জাকসু নির্বাচনে ২৫ পদের ২০টিতেই জিতল ছাত্রশিবির


সংবাদ প্রকাশ ডেস্ক
প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১৩, ২০২৫, ০৮:৫১ পিএম
জাকসু নির্বাচনে ২৫ পদের ২০টিতেই জিতল ছাত্রশিবির

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যাল কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ (জাকসু) নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠ পদে বিজয়ী হয়েছেন ইসলামী ছাত্রশিবির সমর্থিত ‘সমন্বিত শিক্ষার্থী জোট’ প্যানেলের প্রার্থীরা। তাঁরা জাকসুর ২৫টি পদের মধ্যে সাধারণ সম্পাদক (জিএস), দুটি যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকসহ (এজিএস) ২০টি পদে জয় পেয়েছেন।

এ ছাড়া স্বতন্ত্র প্রার্থীদের প্যানেল থেকে সহসভাপতি (ভিপি) পদ এবং দুটি করে পদে বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ (বাগছাস) সমর্থিত প্যানেলের প্রার্থী ও স্বতন্ত্র প্রার্থীরা বিজয়ী হয়েছেন।

৩৩ বছর পর ১১ সেপ্টেম্বর জাকসু নির্বাচনের ভোটগ্রহণ করা হয়। এরপর গতকাল শুক্রবার ও আজ শনিবার দিনভর গণনার পর বিকেলে নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণা করা হয়।

নির্বাচন কমিশনের দেওয়া ফলাফল অনুযায়ী, ভিপি পদে তিন হাজার ৩৩৪টি ভোট পেয়ে জয়ী হয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থীদের প্যানেল ‘স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী সম্মিলনের’ প্রার্থী আব্দুর রশিদ (জিতু)। তিনি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক। আন্দোলনের আগে ছাত্রলীগের রাজনীতিতে জড়িত ছিলেন। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছাত্রশিবির সমর্থিত প্যানেলের আরিফ উল্লাহ পেয়েছেন ২ হাজার ৩৯২ ভোট।

এ ছাড়া ভিপি পদে বাগছাস সমর্থিত প্যানেলের আরিফুজ্জামান উজ্জ্বল পেয়েছেন ১ হাজার ২১১ ভোট। ভোটের দিন বিকেল চারটার দিকে নানা অনিয়মের অভিযোগ তুলে নির্বাচন বর্জন করা জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল সমর্থিত প্যানেলের শেখ সাদী হাসান পেয়েছেন ৬৪৮ ভোট।

জিএস-এজিএসসহ ২০ পদে শিবির জয়ী
জিএস পদে তিন হাজার ৯৩০ ভোট পেয়ে জয় পেয়েছেন ছাত্রশিবির সমর্থিত প্যানেলের মো. মাজহারুল ইসলাম। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী শিক্ষার্থী ঐক্য ফোরামের আবু তৌহিদ মো. সিয়াম পেয়েছেন ১ হাজার ২৩৮ ভোট। স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী সম্মিলনের মো. শাকিল আলী পেয়েছেন ৯৫৯ ভোট। নির্বাচন বর্জন করা ছাত্রদলের তানজিলা হোসাইল বৈশাখী পেয়েছেন ৯৪১ ভোট।

এজিএস (পুরুষ) পদে বিজয়ী হয়েছেন ছাত্রশিবির সমর্থিত প্যানেলের ফেরদৌস আল হাসান। তিনি ২ হাজার ৩৫৮ ভোট পেয়ে জয়ী হয়েছেন। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী শিক্ষার্থী ঐক্য ফোরামের জিয়া উদ্দিন পেয়েছেন ২ হাজার ১৪ ভোট। স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী সম্মিলনের তৌহিদুল ইসলাম ভূঁঞা পেয়েছেন ৭১৫ ভোট। ছাত্রদলের মো. সাজ্জাদউল ইসলাম পেয়েছেন ৭০১ ভোট। এজিএস (নারী) পদে ৩ হাজার ৪০২ ভোট পেয়ে জয় পেয়েছেন ছাত্রশিবির সমর্থিত প্যানেলের আয়েশা সিদ্দিকা মেঘলা। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী শিক্ষার্থী ঐক্য ফোরামের মালিহা নামলাহ পেয়েছেন ১ হাজার ৮৩৬ ভোট। ছাত্রদলের আঞ্জুমান আরা ইকরা পেয়েছেন ৭৬৪ ভোট।

