আরব দেশগুলো আকাশপথ অবরোধ দিলে কী করবে ইসরায়েল


সংবাদ প্রকাশ ডেস্ক
প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২০, ২০২৫, ১০:৩৩ এএম
আরব দেশগুলো আকাশপথ অবরোধ দিলে কী করবে ইসরায়েল
ছবি : সংগৃহীত

আরব দেশগুলো যদি সমন্বিতভাবে ইসরায়েলের জন্য আকাশপথ অবরোধ করে, তবে তার অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও নিরাপত্তাগত প্রভাব কী হতে পারে, সে বিষয়ে এক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে সংযুক্ত আরব আমিরাতের মালিকানাধীন একটি গবেষণাপ্রতিষ্ঠান।

বুধবার আল হাবতুর রিসার্চ সেন্টার এ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। এতে বলা হয়েছে, ৯ সেপ্টেম্বর কাতারের রাজধানী দোহায় ইসরায়েলের হামলাই এমন সমন্বিত পদক্ষেপ নেওয়ার প্রেরণা বা অনুঘটক হতে পারে।

ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাসের নেতাদের লক্ষ্য করে চালানো ওই হামলায় ছয়জন নিহত হন। তাঁদের মধ্যে একজন ছিলেন কাতারের নিরাপত্তা কর্মকর্তা। তবে হামাসের কোনো শীর্ষ নেতা নিহত হননি।

গত সোমবার কাতারের রাজধানীতে জরুরি বৈঠকে বসে ৫৭ সদস্যের ইসলামি সহযোগিতা সংস্থা (ওআইসি) ও আরব লীগ। বৈঠকে ইসরায়েলের হামলার জবাবে কী পদক্ষেপ নেওয়া যায়, তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে।

আল হাবতুর রিসার্চ সেন্টারের বিশ্লেষণে বলা হয়, ইসরায়েলের কর্মকাণ্ডের জন্য দেশটির বিরুদ্ধে আকাশপথে অবরোধ আরোপ করা হলে তেল আবিবের অর্থনীতির নানা খাতে ভয়াবহ ক্ষতি হবে।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, এর ফলে ইসরায়েলের মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) ৪ দশমিক ৮ থেকে ৫ দশমিক ৭ শতাংশ পর্যন্ত কমে যেতে পারে। এতে দেশটি মন্দার মুখে পড়বে।

গবেষণাকেন্দ্রটির বিশ্লেষণ অনুযায়ী, আরব ও মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশগুলোর সমন্বিত আকাশপথ অবরোধে নতুন আঞ্চলিক নিরাপত্তাকাঠামো তৈরি হবে। এতে যুক্তরাষ্ট্র একটি কূটনৈতিক সংকটে পড়বে। দেশটিকে ইসরায়েলকে বাঁচানো আর আরব দেশগুলোর সঙ্গে অংশীদারত্ব—দুটির একটি বেছে নিতে হবে।
ওআইসির বড় বড় সদস্য যেমন তুরস্ক, পাকিস্তান ও ইন্দোনেশিয়া যদি এ অবরোধে যোগ দেয়, তবে ইসরায়েল এশিয়া ও আফ্রিকার প্রবৃদ্ধিশীল বাজারগুলোর সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ হারাবে। এতে পূর্ব ও দক্ষিণমুখী ফ্লাইট বন্ধ হয়ে যাবে।

প্রতিবেদন বলছে, বিকল্প রুটে যেতে হলে প্রতিটি ফ্লাইটের সময় চার থেকে ছয় ঘণ্টা বাড়বে। এতে প্রতি ফ্লাইটে ৩০ হাজার থেকে ৬০ হাজার ডলার পর্যন্ত খরচ বাড়তে পারে। ইসরায়েলের বিমান সংস্থা এল-আলের আয়ের ৬০ থেকে ৭৫ শতাংশ পর্যন্ত কমে যেতে পারে। আর এটা ‘রক্ষণশীল অনুমান’।

আকাশপথ অবরোধে ইসরায়েলের পর্যটনশিল্প ক্ষতিগ্রস্ত হবে। হীরার মতো উচ্চ মূল্যের ও চিকিৎসা সরঞ্জামের মতো সময়-সংবেদনশীল পণ্যের রপ্তানিও ব্যাহত হবে।

আরব লীগ ও ইসলামি সহযোগিতা সংস্থা (ওআইসি) আয়োজিত জরুরি শীর্ষ সম্মেলনে প্রায় ৬০ দেশের নেতা ও কর্মকর্তারা অংশ নেন। কাতারের রাজধানী দোহায়, ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এ সপ্তাহের শুরুতে বলেছেন, দেশটি এখন বিশ্বমঞ্চে ‘অন্তরিণ’ হয়ে পড়েছে এবং দেশটিকে ‘স্বনির্ভর অর্থনীতি’র দিকে যেতে হবে।

নেতানিয়াহু বলেন, ‘আমি মুক্তবাজারে বিশ্বাসী। কিন্তু আমরা এমন অবস্থায় যেতে পারি, যেখানে আমাদের অস্ত্রশিল্পের রপ্তানি বন্ধ হয়ে যাবে। তাই আমাদের এখানেই নতুন অস্ত্রশিল্প গড়ে তুলতে হবে—শুধু গবেষণা নয়, উৎপাদনের সক্ষমতাও তৈরি করতে হবে।’

আমিরাত ইসরায়েলের দোহায় হামলাকে বলেছে ‘বিশ্বাসঘাতকতাপূর্ণ আগ্রাসন’। বিশ্লেষকদের মতে, এটি ভবিষ্যতে তাদের কূটনৈতিক অবস্থান বদলের ইঙ্গিত হতে পারে।

Link copied!