• ঢাকা
  • শনিবার, ১৪ ডিসেম্বর, ২০২৪, ২৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১২ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ফিলিস্তিনি উদ্ধারকারী দলের বর্ণনায় ‘মৃত্যুর শহর দেরনা’


সংবাদ প্রকাশ ডেস্ক
প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২২, ২০২৩, ০২:০৬ পিএম
ফিলিস্তিনি উদ্ধারকারী দলের বর্ণনায় ‘মৃত্যুর শহর দেরনা’
ছবি: সংগৃহীত

রাইদ কাজমাউজ ও তার ফিলিস্তিনি উদ্ধারকারী দল যখন গত সপ্তাহে দেরনায় পৌঁছেছিলেন, তখন তিনি লিবিয়ার প্লাবিত ভূমধ্যসাগরীয় শহরে বিপর্যয়ের তীব্রতা দেখে হতবাক হয়েছিলেন।

৪১ বছর বয়সী লেফটেন্যান্ট কর্নেল রাইদ প্যালেস্টাইন ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (পিআইসিএ) উদ্ধারকারী দলের প্রধান। দলটির ৩৫ সদস্য বৃহস্পতিবার (২১ সেপ্টেম্বর) দেরনায় তাদের সপ্তাহব্যাপী অভিযান শেষ করেছেন। তারা অধিকৃত পশ্চিম তীরে ফিরে যাওয়ার পথে রয়েছেন এখন।

দলটির প্রধান রাইদ বন্যার ধ্বংসযজ্ঞ বর্ণনায় বলেন, “ধ্বংসের মাত্রা কল্পনার বাইরে।” ভবনগুলো ধ্বসে পড়ে সমুদ্রে ভেসে গেছে বলেও জানান তিনি। 

এর আগে রাইদ ২০২২ সালে বন্যার পরে পাকিস্তানে ও ফেব্রুয়ারিতে ভূমিকম্পের পরে তুরস্কে উদ্ধার অভিযান পরিচালনা করেছিলেন। কিন্তু তিনি ও তার দল - যার মধ্যে ২২ জন অনুসন্ধান ও উদ্ধার বিশেষজ্ঞ অন্তর্ভুক্ত ছিল - দেরনায় যে ধাক্কা অনুভূব করেছেন তা আদের যে কোনো সময়ের চেয়ে তীব্র।

রাইদ বলেন, “এখানকার লোকেরা আমাদের বলেছিল দেরনা লিবিয়ার সবচেয়ে সুন্দর শহর। আজ আপনি এর মধ্য দিয়ে হেঁটে কাদা, পলি ও ভেঙ্গে যাওয়া ঘর ছাড়া আর কিছুই দেখতে পাবেন না। লাশের গন্ধ সর্বত্র, সমুদ্র থেকে মৃত্যুর গন্ধ, যেখানে হাজার হাজার পচা লাশ ভেসে গেছে।”

দুর্যোগ-পীড়িত লিবিয়ানদের সাহায্য করার জন্য ফিলিস্তিনি মিশন দেরনায় যাওয়া অনেকের জন্য বিস্ময়কর ছিল। আর প্রথমদিকে সাড়া দেওয়া এই দলটিকে অন্যদের তুলনায় অনেক বেশি লড়াই করতে হয়েছিল। যার মধ্যে রয়েছে অধিকৃত পশ্চিম তীর থেকে বের হওয়া এবং জর্ডানের একটি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে যেতে সক্ষম হওয়া। 

সরাসরি ফ্লাইটের অভাবের কারণে রাইদদের যাত্রা বাধাগ্রস্ত হয়েছিল। তাদের সামগ্রিক ভ্রমণের সময় ৩০ ঘন্টারও বেশি ছিল। সব মিলিয়ে দলটির লিবিয়া পৌঁছাতে কয়েকদিন দেরি হয়ে যায়।

