নেপালের অন্তর্বর্তী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেওয়ার একদিন পার না হতেই সুশীলা কার্কির পদত্যাগের দাবি উঠল। রোববার (১৪ সেপ্টেম্বর) রাতে কাঠমান্ডুতে প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনের সামনে এই বিক্ষোভ হয়।
আর নতুন করে এই বিক্ষোভের নেতৃত্ব দিচ্ছেন সুদান গুরুং। সেই আন্দোলনের নেপথ্যের মূল নায়ক হিসেবে সামনে এসেছে এক অপ্রত্যাশিত নাম যিনি আগে ছিলেন একজন ডিজে, বর্তমানে ‘হামি নেপাল’ (আমরা নেপাল) নামের একটি সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা। তিনি ৩৬ বছর বয়সী সুধন গুরুং।
নেপালের ডিজিটাল নিউজপেপার সেতুপতির এক প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য জানা যায়।
সেতুপতি বলছে, মন্ত্রিসভা সম্প্রসারণের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ ও স্লোগান দেয় সুদান গুরুংয়ের নেতৃত্বাধীন একটি দল। বিক্ষোভকারীরা নিজেদের ‘জেন জি’ আন্দোলনের নেতা হিসেবে দাবি করে বলেন, তাদের সঙ্গে কোনো আলোচনা না করেই মন্ত্রিসভা সম্প্রসারণ করা হয়েছে।
বিক্ষোভের সময় গুরুং ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘যদি আমরা আবার রাস্তায় নামি, তবে কেউ আমাদের থামাতে পারবে না। আমরা তাদের টেনে বের করে আনব। আইনজীবী ওম প্রকাশ আরিয়াল ভেতর থেকে নিজেকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বানাচ্ছেন!’
গুরুংয়ের সঙ্গে গত সপ্তাহের বিক্ষোভে আহত বা নিহতদের স্বজনরাও যোগ দেন।
এদিকে প্রধানমন্ত্রী কার্কি আইনজীবী আরিয়ালকে স্বরাষ্ট্র ও আইন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এর আগে তিনি রামেশ্বর খানালকে অর্থমন্ত্রী এবং কুলমান ঘিসিংকে জ্বালানিমন্ত্রী হিসেবে বেছে নেন।
লোকমান সিং কার্কিকে দুর্নীতি দমন কমিশনের প্রধান হিসেবে নিয়োগের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে একটি রিট পিটিশন দাখিল করার পর আরিয়ালের জনপ্রিয়তা বাড়ে। তিনি বিভিন্ন জনস্বার্থমূলক বিষয়ে আইনি লড়াই করে আসছেন এবং কাঠমান্ডু মেট্রোপলিটন সিটির আইনি উপদেষ্টা হিসেবেও কাজ করছেন। কার্কিকে অন্তর্বর্তী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগের সময় প্রেসিডেন্ট রাম চন্দ্র পৌদেলের সঙ্গে আলোচনায়ও তিনি ছিলেন এবং তার শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব নেওয়া খানাল সাবেক অর্থ সচিব। উচ্চপর্যায়ের অর্থনৈতিক সংস্কার সুপারিশ কমিশনের চেয়ারম্যান হিসেবে তিনি সম্প্রতি কে পি অলি সরকারের কাছে ৪৪৭ পৃষ্ঠার একটি প্রতিবেদন জমা দেন। ওই প্রতিবেদনে অর্থনীতির দুর্বলতা, সমস্যা সৃষ্টির কারণ, অবিলম্বে করণীয় এবং দীর্ঘমেয়াদী পদক্ষেপ সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট পরামর্শ দেওয়া হয়।
জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের নেতৃত্ব দেওয়া ঘিসিং নেপাল বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক। নেপালে লোডশেডিং দূর করায় তার ব্যবস্থাপনা দক্ষতার জন্য তিনি জনসাধারণের মধ্যে জনপ্রিয়। কয়েক মাস আগে অলি সরকার তাঁকে পদ থেকে সরিয়ে দিয়েছিল এবং তাঁর জায়গায় এসেছিলেন হিটেন্দ্র দেব শাক্য।
সূত্রের খবর, প্রধানমন্ত্রী কার্কি প্রথমে ফোন করে তিনজনের সঙ্গে কথা বলেন এবং পরে তাঁদের চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের জন্য তাঁর কার্যালয়ে ডেকে পাঠান। এর আগে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী সবিতা ভান্ডারিকে অ্যাটর্নি জেনারেল হিসেবে নিয়োগ দেন। রোববার সকালে প্রধানমন্ত্রী তার মন্ত্রিসভা গঠনের আলোচনা শুরু করেন। মন্ত্রিসভার সদস্য সংখ্যা প্রধানমন্ত্রীসহ সর্বোচ্চ ১১ জন হবে। এর মানে, যারা ইতিমধ্যে মন্ত্রী হিসেবে নিযুক্ত হয়েছেন, তাদের অন্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বও দেওয়া হতে পারে।
অলি ‘জেন জি’ আন্দোলনের চাপে পদত্যাগ করার পর কার্কিকে অন্তর্বর্তী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। তিনি নেপালের ইতিহাসে প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী। তিনি শপথ নেওয়ার পরপরই হাউস অফ রিপ্রেজেন্টেটিভস ভেঙে দেওয়া হয় এবং আগামী ৫ মার্চের জন্য নতুন নির্বাচনের ঘোষণা করা হয়।