• ঢাকা
  • শনিবার, ১১ মে, ২০২৪, ২৮ বৈশাখ ১৪৩১, ৩ জ্বিলকদ ১৪৪৫

ওয়াগনারের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি পুতিনের


সংবাদ প্রকাশ ডেস্ক
প্রকাশিত: জুন ২৪, ২০২৩, ০৩:০৩ পিএম
ওয়াগনারের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি পুতিনের

ইউক্রেনে যুদ্ধরত রুশ ভাড়াটে বাহিনী ওয়াগনারের বিদ্রোহকে ‘বিশ্বাসঘাতকতা’ উল্লেখ করে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। শনিবার মস্কোয় জাতির উদ্দেশে ভাষণে ওয়াগনারের বিদ্রোহকে ‘পেছন থেকে ছুরিকাঘাতের’ সঙ্গে তুলনা করেছেন তিনি।

শনিবার (২৪ জুন) ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি এ খবর জানিয়েছে। সংক্ষিপ্ত ভাষণে রুশ প্রেসিডেন্ট আরও বলেছেন, “রাশিয়াকে রক্ষায় এই সংকট সমাধানে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে আদেশ দিয়েছি। কারও উচ্চাকাঙ্ক্ষা রাষ্ট্রদ্রোহের মতো অপরাধের দিকে যাচ্ছে।” পরিস্থিতি যেকোনো মূল্যে নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছেন তিনি। দেশের অভ্যন্তরে ‘বিদেশি শত্রুদের’ এজেন্ডা বাস্তবায়ন করার চেষ্টা করছে, রাশিয়ার স্বার্থে তাদের সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বানও জানিয়েছেন তিনি।

এক রাতের মধ্যে দৃশ্যপট বদলে দিয়েছে ওয়ানগার। পুরো আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম ও বিশ্লেষকদের চোখ এখন রাশিয়ার দিকে।

শুক্রবার ওয়াগনারের শীর্ষ কমান্ডার ইয়েভজেনি প্রিগোঝিন রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের বিরুদ্ধে বিদ্রোহের ঘোষণা দিয়ে মস্কোর নেতৃত্বকে উচ্ছেদ করতে ওয়াগনার গ্রুপের ২৫ হাজার যোদ্ধা নিয়ে ইউক্রেন থেকে মস্কো অভিমুখে পদযাত্রা শুরু করেন।

প্রিগোঝিন তার দলের সৈন্যদের উপর এক মারাত্মক মিসাইল হামলার অভিযোগ করেন রাশিয়ার সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে। প্রিগোঝিন এই অভিযোগের পক্ষে কোনো প্রমাণ দেখাননি তবে যারা এই হামলা করেছে তাদের শাস্তি দেওয়ার শপথ নেন তিনি। তবে রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়, এই মিসাইল হামলার কথা অস্বীকার করে এবং প্রিগোঝিনকে সবরকম ‘অবৈধ কার্যক্রম’ বন্ধের আহবান জানায়।

এদিকে রাশিয়ার দক্ষিণাঞ্চলের সীমান্তবর্তী রোস্তভ-অন-ডন শহরের সামরিক সদর দপ্তর ও বিমান ঘাঁটি নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার দাবি করেছে বাহিনীটি। নিজের অফিসিয়াল টেলিগ্রাম চ্যানেলে শনিবার ভিডিও বার্তায় ওয়াগনার প্রধান বলেছেন, “আমরা সকাল ৭টা ৩০ মিনিটে রোস্তভের সামরিক স্থাপনা নিয়ন্ত্রণে নিয়েছি। এতে বিমানঘাঁটিও রয়েছে। আমরা (সেনা) সদর দপ্তরের ভিতরে আছি। একটি এরোড্রোমসহ রোস্তভের সামরিক স্থাপনাগুলো নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।”

তিনি আরও জানিয়েছেন, তার সেনারা এই শহরটি অবরুদ্ধ করবে এবং রাজধানী মস্কোর দিকে এগিয়ে যাবে। যতক্ষণ না প্রতিরক্ষামন্ত্রী সের্গেই সোইগু এবং জেনারেল ভেলেরি গেরাসিমোভ তাদের সঙ্গে দেখা করতে না আসছেন।