রাইদ বলেন, “যদি আমাদের একটি বিমানবন্দর বা বন্দর থাকত, তবে আমরা কয়েক ঘন্টার মধ্যে সেখানে যেতে পারতাম।” যেখানে অন্যান্য আন্তর্জাতিক দলগুলো তাদের সমস্ত সরঞ্জাম ও সরবরাহ নিয়ে সরাসরি তাদের বিমানবন্দরে যেতে সক্ষম হয়েছিল।

রাইদ জানান, তবুও তারা অধ্যবসায়ী ছিলেন। আন্তর্জাতিক মানবিক নীতিতে বিশ্বাসের কারণে এবং লিঙ্গ, ধর্ম বা জাতি নির্বিশেষে সবাইকে প্রয়োজনে মানবিক সহায়তা প্রদানের প্রয়োজনীয়তার কারণে। তিনি বলেন, “যখন আমরা কারো কাছ থেকে সাহায্যের জন্য ডাক শুনি, তখন আমরা ডাকে সাড়া দেই, ইসরায়েলি দখলদারিত্বের অধীনে থাকার দুর্দশা সত্ত্বেও আমরা সাড়া দেই।”

রাইদ ও তার দল দেরনায় পৌঁছানোর পর, সকাল ৭টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত কাজ করার জন্য দুটি শিফট ঠিক করে। রাইদ বলেন, “আমরা রাতভর কাজ করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু রাতে অনুসন্ধান ও উদ্ধার অভিযান সম্পূর্ণভাবে বন্ধ হয়ে যায়।”

তিনি জীবিত ও মৃত মানুষের সন্ধান করার মর্মান্তিক দৃশ্য বর্ণনা করে বলেন, ফেব্রুয়ারির ভূমিকম্পের পরে তুরস্কেও এমন ধ্বংসের দৃশ্য তিনি কখনও দেখেননি।

রাইদ বলেন, “আমি একটি সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে যাওয়া শহর দেখেছি। আমি ভবনের ছাদে গাড়ি, মাটিতে মৃতদেহ এবং সমুদ্র থেকে মৃতদেহ আসতে দেখেছি।” 

কিছু মৃতদেহ এত বেশি সময় পানিতে ছিল যে তাদের শনাক্ত করা কঠিন ছিল বলে জানান এই উদ্ধারকর্মী।

তিনি বলেন, “আমরা আমাদের সাধ্যের সবটাই করেছি। আশা করি, আমরা লিবিয়ার জনগণের ওপর এই দুর্যোগের প্রভাব কমানোর অংশ ছিলাম।”

পিআইসিএ ২২ টনেরও বেশি খাদ্য ও মানবিক সহায়তা ক্রয় করেছে এবং লিবিয়ান কর্তৃপক্ষের কাছে তা হস্তান্তর করেছে। দলটি এখন পর্যন্ত আফ্রিকা, এশিয়া, ক্যারিবিয়ান ও ল্যাটিন আমেরিকা জুড়ে ৫৬ টি দেশে কাজ করেছে।

দেরনা ও অন্যান্য পূর্ব লিবিয়ার শহরগুলোয় ১০ সেপ্টেম্বর ঝড় ড্যানিয়েল আঘাত হানে। ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে দেরনার দুটি বাঁধ ভেঙে পড়ে। যার ফলে আনুমানিক ৩০ মিলিয়ন কিউবিক মিটার (৮ বিলিয়ন গ্যালন) পানি দেরনায় প্রবেশ করে, শহরটিকে সম্পূর্ণ ধ্বংস করে দেয়। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ৩ হাজার ৯৫৮ জনের মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত করেছে। জাতিসংঘ জানিয়েছে এখনো ৯ হাজারের মতো মানুষের খোঁজ পাওয়া যায়নি। এ ছাড়া শহরের অসংখ্য মানুষ বাস্তচ্যুত হয়েছেন।

আল-জাজিরা

Link copied!