শীর্ষ তিন পদের বাইরে ছাত্রশিবিরের প্যানেল থেকে শিক্ষা ও গবেষণা সম্পাদক পদে আবু উবায়দা উসামা (২ হাজার ৪২৮ ভোট), পরিবেশ ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক পদে সাফায়েত মীর (২ হাজার ৮১১ ভোট), সাহিত্য ও প্রকাশনা সম্পাদক পদে জাহিদুল ইসলাম (১ হাজার ৯০৭ ভোট), সহসাংস্কৃতিক সম্পাদক পদে মোহাম্মদ রায়হান উদ্দিন (১ হাজার ৯৮৬ ভোট), নাট্য সম্পাদক পদে রুহুল ইসলাম (১ হাজার ৯২৯ ভোট), সহক্রীড়া সম্পাদক পদে মো. মাহাদী হাসান (২ হাজার ১০৫ ভোট), সহক্রীড়া (নারী) সম্পাদক পদে ফারহানা আক্তার (১ হাজার ৯৭৬ ভোট) জয়ী হয়েছেন।

এ ছাড়া তথ্যপ্রযুক্তি ও গ্রন্থাগার সম্পাদক পদে মো. রাশেদুল ইসলাম (২ হাজার ৪৩৬ ভোট), সহসমাজসেবা ও মানবসম্পদ উন্নয়ন বিষয়ক সম্পাদক (পুরুষ) পদে তৌহিদ হাসান (২ হাজার ৪৪২ ভোট), সহসমাজসেবা ও মানবসম্পদ উন্নয়নবিষয়ক সম্পাদক (নারী) পদে নিগার সুলতানা (২ হাজার ৯৬৬ ভোট), স্বাস্থ্য ও খাদ্য নিরাপত্তা সম্পাদক পদে হুসনী মোবারক (২ হাজার ৬৫৩ ভোট), পরিবহন ও যোগাযোগ সম্পাদক পদে তানভীর রহমান (২ হাজার ৫৫৯ ভোট), কার্যকরী সদস্য (নারী) পদে নুসরাত জাহান ইমা (৩ হাজার ১৪ ভোট), ফাবলিহা জাহান নাজিয়া (২ হাজার ৪৭৫ ভোট), নাবিলা বিনতে হারুন (২ হাজার ৭৫০ ভোট) এবং কার্যকরী সদস্য (পুরুষ) পদে হাফেজ তারিকুল ইসলাম (১ হাজার ৭৪৬ ভোট), মো. আবু তালহা (১ হাজার ৮৫৪ ভোট) জয়ী হয়েছেন।

বিজয়ী অন্যান্য যারা
ছাত্রশিবিরের প্যানেলের বাইরে সমাজসেবা ও মানবসম্পদ উন্নয়ন বিষয়ক সম্পাদক পদে বাগছাস সমর্থিত শিক্ষার্থী ঐক্য ফোরামের প্রার্থী আহসান লাবিব (১ হাজার ৬৯০ ভোট), ক্রীড়া সম্পাদক পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. মাহামুদুল হাসান (৫ হাজার ৭৭৮ ভোট), সাংস্কৃতিক সম্পাদক পদে মুহিবুল্লাহ শেখ (২ হাজার ১৮ ভোট) এবং কার্যকরী সদস্য (পুরুষ) মোহাম্মদ আলী চিশতী (২ হাজার ৪১৪ ভোট) পেয়ে জয় পেয়েছেন।

জাকসু নির্বাচন কমিশনের সদস্যসচিব অধ্যাপক এ কে এম রাশিদুল আলম প্রথম আলোকে বলেন, নির্বাচনে প্রায় ৭০ ভাগ ভোট পড়েছে। শিক্ষার্থীদের রায়ের প্রতি সবাইকে সম্মান দেখাতে হবে। শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সঙ্গে নির্বাচিত প্রতিনিধিরা সম্মিলিতভাবে কাজ করবেন, সেই প্রত্যাশা থাকবে। নির্বাচন করার ক্ষেত্রে অভিজ্ঞতার কিছুটা ঘাটতি থাকলেও শেষ পর্যন্ত তাঁরা নির্বাচনটি সম্পন্ন করতে পেরেছেন। এটি তাঁদের জন্য গৌরবের ব্যাপার।

Link copied!