তিনি বলেছেন, “আমরা এখানে এসেছি। আমরা চিফ অব জেনারেল স্টাফ এবং সোইগুর সঙ্গে দেখা করতে চাই। যতক্ষণ তারা না আসছে, আমরা এখানে থাকব, আমরা রোস্তোভ অবরুদ্ধ করব এবং মস্কোর দিকে এগিয়ে যাব।”

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশিত অপর এক ভিডিওতে দেখা যায়, ওয়াগনার প্রধান প্রিগোঝিন দু’জন জেনারেলের সঙ্গে বসে আছেন। যার মধ্যে একজন হলেন সেনাবাহিনীর লেফটেনেন্ট জেনারেল ভ্লাদিমির আলেক্সেসেভ। এই জেনারেল এর আগে একটি ভিডিও প্রকাশ করেছিলেন; সেখানে তিনি প্রিগোঝিনকে অস্ত্র ফেলে দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছিলেন।

লিপেতস্কের গভর্নর জানিয়েছেন, এমফোর হাইওয়ে লিপেতস্ক ও ভরোনেঝ অঞ্চলের সীমান্তে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এমফোর মস্কোর সঙ্গে রাশিয়ার দক্ষিণাঞ্চলের সংযোগ ঘটায় এবং একই সঙ্গে রোস্তভ অঞ্চল ও এর প্রধান শহর রোস্তফ-অন-ডনেও যাবার রাস্তা এটি।

রোস্তভ শহরের গভর্নর নাগরিকদের ঘরে থাকার আহ্বান জানিয়েছেন। মস্কোর মেয়র জানিয়েছেন রাজধানীতে সন্ত্রাস-দমন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে নিরাপত্তা নিশ্চিতে।

অপরদিকে রাশিয়ার ফেডারেল সিকিউরিটি সার্ভিস (এফএসবি) শুক্রবার প্রিগোঝিনের বিরুদ্ধে একটি ফৌজদারি তদন্ত শুরু করেছে। তাকে সশস্ত্র বিদ্রোহের অভিযোগে অভিযুক্ত করেছে।

রাশিয়ার প্রধান কৌঁসুলির মতে এই ধরনের অপরাধের শাস্তি ২০ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড।

রাজনৈতিক বিশ্লেষক তাতিয়ানা স্ট্যানোভায়া দ্য অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসকে বলেছেন, “প্রিগোঝিন এবং ওয়াগনারের অবসান আসন্ন। এখন একমাত্র সম্ভাবনা হল পরম বিলুপ্তি। সংঘাত সম্পূর্ণ নিরর্থক বলে মনে হচ্ছে।”

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন আরও বলেন, “আমি সেই সব সেনা সদস্যের প্রতিও আবেদন জানাচ্ছি, যাদেরকে সশস্ত্র বিদ্রোহের মতো গুরুতর অপরাধে সংশ্লিষ্ট হতে বাধ্য করা বা উসকানি দেওয়া হচ্ছে। আজ আমি রাশিয়ার সব অঞ্চলের কমান্ডারদের সঙ্গে আমি যোগাযোগ করেছি। আপনারা সবাই জানেন, এমন একটি যুদ্ধে আমরা জড়িয়ে পড়েছি, যার ফলাফলের ওপর নির্ভর করছে রাশিয়ার জনগণের ভাগ্য। তাই এ যুদ্ধে রাশিয়ার সব বাহিনী ও শক্তির মধ্যে ঐক্য, সংহতি এবং দায়িত্বপরায়ণতা থাকা খুবই জরুরি।”

পুতিন বলেন, “আমি বিশ্বাস করি, আমাদের জন্য যা পবিত্র ও গভীর আবেগের তা আমরা রক্ষা করবই। দেশকে রক্ষা করতে আমরা যদি ঐক্যবদ্ধ হই, সেক্ষেত্রে যে কোনো সংকট আমরা কাটিয়ে উঠতে পারব।”

আন্তর্জাতিক বিভাগের আরো খবর

Link copied!