নিউইয়র্ক সিটির রাজনীতিতে জোহারান মামদানির উত্থান যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে তুলনা টানা শুরু হয়ে গেছে। এর কারণ শুধু তাঁদের বিপরীতমুখী আদর্শের জন্য নয়, বরং মামদানি নিজেই তাঁর প্রচারকে ট্রাম্পের ধারার রাজনীতির সম্পূর্ণ বিপরীত হিসেবে উপস্থাপন করেছেন।
মামদানি ঘোষণা করেছেন, ‘আমি ডোনাল্ড ট্রাম্পের সবচেয়ে বড় দুঃস্বপ্ন—একজন প্রগতিশীল মুসলিম অভিবাসী, যে সত্যিকারের বিশ্বাস থেকে লড়ে।’ এই বক্তব্যে স্পষ্ট যে, মামদানির প্রার্থিতা ট্রাম্পের রাজনীতির প্রতিক্রিয়াস্বরূপ—যা গত কয়েক বছরে জাতীয় ও নগর রাজনীতিকে গভীরভাবে প্রভাবিত করেছে।
এই তুলনাটা কেবল কথার তুলনার মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। মামদানির জনপ্রিয় হয়ে ওঠা তৃণমূল-ভিত্তিক প্রচারাভিযান প্রচলিত ধারাকে ভেঙে দিয়েছে। ট্রাম্পও এভাবে প্রচলিত ধারাকে ভেঙেছিলেন। তবে মামদানির বার্তা ও সমর্থক জোট ট্রাম্পের থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন।
নিউইয়র্ক সিটির সবচেয়ে কনিষ্ঠ এবং প্রথম মুসলিম মেয়র হওয়ার দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে থাকা জোহারান মামদানি শুধু তাঁর রাজনৈতিক উত্থানের জন্যই নয়, বরং তাঁর স্বল্প আর্থিক অবস্থা এবং ব্যতিক্রমধর্মী পারিবারিক পটভূমির কারণেও জাতীয় পর্যায়ে দৃষ্টি কেড়েছেন।
কে এই মামদানি
জোহরান কোয়ামে মামদানি একজন ডেমোক্র্যাটিক সোশালিস্ট। তিনি উগান্ডার বিখ্যাত একাডেমিক মাহমুদ মামদানি ও ভারতীয় চলচ্চিত্র নির্মাতা মীরা নায়ারের ছেলে। তার জন্ম উগান্ডার কাম্পালায়, তবে সাত বছর বয়সে নিউইয়র্কে চলে আসেন।
পড়াশোনা করেছেন আফ্রিকানা স্টাডিজে। রাজনীতিতে আসার আগে ছিলেন একটি হাউজিং সংগঠনের পরামর্শক, যেখানে তিনি গরিব পরিবারদের উচ্ছেদ ঠেকাতে সহায়তা করতেন।
৩৩ বছর বয়সি মামদানি বর্তমানে নিউ ইয়র্ক স্টেট অ্যাসেম্বলিতে অ্যাসেম্বলি ডিস্ট্রিক্ট ৩৬-এর তিন মেয়াদের প্রতিনিধি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন
চলতি বছর তিনি বিয়ে করেন সিরীয় শিল্পী রামা দুওয়াজিকে, যার কাজ দ্য নিউইয়র্কার, ওয়াশিংটন পোস্ট ও ভাইস-এর মতো মাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে।
জোহারান মামদানির সম্পদ
ফোর্বস এবং সরকারি তথ্য অনুযায়ী, ৩৩ বছর বয়সী মামদানির মোট সম্পদের পরিমাণ আনুমানিক ২ লাখ থেকে ৩ লাখ ডলারের মধ্যে। তাঁর এ সম্পদ ডোনাল্ড ট্রাম্পসহ অনেক মার্কিন রাজনীতিকের বিপুল সম্পদের তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে কম।
মামদানির প্রধান আয়ের উৎস হলো নিউইয়র্ক স্টেট অ্যাসেম্বলির সদস্য হিসেবে পাওয়া বাৎসরিক ১ লাখ ৪২ হাজার ডলারের বেতন। এর পাশাপাশি তিনি অতীতে ‘ইয়াং কার্ডামন’ নাম নিয়ে র্যাপ সংগীত করতেন, সেখান থেকে বছরে প্রায় ১ হাজার ২৬৭ ডলারের রয়্যালটি পান। মামদানি উগান্ডার জিনজা শহরে চার একর জমির মালিক, যার মূল্য প্রায় দেড় লাখ থেকে আড়াই লাখ ডলারের মধ্যে। তবে তার উল্লেখযোগ্য কোনো ব্যবসায়িক মালিকানা বা বিনিয়োগ নেই।
মামদানি জন্মগ্রহণ করেন উগান্ডায়। তার বাবা প্রখ্যাত শিক্ষাবিদ মাহমুদ মামদানি—হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক। মা মীরা নায়ার, একজন খ্যাতনামা ভারতীয়-মার্কিন চলচ্চিত্র নির্মাতা। প্রায় ২৫ বছর আগে যুক্তরাষ্ট্রে আসার পর তিনি ২০১৮ সালে মার্কিন নাগরিকত্ব লাভ করেন এবং রাজনীতিতে যুক্ত হয়ে কুইন্স এলাকা থেকে নিউইয়র্ক স্টেট অ্যাসেম্বলিতে নির্বাচিত হন।
নিউইয়র্ক সিটির মেয়র হওয়ার লক্ষ্যে তার প্রচারাভিযান পরিচালিত হচ্ছে তৃণমূল পর্যায়ের অনুদানের ভিত্তিতে। এ পর্যন্ত তিনি ৭০ লাখ ডলারের বেশি সংগ্রহ করেছেন ১৬ হাজারের বেশি ব্যক্তিগত দাতার কাছ থেকে, যাঁদের অধিকাংশই দিয়েছেন ছোট অঙ্কের অনুদান—যা কর্মজীবী, অভিবাসী ও প্রগতিশীল জনগণের মধ্যে তাঁর জনপ্রিয়তা তুলে ধরে।