি করে ভেজে নিন। এরপর এটি ধুয়ে রাখুন। মাছে লবণ ও লেবুর রস মাখিয়ে ১০ মিনিট রেখে দিন।এরপর আবারও ভালোভাবে ধুয়ে নিন। আঁশটে গন্ধ চলে যাবে। এবার লবণ ও হলুদ মাখিয়ে সোনালি করে ভাজুন। অন্যদিকে কড়াইতে তেল গরম করে নিন। তেজপাতা ও গরমমসলার ফোড়ন দিয়ে। এবার এতে মরিচ, হলুদ, আদাবাটা, রসুনবাটা, ধনিয়া গুঁড়ো, লবণ দিয়ে দিন। এবার ডাল দিয়ে কিছুক্ষণ নেড়ে নিন। এক কাপ পরিমাণ পানি দিয়ে ডাল সেদ্ধ করুন। ১০ মিনিট পর ঢাকনা তুলে একটু নেড়ে রুই মাছের মাথা দিয়ে দিন। হালকা হাতে নেড়ে একটু কষিয়ে নিন। দেড় কাপ পানি ও কাঁচা মরিচ দিয়ে ঢেকে দিন। ১০ মিনিট পর ভাজা জিরার গুঁড়া দিয়ে একটু নেড়ে নামিয়ে নিন। তৈরি হয়ে যাবে মুড়িঘন্ট।

আমের লাড্ডু
প্রথমে আম ধুয়ে খোসা ছাড়িয়ে ছোটো ছোটো টুকরো করে নিন। ব্লেন্ডারে আমের টুকরো ভালোভাবে পেস্ট করুন। এবার এতে জ্বাল দেওয়া দুধ নারকেল কোরা আর চিনি দিয়ে দিন। ব্লেন্ড করুন। এবার এই মিশ্রণটি জ্বাল দিন। খুব ঘন করে জ্বাল দিতে হবে। মিশ্রণটি আঠার মতো ঘন হয়ে এলে গ্যাস বন্ধ করে দিন। এবার ঠাণ্ডা হলে মিশ্রণটি থেকে অল্প অল্প করে নিয়ে ছোটো ছোটো লাড্ডুর বানিয়ে নিন। এর উপর কাজুবাদাম, এলাচ গুঁড়ো ছড়িয়ে দিলেই হয়ে যাবে আমের লাড্ডু।